দেশে ফিরতে শর্ত জুড়ে দিল রোহিঙ্গারা

শরণার্থী শিবির ব্যবস্থাপনায় মার্কিন প্রতিনিধি দলের সন্তোষ, বাংলাদেশকে ধন্যবাদ

উখিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৩ জুলাই, ২০২৩ at ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। তবে তাদের মৌলিক অধিকার, মর্যাদা ও জবাবদিহির নিশ্চয়তার সহযোগিতার শর্ত জুড়ে দিয়েছে সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে। গতকাল বুধবার রোহিঙ্গাদের পক্ষে ‘আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’র (এআরএসপিএইচআর) চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জুবায়ের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গ্রহণ করেছে সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দল।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল গতকাল বুধবার টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এসময় প্রতিনিধি দল শরণার্থী শিবিরের ব্যবস্থাপনায় সন্তাষ প্রকাশ করে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের আদিবাসী জাতি। নিজ দেশীয় সরকার দ্বারা নির্যাতিত হয়ে ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে আমরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের পূর্বপুরুষ এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী যৌথভাবে মিয়ানমারের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি। ১৯৪৭ সালের ১ অক্টোবর লন্ডনে গাওয়া বা লেখা নুঅ্যাটলি চুক্তির আর্টিকেল নম্বর৩ অনুসারে, আমরা রাষ্ট্রহীন নই। অথচ মিয়ানমার সরকার এখনো অস্বীকার করছে যে, আমরা মিয়ানমারের জাতি নই। তারা সংসদের রেজিস্ট্রার থেকে আমাদের জাতীয়তা বাতিল করেছে। মিয়ানমার সরকার ও কিছু বৌদ্ধ রাজনীতিবিদ একতরফা খেলা খেলছে। বিশ্ব নীরব থেকে আমাদের কষ্টের সেই খেলা দেখছে গভীর উদ্বেগের বলে চিঠিতে জানানো হয়। রোহিঙ্গাদের আশা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে থাকবে এবং রোহিঙ্গাদের অস্তিত্ব রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তা, মর্যাদা ও জবাবদিহি, মানবাধিকার নিয়ে তারা তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের সামরিক পরিষদের পাশাপাশি ন্যাশনাল ইউনিয়ন গভর্মেন্টএর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য অনুরোধ জানান রোহিঙ্গারা।

এআরএসপিএইচআর চেয়ারম্যান জুবায়ের জানান, ক্যাম্পে সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একটা চিঠি দিয়েছি। চিঠিটি আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।

বিডিনিউজ জানিয়েছে, কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরার নেতৃত্বাধীন ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল। বুধবার টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান।

সন্ধ্যায় কক্সবাজারে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বৈঠক শেষে মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ২০১৭ সাল থেকে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক, দেশিবিদেশি যে সব সংস্থা কাজ করছে, তার অনেকগুলোই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তা পায়। বিশেষ করে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা যে খাদ্য সরবরাহ করে তাতে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের জন্য বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টি প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, এ পর্যন্ত দুইবার রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানো হয়েছে। প্রথমে ১২ ডলার থেকে ১০ ডলার করা হয় এরপর গত ১ জুন থেকে তা আরো কমিয়ে ৮ ডলার করা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর প্রতিনিধি দল সাহায্য ঘোষণার আশ্বাস দিয়েছে।

উজমা জেয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি দেখেছেন বলে জানান মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন সেন্টার, পুষ্টি কেন্দ্র, খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিদর্শন করে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে, ক্যাম্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনা দেখে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এসবের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদও জ্ঞাপন করেছেন দলটির সদস্যরা। দিনভর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন, বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরে যায়।

উজরা জেয়া ছাড়াও মার্কিন এ প্রতিনিধি দলটিতে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, দক্ষিণ এশিয়ায় শরণার্থী বিষয়ক সমন্বয়কারী ম্যাককেঞ্জি রোয়েসহ ১০ জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে কুবি শিক্ষার্থীর দুই রেকর্ড
পরবর্তী নিবন্ধমুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন দাবি