বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, অধিকার আদায়ের আন্দোলন, সংগ্রাম এবং তাঁর অসামান্য কর্মজীবন শিক্ষার্থীসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের’ যাত্রা শুরু হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের উদ্যোগে গতকাল শোকের মাসের প্রথম দিনে এ ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয়। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
গতকাল দুপুর ১২টায় গোপালগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন রেল জাদুঘরের প্রদর্শনীর শুভ সূচনা করেন। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে বিকাল ৫টায় উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের জন্য আলাদা আলাদা দুটি-একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ কোচে অভিন্ন সাজে সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দুটি। এখানে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী ঘটনা প্রবাহ নতুন প্রজন্মের জন্য তুলে ধরা হয়েছে। সাধারণ দর্শনার্থীরা টাচ স্ক্রিনে আঙ্গুল স্পর্শ করতেই ভেসে আসবে বঙ্গবন্ধুর ছবি, ভাষণ, জীবনাচারের বিভিন্ন বিষয়। শুধু বড় রেলওয়ে স্টেশন নয়, দেশের সবকটি রেলওয়ে স্টেশনে নির্ধারিত দিন ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি দাঁড়ানো থাকবে। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের জন্য এটি উন্মুক্ত রাখা হবে বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাদুঘরটি নির্মাণ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এটি বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর নির্মিত তথ্যবহুল ও মনোমুগ্ধকর ১২টি পৃথক চিত্র ও দুর্লভ আলোকচিত্রের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে।
কোচের একপাশের দেয়ালের ছয়টি ভাগে রাখা হয়েছে কিংবদন্তির প্রথম প্রহর, ধ্রুবতারার প্রথম কিরণ, নক্ষত্র হওয়ার পথে, বাংলার মাটি ও ভাষার বঙ্গবন্ধু, ধূমকেতু থেকে নক্ষত্র, মুক্তির স্বপ্নের সূচনা শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত। এখানে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে পর্যায়ক্রমে তার ছাত্রজীবন, রাজনীতিতে হাতেখড়ি এবং গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে উঠার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে রয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবর্ণনীয় নির্যাতন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের ইতিহাস।
আরেক পাশের দেয়ালে রয়েছে, দুর্বার পথচলা, নিপীড়িতদের কান্ডারি, এক নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন, মুক্তি, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার কথা, স্বপ্নগড়ার দিনগুলো, যে আলো নেভেনি আজও এমন শিরোনামে শিল্প প্রদর্শনী। এতে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ’৬৬ এর ঐতিহাসিক ছয় দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও জাতির গৌরবোজ্জ্বল একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জনের প্রধান নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদান দর্শকদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে। মোট ১৩টি পর্বে বঙ্গবন্ধুর জীবন আলেখ্য তুলে ধরা হয়েছে।
কোচের এক প্রান্তে স্থাপন করা হয়েছে ১৩টি এলইডি টেলিভিশন। দেখার সঙ্গে সঙ্গে যেন দর্শকরা ভালোভাবে শুনতে পারেন সেজন্য রাখা হয়েছে হেডফোনের ব্যবস্থা। এতে দেখানো হবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ও ঐতিহাসিক সাত মার্চের ভাষণ। এক সাথে ১৩ জন দর্শনার্থী বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে ঢুকতে পারবেন। ১৩ জন বের হলে অন্য ১৩ জন যেতে পারবেন।
পূর্বাঞ্চলের ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি ১ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ৯ নম্বর লাইনে থাকবে। এটি সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এরপর ৫ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি থাকবে ভাটিয়ারী রেল স্টেশনে। এভাবে পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি স্টেশনে ২ থেকে ৩ দিন করে অবস্থান করবে বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। একটি বগিতে বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর, আর একটি পাওয়ার কার এবং একটি রেস্ট রুম। যেখানে সিকিউরিটি, মেকানিক্যাল ও ইলেট্রিক্যাল বিভাগে লোকজন থাকবেন সার্বক্ষণিক।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূক্র জানায়, অত্যাধুনিক জাদুঘর দুটি দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে কোনো স্টেশনে ৫ দিন আবার কোনো স্টেশনে একদিন পর্যন্ত অবস্থান করবে।