শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ বাংলাদেশে শিশুস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে তুলে ধরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগের প্রাদুর্ভাব এখন ‘মহামারী’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশে প্রতিদিন প্রায় ৮ হাজার শিশুর জন্ম নেয়, তাদের মধ্যে অন্তত ২০০ শিশু হৃদরোগ নিয়ে জন্মাচ্ছে বলেও তারা তথ্য দিয়েছেন। অর্থাৎ বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৭৪ হাজার। রোববার ‘ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে’ উপলক্ষে শিশু হৃদরোগ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, বিশ্বজুড়ে নবজাতকের মৃত্যুর এক–চতুর্থাংশ হৃদরোগজনিত, আর বাংলাদেশেও নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি প্রায় ৩০ শতাংশ শিশুর মধ্যে হৃদরোগ শনাক্ত হয়। খবর বিডিনিউজের।
ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কিডস হার্ট ফাউন্ডেশন, চাইল্ড হার্ট ট্রাস্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হার্ট রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব এডাল্ট অ্যান্ড কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন হৃদরোগ সার্জন অধ্যাপক এস আর খান। সেখানে শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বক্তব্য রাখেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও কিডস হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক নূরুন্নাহার ফাতেমা। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক শিশু হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নিচ্ছে অর্থাৎ বছরে প্রায় ৭৪ হাজার। এই রোগটি ডেঙ্গু বা কোভিডের মতো একটি মহামারী। তবু জাতীয় স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে জন্মগত হৃদরোগ এখনও অন্তর্ভুক্ত হয়নি। শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ সঠিক সময়ে শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার জন্য অবকাঠামো এবং বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি নবজাতককে প্রাথমিক পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যাতে জটিলতা দেখা দেওয়ার আগে চিকিৎসা দেওয়া যায়।’ ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা বলেন, গত দুই দশকে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞরা এখন রোগীদের শনাক্ত করে ‘পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক’ বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠাচ্ছেন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত দুর্বলতা এখনো রয়ে গেছে।
২০১৩ সালের দিকে মাত্র ১২–১৬ জন কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞ এবং ৬–৮ জন কার্ডিয়াক সার্জন কাজ করতেন। বিশেষজ্ঞের সংখ্যা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাড়ানো না হলে শিশু হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারা কঠিন হবে।
ডা. এস আর খান বলেন, কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে শিশুদের বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ হতে পারে। এই ক্ষেত্রে মাত্র ২০ পয়সার ‘সিরিন ট্যাবলেট’ দিয়েই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব, অথচ একটি ‘হার্ট ভালভ’ পরিবর্তন করতে খরচ পড়তে পারে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
এই কারণেই আমরা বলি, প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর এবং সস্তা। শিশুদের ক্ষেত্রে একটি প্রধান ঝুঁকি হলো আত্মীয়–স্বজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বিবাহ, যেমন চাচাতো বা মামাতো ভাই–বোনদের মধ্যে। এছাড়া চিকিৎসা না হওয়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, গর্ভাবস্থায় কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি এবং ভাইরাল রোগও হৃদরোগের কারণ হতে পারে। তবে এসবের প্রতিকারও সম্ভব।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ সাফি মজুমদার, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আবদুল্লাহ শাহরিয়ার, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের অধ্যাপক শাহিদুল ইসলাম, বিএমইউর অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম, সিএমএইচের অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়া, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের রেজওয়ানা রিমা, পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট ডা. আবদুস সালাম।