সাকিব আল হাসানের টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ কিনা সে প্রশ্নের উত্তরটা বেশ কঠিন হয়ে গেছে। যদিও অনেকের মতে সাকিব তার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচটি ভারতের কানপুরেই খেলে ফেলেছেন। যদিও কানপুর টেস্টের আগের দিনই সাকিব জানিয়ে দিয়েছিলেন, মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলবেন তিনি। আর সে জন্য সাকিব বিসিবি সভাপতি সহ বোর্ড কর্তাদের সাথে কথাও বলেছিলেন। কিন্তু বিসিবি সভাপতি জানিয়েছিলেন সাকিবের সাথে সে বিষয়ে কোন কথা হয়নি তার। সাকিবের শেষ টেস্ট খেলার পথে সবচাইতে বড় বাধা হয়েছিল তার নিরাপত্তা। যেহেতু হাসিনা সরকারের পতনের পর সাকিবের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। আর সে মামলায় সাকিবকে গ্রেফতার করা হবে কিনা সে বিষয়ে চলছিল জোর আলোচনা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি জানিয়েছিলেন সাকিবের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের হাতে নেই। তার মানে এখানে বিসিবির কোন কিছু করার নেই। আবার সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন ক্রিকেটার সাকিবের নিরাপত্তা দেওয়াই আছে। কিন্তু রাজনীতবিদ সাকিবের নিরাপত্তা দেওয়াটা কঠিন। কারন বিক্ষুব্ধ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ না। তাই সাকিবকে পরিষ্কার করতে হবে তার রাজনৈতিক অবস্থান। এর ফলে সাকিবও যেন বুঝে গেছেন দেশে তার নিরাপত্তাটা নিশ্চিত নয়। তাই হয়তো তার শেষ টেস্ট ম্যাচটা দেশের মাটিতে খেলা হবেনা। আর সে কারণেই কিনা কানপুরে ভারতের বিপক্ষে টেস্টের পর একরকম ফেয়ারওয়েল নিয়ে ফেলেছেন সাকিব।
শুধু তাই নয় কানপুর টেস্ট শেষ করে আর অপেক্ষা করেননি সাকিব মোটেও। ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান। গত মঙ্গলবার বিকেলে কানপুর টেস্ট শেষ হওয়ার পর রাতেই দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে ভারত ছাড়েন সাকিব। এরপর সেখান থেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলতে যুক্তরাষ্ট্র রওয়ানা হবেন। জানা গেছে গতকালই যুক্তরাষ্ট্রে পৌছে গেছেন সাকিব। সেখান থেকে তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন কি না সে বিষয়ে কাউকে কিছু জানাননি সাকিব। তাই এখন তিনি দেশে ফিরবেন কিনা সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। কানপুর টেস্ট শুরুর আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেছিলেন ক্রিকেটের দুই ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়াতে চান তিনি। যার মধ্যে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের শেষ ম্যাচটি তিনি খেলে ফেলেছেন গত বিশ্বকাপে। আরেকটি ফরম্যাট হচ্ছে টেস্ট। এ মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকা দল বাংলাদেশ সফর করবে। যেখানে তারা দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে। যার প্রথমটি ঢাকার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। আর দ্বিতীয়টি চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। মিরপুর স্টেডিয়ামের ম্যাচটি সাকিব খেলতে চেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ হিসেবে। আর সে জন্য নিরাপদে দেশে আসা এবং নিরাপদে দেশ থেকে বের হওয়ার নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন। কিন্তু বিসিবি সভাপতি এবং সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টার কথায় যেন আশ্বস্ত হতে পারছে না সাকিব। তাই হয়তো কানপুরের টেস্ট ম্যাচটিকে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ধরে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলেন দেশের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।
একজন ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে মাঠ থেকেই ক্যারিয়ারকে বিদায় জানানোর। আর সেটা অবশ্যই নিজের দেশের মাঠে। সাকিবও তার ব্যতিক্রম ছিলেননা। কিন্তু অবস্থা যা দাড়িয়েছে তাতে দীর্ঘ ১৭ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষটা হয়তো আর করতে পারছেননা সাকিব নিজের মাঠে। তাই হয়তো হতাশা নিয়েই ফিরে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারীতে পাকিস্তানে বসতে যাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর। আর সে আসর খেলে ওয়ানডে ক্রিকেটটাকেও বিদায় জানাতে চেয়েছিলেন সাকিব। এখন বোধহয় সেটাও আর হবেনা সাকিবের। তবে দেশের মাটিতে বিদায় সংবর্ধনা না পেলেও কানপুর টেস্টের পর ভারতে সাকিবকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশি সাংবাদিকরা। তাকে একটি ব্যাট উপহার দিয়েছেন বিরাট কোহলি। সবমিলিয়ে অনেকে কানপুরেই সাকিবের শেষ দেখে ফেলেছেন।