দেশীয় শিল্পখাতে কর কমানো প্রশংসনীয়

ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৪ জুন, ২০২১ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

প্রস্তাবিত বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ঠিক গতানুগতিক নয়। আমি এটিকে একটু ব্যতিক্রমধর্মী বলবো। চলমান বৈশ্বিক মহামন্দা এবং কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাতে আগের তিন কোটি বেকারের সাথে নতুন করে আরো তিন কোটি বেকার যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ মোট ৬ কোটি মানুষ বর্তমানে বেকার। এমতাবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয় শিল্পখাতে কর কমানো ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, এটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। এতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যখাতেও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও তার সদ্ব্যবহারের সক্ষমতা স্বাস্থ্য খাতের নেই। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে সব মন্ত্রণালয় গড়ে যেখানে তাদের মোট বরাদ্দের ৪২ শতাংশ ব্যবহার করেছে, সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যবহার করেছে মাত্র ২১ শতাংশ। বাকি তিন মাসে ৭৯ শতাংশ বরাদ্দ ব্যয় করা অসম্ভব।আরেকটি বিষয় হচ্ছে, প্রকল্প নির্বাচনে নীতি নির্ধারকদের অদূরদর্শীতা। উদাহরণ স্বরূপ, চট্টগ্রামে স্বাধীনতা উত্তরকালে নতুন নতুন অন্তত ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সরকারি উদ্যোগে একটি হাসপাতালও এসময়ে স্থাপন করা হয়নি। অথচ এসময়ে চট্টগ্রামে অন্তত ২/১ টি সরকারি হাসপাতাল হওয়ার দরকার ছিল। এটি অবশ্যই সরকারি নীতি নির্ধারকদের দুর্বলতা। কৃষি খাতে ভর্তুকি এবং দেশীয় শিল্প খাতের বিকাশে ১২৭ রকম প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭টি অনুদান এবং ১২০টি স্বল্পসুদে ঋণ সহায়তা। এটা বাজেটের একটা ভালো দিক। তবে শুধু বরাদ্দ বাড়িয়ে দিলে হবে না, তা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এখন সময়টা মানুষের জীবন বাঁচানোর। মানুষের হাতে যে কোনভাবে নগদ টাকা তুলে দেয়া দরকার। গ্রামে গঞ্জে ও শহরের বিত্তহীন মানুষকে সহায়তা দেয়ার জন্যে রেশন কার্ড ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা দরকার। প্রতিবেশি দেশ ভারতে রেশন কার্ড ব্যাপকভাবে চালু আছে। আরেকটি ব্যাপার হলো- কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সবাইকে টিকা দেয়া খুব জরুরি। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের টিকা দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে। কিন্তু টিকা কোত্থেকে আসবে, নাকি এখানে উৎপাদন হবে তার কিছুই এখনও পরিষ্কার নয়। ফাইজারের টিকা যেহেতু মাইনাস ৭০ ডিগ্রিতে সংরক্ষণ করতে হয়, তাই এ টিকার চেয়ে আমাদের জন্য কার্যকর হচ্ছে অঙফোর্ড অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা। টাকা বরাদ্দ দিলে হবে না, বাজেট বাস্তবায়ন করাটাই কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। মাথা পিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলার। আমাদের টাকার অভাব নেই। অভাব দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন আর সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅতিমাত্রায় গতানুগতিক বাজেট
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের বড় ৪৩ প্রকল্পে সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ