দেশিয় শিল্পকে সুবিধা দেয়ায় অর্থনীতি আরো বেগবান হবে

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৪ জুন, ২০২১ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

আসন্ন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেছেন, বাজেটে কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো ও দেশিয় শিল্পকে সুবিধা প্রদান করায় অর্থনীতি আরো বেগবান হবে। এ বাজেট অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখবে।
গতকাল নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে বাজেট উত্থাপন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বাজেটে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং একই সাথে বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সময়োপযোগী। কৃষি খাতে ৪৮ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা এবং যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৫৯ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান অবশ্যই ইতিবাচক। তবে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সততা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যদিকে ব্যক্তিগত করদাতাদের ব্যবসায়িক টার্নওভার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে শূণ্য দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ, নন-পাবলিকলি কোম্পানির ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আয় না থাকলে সম্পদের উপর সারচার্জ পরিশোধের বিধান বাতিল করা হয়েছে এবং ন্যূনতম সারচার্জ বিলুপ্ত করা হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। তবে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করা হয়নি, আমরা এ সীমা বৃদ্ধি করার দাবি জানাচ্ছি।
চেম্বার সভাপতি বলেন, আমদানি পর্যায়ে সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামালের অগ্রিম কর ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ এবং সিমেন্ট এবং লৌহ জাতীয় পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৩ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ নির্ধারণ করায় নির্মাণ শিল্প এবং রপ্তানি উপকৃত হবে। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডিংয়ের লক্ষে মেগা শিল্প উৎপাদনে এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে ২০ ও ১০ বছরের কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সাধারণ ভবনের অবচয় ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ, কারখানা ভবনের অবচয় ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে যা ইতিবাচক। অন্যদিকে আইটি হার্ডওয়্যার উৎপাদনে ১০ বছরের কর অব্যাহতি, এসএমই খাত ও নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার করমুক্ত রাখা, বাংলাদেশে অটোমোবাইল, থ্রি হুইলার, ফোর হুইলার উৎপাদনে এবং হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিকে কর অব্যাহতি প্রদান দেশিয় শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে বলে আমরা মনে করি। দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদানে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানকে ১০ কর অব্যাহতি প্রদান শিল্পায়নে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের কাঁচামাল-উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে যা শিল্পায়নকে উৎসাহিত করবে। চট্টগ্রাম শাহ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর উন্নয়ন ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে এই বিমান বন্দরের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। তবে বে-টার্মিনাল নির্মাণে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করা এবং চলমান মেগা প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৮ লেনে উন্নীতকরণসহ দ্রুতগতির ট্রেন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ঢাকার ন্যায় চট্টগ্রামেও স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি। ভ্যাট ফাঁকি, ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণের পরিবর্তে সমপরিমাণ এবং বকেয়া ভ্যাটের সুদহার বার্ষিক ২৪ শতাংশের পরিবর্তে ১২ শতাংশ করা ভ্যাট দাতাদের উৎসাহিত করবে।
তিনি আরো বলেন, কৃষি খাতে সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি আমদানিতে শুন্য শুল্ক হার অব্যাহত রাখা এবং রেয়াতি শুল্ক হারে কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি সুবিধা সম্প্রসারণ, অন্যান্য নিত্য সামগ্রী আমদানিতে প্রযোজ্য শিল্প করহার স্থিতিশীল অবস্থা রাখা, কৃষি উপকরণ আমদানিতে শুল্ক হ্রাস এবং কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনে কর হ্রাস এই খাতের প্রসারে ভূমিকা রাখবে। ফল, শাক সবজি, দুগ্ধজাত পণ্য ও শিশু খাদ্য উৎপাদনে কর অব্যাহতি প্রশংসনীয়। বাজেটে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার বাইরে ২৫০ শয্যার সাধারণ হাসপাতাল বা ২০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য ১০ বছর কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে যা স্বাস্থ্য সেবা প্রসারে কাজ করবে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে সারা দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দের আবেদন জানাচ্ছি। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠি যাতে সরাসরি এ সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার জন বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এসব পদক্ষেপ পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠিকে জীবন ধারণে সহায়তা করবে। এছাড়া বিদেশি পণ্যের উপর নির্ভরতা হ্রাসে দেশিয়ভাবে গৃহস্থালী পণ্য যেমন: ব্লেন্ডার, জুসার, মিকচার, গ্রাইন্ডার, কেটলি, রাইচ কুকার, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন ইত্যাদি উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে যাতে দেশিয় উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবে। সড়কে নসিমন, লেগুনা ইত্যাদি দুর্ঘটনাপ্রবণ যানবাহন নিরুৎসাহিত করতে বিকল্প হিসেবে মাইক্রোবাস আমদানিতে শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। এছাড়া ডাম্পার/ট্রিপার সিকেডি আমদানিতে শুল্কহার হ্রাস এবং মোটর সাইকেল উৎপাদনকারী সংযোজনকারী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে সুবিধা প্রদান দেশিয় এসব শিল্প সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেশি ধনীদের বেশি কর দিতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধপ্রস্তাবিত বাজেট জনকল্যাণমুখী