টানা দুই মাস ধরে দেশের পণ্য রপ্তানি কমছে। গত আগস্টে রপ্তানি কমেছিল প্রায় ৩ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৬১। তারপরও চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গত রোববার পণ্য রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১ হাজার ২৩১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। গত মাসে ৩৬৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয়েছিল ৩৮০ কোটি ডলারের পণ্য। সেই হিসাবে গত মাসে রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত মাসে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা, প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি কমেছে। অন্যদিকে হিমায়িত খাদ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। সাধারণত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে তুলনামূলক কম পণ্য রপ্তানি হয়। গত এপ্রিল থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নিয়ে একধরনের অস্থিরতা ছিল। গত ৩১ জুলাই বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাল্টা শুল্ক এড়াতে জুলাই মাসে অনেক পণ্য জাহাজীকরণ হয়েছে। স্থগিত থাকা অনেক পণ্যও রপ্তানি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জুলাই মাসে অনেক রপ্তানি হয়েছে, যদিও শেষ পর্যন্ত ৭ আগস্ট পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কোন পণ্য কোন দেশে কী পরিমাণ রপ্তানি হয়, তার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ৪ হাজার ৮২৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে ৩১ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের জন্য শুল্ক ঘোষণা করেন। তাতে বাংলাদেশের শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমে হয় ২০ শতাংশ। প্রতিযোগী দেশের তুলনায় পাল্টা শুল্ক কাছাকাছি হওয়ায় দুশ্চিন্তামুক্ত হন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা। একই সঙ্গে চীনের পণ্যে ৩০ ও ভারতে মোট ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের অনেকেই বাড়তি ক্রয়াদেশ পেতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নেতৃবৃন্দ বলেন, পাল্টা শুল্ক চূড়ান্ত হওয়ার আলোচনা চলমান থাকায় গত কয়েক মাস ক্রয়াদেশ আসার হার ছিল কম। এ ছাড়া জুলাই–সেপ্টেম্বর সময়ে সাধারণত তৈরি পোশাক রপ্তানি কম হয়। ক্রয়াদেশ নিয়ে কারখানার সঙ্গে দর–কষাকষি করছে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। সামনের মাসগুলোয় রপ্তানি বাড়বে বলে তাঁদের প্রত্যাশা।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে কুমিরের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁত চড়া মূল্যে বিক্রি হয়। ফ্রান্স,চীন, জার্মানি, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে এগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিটি কুমিরের চামড়া ৫০০–৬০০ ডলার মূল্যে রপ্তানি করা হয়। এ খামার থেকে কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা হলেও কুমিরের মাংস, হাড় ও মাথা রপ্তানির অনুমতি নেই। একটি কুমিরের সবকিছু রপ্তানি করা গেলে আয় কয়েকগুণ বাড়বে।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তির পর পরাশক্তি হিসাবে চীনের উত্থানের পিছনে রয়েছে তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি। তারা আলপিন থেকে উড়োজাহাজ সবকিছু উৎপাদন ও রপ্তানি করে। এখনো তারা সর্বোচ্চ সক্ষমতা প্রয়োগ করে বিভিন্ন প্রচলিত ও অপ্রচলিত পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি অব্যাহত রেখেছে। ফলে ২০০৯ সাল থেকে তারা বিশ্বের বৃহত্তম পণ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং বিগত ১৬ বছর এই অবস্থান ধরে রেখেছে। ২০২৩ সালে চীনের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩.৫১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাই অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হলে বাংলাদেশকেও বিভিন্ন প্রচলিত ও অপ্রচলিত পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারকে সব ধরনের বিধিনিষেধ বিলুপ্তসহ রপ্তানি নীতিমালা সহজিকরণ করতে হবে। দেশজ পণ্যে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। আর এটি করতে হবে দ্রুত এবং এতে কোনোভাবেই সময়ক্ষেপণ করা যাবে না।