চট্টগ্রামে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। আক্রান্তের এই হার উপজেলার চেয়ে নগরীতে বেশি। ডেঙ্গু ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে নগরীর ২৩টি এলাকাকে চারটি জোনে ভাগ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এরমধ্যে সাতটি এলাকাকে অতিঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ২ জন। এরমধ্যে নগরীতে ১ হাজার ২৪৭ জন এবং উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫৫ জন। এছাড়া মোট ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি অক্টোবরে গতকাল পর্যন্ত ৪৯৭ আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ মাসে কারো মৃত্যু হয়নি।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে আরও ৪১ জন ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ২৪ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১২ জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন এবং নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরো ৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। দেরিতে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া এবং রোগীকে দেরিতে হাসপাতালে আনার কারণে অনেক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। জ্বরের প্রথম তিনদিনের মধ্যে ডেঙ্গুর (এনএসওয়ান) পরীক্ষা করাতে হবে। এরপর ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে বাসায় পূর্ণ বিশ্রামে থেকে তরল জাতীয় খাবার (জুস, ডাবের পানি, স্যালাইন, স্যুপ) বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। জ্বরের জন্য শুধু সাধারণ প্যারাসিটামল খাবে। কোনো ধরনের এন্টিবায়েটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নাই।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। ডেঙ্গুতে তীব্র জ্বর দেখা দিতে পারে। এই জ্বর টানা চার পাঁচদিন পর কমে যাবে। তবে জ্বর কমার পরের সময়টা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময়টাতে অতিরিক্ত দুর্বলতা, বমি, পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লালচে দাগ বা র্যাশ, প্রস্রাব পায়খানায় বা অন্য কোনোভাবে রক্ত দেখা গেলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। তবে অনেকে রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) পরীক্ষায় প্লাটিলেট কমে গেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্লাটিলেট কমলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্লাটিলেট কমলে রক্তক্ষরণ হবে এটি ঠিক নয়। এছাড়া ডেঙ্গুর চিকিৎসায় প্লাটিলেট কমে গেলে তাকে প্লাটিলেট দিতে হবে এটিও গাইডলাইনে নেই। চিকিৎসাটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলেও রক্তক্ষরণ হয় না। আবার অনেকের প্লাটিলেট কাউন্ট বেশি থাকলেও রক্তক্ষরণ হয়।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ডেঙ্গুর অবস্থা বিবেচনায় চট্টগ্রাম নগরীকে বিভিন্ন জোনে ভাগ করেছি। ডেঙ্গু মোকাবেলায় সকল নাগরিককে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে বাড়ির ছাদে, ফুলের টবে, গাড়ির টায়ার, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত বস্তুতে যাতে পানি না জমে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। তবে ডেঙ্গু হয়ে গেলে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নাই। আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙগুলোতে পর্যাপ্ত স্যালাইন মজুদ রয়েছে। এছাড়া কারো জ্বর হলে আমাদের এখানে এসে স্বল্পমূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষাও করাতে পারবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডেঙ্গুর প্রস্তুতি হিসেবে আমরা হাসপাতালে ৫৪ শয্যার বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করেছি। এছাড়া রোগীর চাপ যদি আরো বাড়ে, সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের তিনটি মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু কর্নারের ব্যবস্থা রেখেছি। তবে আমরা আশা করছি, বৃষ্টির পরিমাণ কমলে এই অক্টোবরের শেষের দিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে।
উল্লেখ্য, গত বছর নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ভর্তি হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৭ জন। এরমধ্যে মারা যায় ১০৭ জন। এছাড়া ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মারা যায় ৪১ জনের, ২০২১ সালে আক্রান্ত হয় ২৭১ জন এবং মারা যায় ৫ রোগী।