দেড় কোটি টাকা করে ২৬১টি গাড়ি কিনবে সরকার

এসব গাড়ি পাবেন ডিসি, ইউএনওরা নিয়মিত বরাদ্দের অতিরিক্ত ৩২০ কোটি টাকা প্রয়োজন

| বুধবার , ১১ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দেড় কোটি টাকা করে ২৬১টি গাড়ি কিনতে যাচ্ছে সরকার। এসব গাড়ি পাবেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। এর মধ্যে ডিসিদের জন্য ৬১টি এবং ইউএনওদের জন্য ২০০টি এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভিহিক্যাল) টাইপের গাড়ি কেনা হবে, যা দেশে জিপ গাড়ি নামেই বেশি পরিচিত। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যাচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে আজ বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন চাওয়া হবে। এই ধরনের বড় গাড়ি কিনতে নিয়মিত বরাদ্দের অতিরিক্ত ৩২০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর), ২০০৮এর বিধি ৭৬()-এ উল্লেখিত মূল্যসীমার বেশি দামে কেনার নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হবে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে। খবর বাংলানিউজের। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ মাঠপর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহণ সেবা নিশ্চিত করতে এসব গাড়ির প্রয়োজন হবে। এজন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণ করে ডিসি ও ইউএনওদের জন্য ২৬১টি গাড়ি কিনবে সরকার। এর মধ্যে ডিসিদের জন্য গাড়ি কেনা হবে ৬১টি। প্রতিটি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। এতে ৬১টি গাড়ি কিনতে মোট ব্যয় হবে ৮৮ কোটি ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা। আর ইউএনওদের ব্যবহারের জন্য কেনা হবে ২০০ গাড়ি। প্রতিটি গাড়ির দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। ফলে ২০০টি গাড়ি কিনতে মোট লাগবে ২৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মাধ্যমে এসব গাড়ি কেনার কথা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ডিসি ও ইউএনওদের জন্য সর্বাধুনিক মডেলের বিলাসবহুল ২৬১টি জিপ গাড়ি কেনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে আগেই যানবাহন অধিদপ্তরের চাহিদাপত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন পিপিআরের মূল্যসীমার অতিরিক্ত দামে এসব গাড়ি কেনার জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হবে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে চলতি অর্থবছরের (২০২৩২৪) দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ ২ জুলাই সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে ২০২৩২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সকল প্রকার যানবাহন ক্রয় (মোটরযান, জলযান, আকাশযান) বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশনা জারি করে সরকার। একই সঙ্গে পরিচালন বাজেটের আওতায় মোটরযান, জলযান, আকাশযান খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়। তবে ১০ বছরের অধিক পুরনো মোটরযান প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করার সুযোগ দেওয়া হয়।

এছাড়া পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সকল প্রকার বৈদেশিক ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করার সুযোগ দেওয়া হয়। সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধাস্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর কর্পোরেশন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তবে এক মাস না যেতেই আগস্টের শুরুতেই সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আবার গাড়ি কেনার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এমনকি গাড়ির জন্য বরাদ্দ আগের থেকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য সর্বোচ্চ ৯৪ লাখ টাকা দামের গাড়ি কেনা যেত। নতুন নির্দেশনায় এই বাজেট বাড়িয়ে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের গ্রেড ১ ও ২ পর্যায়ের কর্মচারী এই গাড়ি কিনতে পারবেন। আর গ্রেড ৩ বা তার চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের জন্য কেনা যাবে ৬৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি। আগে তাদের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা ছিল ৫৭ লাখ টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অব্যাহতি পেলেন ৫ সাংবাদিক
পরবর্তী নিবন্ধস্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না