দুর্নীতিবাজ পিতা, স্বামী, ভাইকে ত্যাগ করতে পরিবারের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান রাখেন।
এমন এক সময়ে প্রধান বিচারপতির এ আহ্বান এল, যখন এক ছেলের ১৫ লাখ টাকায় কোরবানির ছাগল কেনার খবরে এনবিআরের এক কর্মকর্তার দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। একজন সাবেক আইজপি, তার স্ত্রী সন্তানের নামে থাকা অবৈধ সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। একজন সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও আলোচনা চলছে। খবর বিডিনিউজের।
‘দুর্নীতি ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ–গঠন সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্য’ শীর্ষক সেমিনারে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার বক্তৃতা’য় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ।
প্রধান বিচারপতি দুর্নীতি সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান আজও আমাদের জন্য সীমাহীন প্রাসঙ্গিক। দুর্নীতিবাজদের সবক্ষেত্রে পরিত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, কোনো সন্তান কি বাবাকে প্রশ্ন করেছে, তার আয়ের উৎস কোথায়? কোনো স্ত্রী কি স্বামীকে প্রশ্ন করেছে? কোনো পিতা–মাতা কি সন্তানকে প্রশ্ন করেছে? দুর্নীতিবাজ পিতা, স্বামী কিংবা সন্তান–যেই হোক তাকে বয়কট করতে হবে।
‘গুটিকয় মানুষের জন্য’ অনেকেই বিচার বিভাগের সমালোচনা করেন মন্তব্য করে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, বিচার বিভাগ মানে শুধু বিচারক কিংবা শুধু আইনজীবী নন; আদালতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারী, আইনজীবীদের সহকারী–সবাইকে নিয়ে বিচার বিভাগ। এখানে গুটিকয় মানুষের জন্য পুরো বিচার বিভাগ নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করেন।
এ প্রসঙ্গে ‘এক শ্রেণির’ আইনজীবীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখানে উপস্থিত আছেন কয়েকজন আইনজীবী। আপনারা কিছু মনে করবেন না; বিশেষ করে নিম্ন আদালতের কিছু আইনজীবী আছেন, যারা কোনো মামলায় হারলে মক্কেলকে বলেন, ওই বিচারক তো ঘুষ খায়! জিতবে কেমনে! এ জন্য তিনি বার কাউন্সিলের মাধ্যমে আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক হারুন অর রশিদ তার ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার বক্তৃতায়’ দুর্নীতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে অক্সফোর্ড, ওয়েবস্টার ও বাংলা একাডেমির অভিধান থেকে উদ্ধৃত করেন। তার সঙ্গে মিলিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সংজ্ঞার উল্লেখ করেন। ১৯৭৫ সালের ২৬শে মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আজ কে দুর্নীতিবাজ? যে ফাঁকি দেয়, সে দুর্নীতিবাজ। যে ঘুষ খায়, সে দুর্নীতিবাজ। যে স্মাগলিং করে, সে দুর্নীতিবাজ। যে ব্ল্যাক মার্কেটিং করে, সে দুর্নীতিবাজ। যে হোর্ড করে, সে দুর্নীতিবাজ। যারা কর্তব্য পালন করে না, তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করে, তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিদেশের কাছে দেশকে বিক্রি করার ষড়যন্ত্র করে তারা দুর্নীতিবাজ।
অপর এক বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, শুধু নিজেরা ঘুষ খাওয়াই করাপশন নয়। এ সম্বন্ধে আমার কথা হল–করাপ্ট পিপলকে সাহায্য করাও করাপশন। নেপোটিজমও কিন্তু এ টাইপ অব করাপশন। স্বজনপ্রীতিও কিন্তু করাপশন।
অধ্যাপক হারুন তার বক্তৃতার এক পর্যায়ে বলেন, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের কাছে তিনি একটি বিষয়ে কৃতজ্ঞ। একটি বিচারের রায় দেওয়ার সময় বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছিলেন, দুর্নীতির বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না? ওই বক্তব্য সংবাদে দেখে আমি বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিই।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান।