সাতকানিয়া উপজেলার রসুলাবাদ ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবীতে শিক্ষার্থীরা রোববার (২৫ আগষ্ট) ক্লাস বর্জন করে এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমান অধ্যক্ষ আহমদ রেজা স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় ২০১৩ সালে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করে উপাধ্যক্ষ হন। পরে আর্থিক অসদুপায় অবলম্বন করে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের সুবিধা নেন।
অধ্যক্ষের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট সরকারের গুন্ডা-মাস্তানদের সহায়তায় মাদ্রাসার সার্বিক পরিবেশ বিনষ্ট করা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর সব সময় স্বৈরাচারী, স্বেচ্ছাচারী বেপরোয়া আচরণ করার অভিযোগ আনে।
তাছাড়া মতের অমিল হলেই কথায় কথায় হুমকি-ধমকি, মামলা-মোকদ্দমা ও জামায়াত-শিবির ও বিএনপির তকমা লাগিয়ে গ্রেফতার করিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে পুরো মাদ্রাসায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করারও অভিযোগ তোলে।
এছাড়াও ভিন্ন মতাদর্শী শিক্ষার্থীদের নিজেই মাদ্রাসা হোস্টেল থেকে পুলিশের হাতে তুলে দেন এমন গুরুতর অভিযোগও উথ্তাপন করা হয় অধ্যক্ষ আহমদ রেজার বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে আওয়ামী স্বৈরশাসকের গুন্ডাপান্ডা এলাকার চিহ্নিত মাস্তানদের নিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি করতেন।
দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ আহমদ রেজা নিজের খাতিরের কমিটির সদস্যদের নিয়ে মাদ্রাসা ফান্ডের অর্থ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ভাগবাটোয়ারা করতেন। তার এসব দূর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে কমিটির লোকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে হেনস্তা করতেন।
একপর্যায়ে মাদ্রাসা অফিস হয়ে উঠে বহিরাগতদের অবৈধ কার্যকলাপের আড্ডাখানা, টর্চার-নিপীড়ন সেল ও নেশা খাওয়ার আস্তানা। এভাবে দিনে দিনে মাদ্রাসার পড়াশোনার সুন্দর ও মৌলিক পরিবেশ ধ্বংস করে দেয়ার অভিযোগ আসে।
সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট এবং মাদ্রাসার সম্পদ অবৈধভাবে ভাগবাটোয়ারা করে খাওয়ার গুরু তিনি। তার দুর্নীতি ও অবৈধ কার্যকলাপের কিছু আমলনামা সংযুক্তি আকারে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে তিনি হিসাব-নিকাশ এবং জবাবদিহিতার কখনও তোয়াক্কা করতেন না। নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে তিনি ভিন্ন মতাদর্শী শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিমুহুর্তে হেনস্তা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকতেন। ফলে মাদ্রাসায় কর্মরত সবার মাঝে সব সময় আতঙ্ক-ভয় বিরাজ করতো এমন নানা অভিযোগ তোলা হয় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, এ অধ্যক্ষের অবৈধ কার্যকলাপ ও স্বেচ্ছাচারীতার কারণে মাদ্রাসার বার্ষিক সভা পর্যন্ত অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছাড়া অনেকটা জনশূন্য অবস্থায় পালিত হয়ে আসছে।
এসব দাবী সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকার সচেতন নাগরিক সমাজ।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানায়, ছোট্ট ফোরকানিয়া মাদ্রাসার সভাও এ মাদ্রাসার সভার চেয়ে বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ হয়। এ অধ্যক্ষ আসার পর থেকে স্বৈরাচারী মনোবৃত্তি লুটপাট ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে পরিচালনা কমিটি গঠন করার কারণে ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসার সুনাম ও খ্যাতি আজ বিলুপ্তির পথে।
এদিকে বর্তমান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অধ্যক্ষের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছে । পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচির চালিয়ে য়াওযার ঘোষনাও দেয় ।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীরা বলেন,আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোনো ধরনের বহিরাগত গুন্ডাদের হস্তক্ষেপ যেন না হয়, এজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি। এ অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অপসারণ পূর্বক গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবীও জানান তারা। অধক্ষের পদত্যাগ, বিচার ও গ্রেফতারের দাবিতে তারা আগামীকাল সোমবার (২৬ আগস্ট) মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষনা দেয়।