দুর্নীতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসুন

ড. মোহাম্মদ আলী চৌধুরী | রবিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ

দুর্নীতি বিষয়টি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। এ জন্য দেশ বাঁচানোর স্বার্থে এটি প্রতিরোধে সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এ বিষয়ে আমি সূত্র হিসেবে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্ম্‌দ ইউনূস এর তিন শূন্যের পৃথিবীর কথা স্মরণ করতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘তিন শূন্যের পৃথিবী হচ্ছে () শূন্য দারিদ্রতা () শূন্য বেকারত্ব () শূন্য কার্বন নিঃস্বরন। আমি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর সাথে আরো একটি শূন্য যোগ করতে চাই। সেটি হচ্ছে শূন্য দুর্নীতি। দুর্নীতি তো করি আমরা। দুর্নীতি বিষয়টির সাথে দুই পক্ষই সরাসরি জড়িত থাকে। এক পক্ষ সেবা গ্রহীতা, অপর পক্ষ সেবা দাতা। দুর্নীতি প্রক্রিয়ায় সেবা দাতার চেয়ে সেবা গ্রহীতার ভূমিকাই অনেক বেশী থাকে। অথচ শুধু অপবাদ দেয়া হয় সেবা দাতাকে। অন্ধকারে রাখা হয় সেবা গ্রহীতাকে। তাই যাকে অধিকারে রাখা হয়, আমি তাকে আলোতে আনতে চাই।’

সেবা গ্রহীতার, যদি সরাসরি সেবা দাতার কাছে যাওয়ার সুযোগ থাকে, সেক্ষেত্রে হয়ত দেখা যাবে, সেবা দাতা, সেবা গ্রহীতার একজন নিকট আত্মীয় বন্ধু বা একই রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী একজন কর্মী, নেতা বা সমর্থক। সেক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতার সেবা দাতার কাছে যাওয়ার সুযোগ তৈরী হয়ে যায়। এ সুযোগটি সেবা গ্রহীতা আর হাতছাড়া করতে চান না। সুযোগটি ব্যবহার করার জন্যে সেবা গ্রহীতা বিভিন্ন রকমের কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। কৌশল হিসেবে সেবা দাতার কাছে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী নিয়ে যাওয়া, বাসার জন্য মিষ্টি নেয়া, চানাস্তা থেকে শুরু করে Lunch করা ইত্যাদি কৌশলগুলো ব্যবহার করার সুযোগ হাতছাড়া করে না। এ কাজগুলোকে কি দুর্নীতি বলা যাবে না? আর যদি সেবা গ্রহীতার সাথে সেবা দাতার এ ধরনের সম্পর্ক তৈরীর সুযোগ না থাকে সেক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতা তাঁর কাজটি আদায় করার জন্য হয়ত কোন দালালের আশ্রয় গ্রহণ করত। সেখানে দালালের প্রশ্ন থাকে, সেখানে কি অর্থের লেনদেন না হয়ে পারে? এ হাতায় কর্মকান্ডে অবশ্যই দুর্নীতিকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। তবে এটি সত্যি যে, এ ধরনের কাজে উৎসাহ সৃষ্টির পেছনে সেবা দাতা নয় বরং সেবা গ্রহীতাই বহুলাংশে দায়ী।

এখন প্রশ্ন হল এর থেকে বের হয়ে আসার উপায় কী? উপায় হল, সেবা প্রার্থী এবং সেবা দাতার মাঝখানে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগের বিষয়টি আইন করে নিষিদ্ধ করা। তাহলে প্রশ্ন আসে সেবা প্রার্থী তাঁর প্রয়োজনীয় সেবাটি কি করে পাবেন। সেবাটিতে সেবা প্রার্থীকে অবশ্যই পেতে হবে। কারণ সেবা পাওয়া তাঁর মৌলিক অধিকার, তাঁকে সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না।

দুর্নীতির এ প্রক্রিয়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রত্যেক অফিসে সরকারি হোক বা বেসরকারী হোক বাধ্যতামূলক (Despatch) ডেসপ্যাচ শাখা রাখতে হবে। সেবা প্রার্থী তার সেবা পাওয়ার প্রয়োজনীয় কাগজটি নিয়ে এবং একই সাথে ঐ কাগজের একটি ফটোকপি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে যাবেন। সেবা প্রার্থী মূল কাগজটি সংশ্লিষ্ট অফিসের (Despatch) ডেস্‌প্যাচ শাখায় জমা দেবেন। সেবা দাতা সেবা প্রার্থীকে তার নেয়া ফটোকপিতে তারিখসহ স্বাক্ষর করে অফিসিয়াল সীল দিয়ে সেবা প্রার্থীকে কাগজটি বুঝিয়ে দেবেন। সেবা প্রার্থীর কাজটি সম্পন্ন হবার জন্য ন্যূনতম বা সর্বোচ্চ কতদিন সময় প্রয়োজন হতে পারে সে বিষয়েও সেবা প্রার্থীকে ধারণা দিবেন। সেবা প্রার্থী ডেস্‌প্যাচ শাখা থেকে পাওয়া ধারণা অনুযায়ী Receive করা কাগজটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসের ডেসপ্যাচ শাখায় যাবেন। তখন দেখা যাবে সেবা প্রার্থীর কাজটি সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি কাগজটি নিয়ে আসতে পারবেন। যদি এ কাগজটির উর্ধ্বতন বা সমপর্যায়ের কোন অফিসে জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রেও তিনি পূর্বের ন্যায় সংশ্লিষ্ট অফিসের (Despatch) ডেসপ্যাচ শাখায় গিয়ে কাগজটি জমা দেবেন। এ প্রক্রিয়ায় যেহেতু সেবা গ্রহীতা ও সেবা দাতার মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগের সুযোগ থাকছে না সেজন্য এ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি করার সুযোগও থাকছে না। এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধে সফল হতে পারি। তবে আমি শুরুতে বলা কথাটিকে আরো জোর দিয়ে বলতে চাই, দুর্নীতি করার জন্য সেবা দাতা নয়, বরং সেবা গ্রহীতাই অনেকাংশে দায়ী।

লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোড চট্টগ্রাম ও সাবেক অধ্যক্ষ সরকারী কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম; উপদেষ্টা, দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থা চট্টগ্রাম মহানগর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে
পরবর্তী নিবন্ধসমকালের দর্পণ