বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, সীমিত সম্পদের কথা মাথায় রেখে অপচয় ও দুর্নীতি কমাতে হবে। কমাতে হবে দীর্ঘসূত্রতা। এগুলো প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। উন্নয়নের পথে প্রকল্প ব্যয় বেশি হওয়াটা একটি বড় সমস্যা। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন কার্যক্রম উদ্বোধনে তিনি বলেন, যেকোনো ইনডিকেটর নেন, আমাদের সড়ক নির্মাণ ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বেশি। আরো বড় সমস্যা হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক বিলম্ব হয়। এই (পাইপলাইন) প্রকল্পটিও ২০১৮ সালে নিয়ে ২০২০ সালে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। করোনা, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটলে অবশ্যই ব্যয় বাড়বে। বিশ্বব্যাপী ইকুইপমেন্টের দাম বাড়ে। গত শনিবার সকালে নগরের পতেঙ্গায় ডেসপাস টার্মিনালে সুইচ টিপে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করে জ্বালানি তেল নেয়া হচ্ছে। আগে যে তেল পরিবহনে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা লাগত, এখন তা মাত্র ৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছবে। এর মধ্যে বিশটি নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সম্পদ এমনিতে কম, যা আছে সেটারও সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছি না দুটি কারণে। একটি দুর্নীতি, আরেকটি অপচয়। যদি আমরা দুর্নীতি ও অপচয় কমাতে পারি, টেকনোলজিক্যাল প্রগ্রেস করতে পারি, তাহলে বিপুল জনসংখ্যার জন্য গ্রোথ এচিভমেন্ট সম্ভব হবে।
আসলে দুর্নীতিকে যতই আমরা না বলি, ততই যেন আমাদের জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। দুর্নীতি সবাইকে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। দেশে এমন কোনো খাত নেই যেখানে দুর্নীতির অশুভ থাবা প্রভাব বিস্তার করেনি। প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে উঁকি দিচ্ছে, চোখ পাকাচ্ছে। সমাজের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। কেবল অভাবের তাড়নায় মানুষ দুর্নীতি করে–এটি সত্য নয়। বিত্তশালী কর্মকর্তা বা ব্যক্তি আরো অর্থ সম্পদের জন্য দুর্নীতি করে। মানুষের মধ্যে নীতি–নৈতিকতার ঘাটতি হলেই দুর্নীতি জেঁকে বসে। দুর্নীতির দুষ্টচক্র দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট বাধা হিসাবে কাজ করছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা–কর্মচারীদের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার জন্য সরকার বেতনভাতা বৃদ্ধি করলেও তা না কমে বরং আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী এ কনভেনশন বা সনদে বলা হয়েছে যে, দুর্নীতি সমাজের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে, গণতান্ত্রিক কাঠামো, নৈতিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারকে ক্ষুণ্ন করে এবং টেকসই উন্নয়ন ও আইনের শাসনকে বিপন্ন করে। সুতরাং এ কনভেনশনকে দক্ষতার সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তিগত সহায়তা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সারা বিশ্বের সরকার, বেসরকারি সংস্থা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গণমাধ্যম ও সাধারণ নাগরিকরা প্রতি বছর একটি দিন ‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দিবস’ হিসেবেও পালন করে।
অনেকেরই অভিযোগ, আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন আগে যেমন খুব একটা কার্যকর ছিল না, বর্তমানেও খুব একটা তৎপর নয়। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে কি পারে না, তা নিয়ে আছে সংশয়। তবে বিশ্লেকরা বলেন, দুদকের পক্ষে সারা দেশের সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তাছাড়া সারা দেশের দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণও দুদকের কাছে নেই। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতির অনুসন্ধানের জন্য ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’ সৃষ্টি হলেও পরবর্তী সময়ে কমিশনের জন্য প্রণীত আইনে দুদকের অধিক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় জনবল ও অফিস বিস্তৃতি হয়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকলেই কেবল দুদক কাজ করতে পারে।
অন্যদিকে অপচয় কমাতে গুরুত্ব দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। বিদ্যুৎ, গ্যাসের অপচয় কমানোর পাশাপাশি খাদ্যের অপচয় কমাতে হবে। কেননা, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সরকার চেষ্টা করলেও স্বয়ং সম্পন্ন হতে সময় লাগবে। এজন্য খাদ্যপণ্যের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি এবং অপচয় কমাতে হবে। লক্ষ করলে বোঝা যাবে যে খাদ্য অপচয় দিনের পর দিন বাড়ছে। খাদ্য সংকটের বড় একটা কারণ খাবার নষ্ট করা। খাদ্য অপচয় রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।