দুর্গোৎসবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে নিরাপত্তায়

| শনিবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব বা উসকানিমূলক তথ্য ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির যেকোনো চেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর রংপুরের তালতলা নবাবগঞ্জ রোডে করুণাময়ী কালীবাড়ি মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির একটি পাঁয়তারা চলছে। আমাদের আইসিটি বিভাগসহ সবগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার এসব বিষয় সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে। কোনো পোস্ট বা তথ্য আমাদের নজরে এলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রকৃত ঘটনা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যদি মিথ্যা তথ্য হয় তবে গুজব ছড়ানো ব্যক্তির বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো তথ্য প্রচার হলেই তা যাচাইবাছাই না করে বিশ্বাস করবেন না। কোনো তথ্য পেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করুন, তারা তাৎক্ষণিকভাবে ভেরিফাই করবে।’ উল্লেখ্য, আগামীকাল ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে হিন্দু সমপ্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হবে এবং ২ অক্টোবর বিজয়ার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে। এই সময়কে সামনে রেখে র‌্যাব ফোর্সেস সারাদেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে র‌্যাব মহাপরিচালক জানিয়েছেন।

সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, শত শত বছর আগে থেকে আমাদের জনপদে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য নৃগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। কিন্তু তাদের মধ্যে তেমন কোনো সমস্যা অতীতে ছিল না, এখনো নেই বলে আমরা মনে করি। আমাদের বসবাসের ধরন দেখলে কারো মনে হবে না যে আমরা আলাদা কোনো সত্তা। তবে কোনো বিশেষ কারণে আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে একে অপর থেকে আলাদা মনে করিয়ে দেয়। এ কথা সত্য যে আমরা ধর্মীয়ভাবে আলাদা এবং প্রত্যেকে যার যার ধর্ম পালন করি। যার যার ধর্ম পালনে আমাদের স্বাধীনতা আছে। একসঙ্গে চলা এবং ওঠাবসার ক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতা আছে বলে আমাদের মনে হয় না। আমরা যে একসঙ্গে বসবাস করি, তা সম্ভব হয়েছে আমাদের সাংস্কৃতিক অভিন্নতার কারণে।

তাঁরা বলেন, বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা প্রতিবছরের মতো এবারও ভক্তি, সংস্কৃতি ও সামাজিক সমপ্রীতির মিলনক্ষেত্র হিসেবে উদ্‌যাপিত হবে। এ উৎসবের মর্যাদা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র, সমপ্রদায় ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব। সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে দেখা যায়, মানুষের ধর্মীয় বিচারে তার সাংস্কৃতিক ভিন্নতা অনেক বেশি। এটি শুরু হয় ভাষা থেকে। যখন ধর্মীয় বিবেচনায় ভাষা আলাদা হয়, তখন কাছাকাছি আসা একটু কঠিন হয়। কেননা ভাষা এমন একটি মাধ্যম, যা মানুষকে কাছাকাছি আনতে যথেষ্ট সহায়তা করে। অতীতেও আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত দেখা দিয়েছে। এমনকি পাহাড়েও পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘাত চরম পর্যায়ে ছিল। এখন তেমনটি নেই, তবে মাঝে মাঝে সংঘাত দেখা দেয়। কিন্তু এমন সংঘাতের বিশেষ কারণ ও উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। এর সঙ্গে এ দেশের বেশির ভাগ হিন্দুমুসলমানের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবাই বাঙালি।

বিশেষজ্ঞরা বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, সারা দেশে প্রায় ৩১ হাজার মণ্ডপে নিরাপত্তার আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি মণ্ডপে পর্যাপ্ত পুলিশি পাহারা, সিসিটিভি নজরদারি, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা, জরুরি সেবা সংযোগ ও দর্শনার্থীদের সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। তবে সরকারের একক তৎপরতা যথেষ্ট নয়, স্থানীয় কমিউনিটি, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ এবং সাধারণ নাগরিকদের সচেতন অংশগ্রহণ সমানভাবে অপরিহার্য। প্রতিটি মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। রাষ্ট্রের নীতি ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত কার্যক্রম যদি জনগণের সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার সঙ্গে মিলিত হয়, তবেই আমরা দেখতে পাব উৎসবমুখর ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজার চিত্র। আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব শেষ হোক। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে নিরাপত্তায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে