শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা আজ। সকালে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা শ্রীশ্রী শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরসহ বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপে মহাঅষ্টমীর দিনে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সব নারীতে মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার লক্ষ্য। আজ সকালে নির্দিষ্ট কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হবে। ফুলের মালা, চন্দন ও নানান অলংকার–প্রসাধন উপাচারে নিপুণ সাজে সাজানো হবে কুমারীকে। মাতৃ রূপে পুজিত হবেন কুমারী দেবী।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকানুযায়ী আজ শুক্রবার সকাল ৬টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর মহাঅষ্টমী কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমীবিহিত পূজা শুরু হবে। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে মহাঅষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর পুষ্পাঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ শেষে সন্ধিপূজারম্ভ ও সমাপন।
পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এখন আনন্দমুখর পরিবেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে দেবী দুর্গা মায়ের পূজা করা হয়। ত্রিনয়নী দেবীদুর্গার চক্ষুদান করা, দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেন ভক্তরা।
শাঁখের ধ্বনি আর ঢাকের বাদ্যতে ভক্তদের পদচারণায় গতকাল মুখর ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমীর পূজামণ্ডপ। সন্ধ্যার পর থেকে চট্টগ্রামের মণ্ডপগুলোতে ভক্তদের ভিড় আরো বাড়ে। বিশেষ করে নগরীর থিমভিত্তিক মণ্ডপগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য। গতকাল মহাসপ্তমী তিথিতে সকাল থেকে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও বিকালের পর বৃষ্টি থেমে গেলে মণ্ডপগুলোতে ভক্তদের ভীড় বাড়তে থাকে। সেই সাথে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসও দেখা যায়। গভীর রাত পর্যন্ত মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা দর্শনে নানা বয়সী ভক্তদের ভীড় লেগে থাকে। চট্টগ্রাম নগরীর জেএমসেন হল, রামকৃষ্ণ মিশন, কৈবল্যধাম, প্রবর্তক সংঘ বাংলাদেশ, হাজারী গলি, গোসাইল ডাঙা, কুসুম কুমারী বিদ্যালয়, চেরাগী পাহাড়সহ মহানগরীর ১৬ থানায় ২৯৩টি মণ্ডপে এবং জেলার ১৫টি উপজেলায় ২ হাজার ১৬৫টি মণ্ডপে প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় নির্বিঘ্নে চলছে পূজা অর্চনা।
পূজা উদযাপনের সার্বিক নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অধিকাংশ মণ্ডপে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
সপ্তমী পূজায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে চলে ভক্তিমূলক সংগীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা আয়োজন।
কুমারী পূজা : আজ শুক্রবার শারদীয় দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিনে মহাষ্টমী ও সন্ধিপূজা। নগরীর পাথরঘাটার শ্রীশ্রী শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরসহ বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপে একই সঙ্গে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিনের প্রধান আকর্ষণ কুমারী পূজা। প্রতি বছর মন্দিরে ১ থেকে ১৬ বছরের যেকোনো হিন্দু কুমারী কন্যাকে মাতৃভাবে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে পূজা করা হয়। ভক্তদের মতে, এর মধ্য দিয়ে একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা হয়। মূলত নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা।
শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে তার একটি নামকরণও করা হয়। শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোতে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে অন্নদা বলা হয়।
পাথরঘাটাস্থ শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে সকাল সাড়ে ৯টায় শ্রীমৎ শ্যামল সাধু মোহন্ত মহারাজের পৌরহিত্যে কুমারী পূজার অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমীর সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সকাল ৬টার মধ্যে শারদীয়া দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, ঘট স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা প্রশস্তা। এরপর দেবীর সপ্তমীবিহিত পূজা শেষে আয়োজন করা হয় পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতি। অনেক মণ্ডপে ছিল আরতি, বস্ত্র বিতরণ, ভক্তিমূলক সঙ্গীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য আয়োজন।
পূজামণ্ডপগুলো এদিন ঢাক–ঘণ্টার বাদ্যি–বাজনা আর ভক্তদের পূজা–অর্চনায় মুখর হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে উৎসবের ছোঁয়া দেখা গেছে। উৎসবে যোগ দিয়েছেন নানান শ্রেণিপেশার মানুষও। এতে মণ্ডপগুলো বাঙালির সর্বজনীন উৎসবে রূপ নেয়।
আগামীকাল ১২ অক্টোবর শনিবার মহানবমী। ১৩ অক্টোবর রোববার বিজয়া দশমী বিহিত পূজা ও মাতৃ দর্পণ বিসর্জন। এরপর প্রতিমা নিরঞ্জন।