দুয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার জন্য নানা ধরনের পাঁয়তারা করছে দাবি করে বিষয়টিকে গণতন্ত্র ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস–চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান। তিনি বলেন, কারও ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে আমরা জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে পারি না। এ মুহূর্তে নির্বাচন প্রলম্বিত করা মানেই জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেওয়া। আমাদের দলের পক্ষ থেকে এ বছরের মধ্যে যাতে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় সে জন্য জোর দাবি জানাই এবং সে জন্য আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। এ সময় নির্বাচনকে সামনে রেখে দুয়েকটি রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়ে ইফতার করছে বলেও দাবি করেন তিনি। গতকাল দুপুরে নগরের কাজির দেউড়িতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে একইস্থানে চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক জেলার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। সভার আলোচ্য বিষয় জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও হারুনুর রশীদ হারুন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।
মতবিনিময় সভা আয়োজনের কারণ প্রসঙ্গে আহমেদ আজম খান বলেন, বর্তমান সংকটকালীন সময়ে দল ও অঙ্গসংগঠনকে আমরা কীভাবে সুসংগঠিত করবো, আগামী নির্বাচনের জন্য আমাদের কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে বিষয়গুলো নিয়েই মূলত বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরা যে মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি, সেই মুক্ত বাংলাদেশে এখনকার মানুষের দাবি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে জনগণের ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য একটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। সেই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনুপ্রেরণা এবং রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে দলকে সুসংগঠিত করতে আমরা সারা দেশ সফর করছি। এ সভা মনে করছে, এ বছরের মধ্যে দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা প্রয়োজন। কারণ গত সাত মাসে আমরা লক্ষ্য করছি, সংস্কার অত্যন্ত মন্থর গতিতে চলছে। সংস্কারের কিছু প্রস্তাবনা জমা হয়েছে বটে, কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন নিয়ে এখনও পর্যন্ত একটি সভাও হয়নি এবং কীভাবে সেটি বাস্তবায়ন হবে সেটা নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনো ডায়লগও শুরু হয়নি। তাই আমরা মনে করি, সংস্কারের নামে আর নির্বাচনকে প্রলম্বিত করতে পারি না।
তিনি বলেন, নির্বাচন যতই প্রলম্বিত হবে, ততই দেশের যে বিশৃঙ্খল অবস্থা, আইনশৃঙ্খলার বিশৃঙ্খল অবস্থা, সার্বিক অর্থনীতির যে বিশৃঙ্খল অবস্থা, কোনো জায়গায় আমরা সেই অবস্থাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে পারছি না একটি নির্বাচিত সংসদ এবং একটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া। উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রগুলোও তাদের বক্তব্য বিবৃতিতে বলছে– আমরা একটি নির্বাচিত সরকারের সময়ই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবো। এ মুহূর্তে বিদেশি বিনিয়োগ কিন্তু একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। কাজেই বিদেশি বিনিয়োগসহ বাংলাদেশকে একটি অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী দেশ হিসেবে দাঁড় করাতে হলে এখন একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন, যেটা আমরা অনেক আগ থেকেই বলে আসছি।
আহমেদ আজম খান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বিশ্বখ্যাত নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস, যাকে আমরা সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়ে সরকার গঠনে সহযোগিতা করেছি, তার উদ্দেশে বলবো, ড. ইউনুসের জন্য সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে একটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেওয়া। এই সুযোগ আশা করি ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপলব্ধি করবেন এবং এই সুযোগ তিনি হারাবেন না। কারণ, নির্বাচন প্রলম্বিত হলে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, নারীর ওপর যেভাবে হামলা হচ্ছে, শিশুদের ওপর যেভাবে জঘন্য অপরাধ হচ্ছে, তাতে এ সরকার দিন দিন একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে জনগণ মনে করছে, এ মুহূর্তে এ সরকারের নির্বাচন দিয়ে একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিৎ এবং নির্বাচিত সরকারই দেশে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারবে।
তিনি বলেন, আগামী দিনে রাষ্ট্র মেরামতের যে ৩১ দফা কর্মসূচি আমরা জাতির সামনে হাজির করেছি তারেক রহমানের মাধ্যমে। তারেক রহমান বিশ্বাস করেন, আমরা বিশ্বাস করি এবং জাতি বিশ্বাস করে আগামী দিনে সরকার ও সংসদ এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশ সমৃদ্ধ অর্থনীতির দিকে যাবে।
আহমেদ আজম খান বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, নির্বাচনকে সামনে রেখে দুয়েকটি রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়ে ইফতার করছে। তারা একবার বলছে ফ্যাসিবাদের দোসরদের ক্ষমা করে দেবে, আরেকসময় বলছে তাদের বিচার করবে। একেকদিন একেক কথা বলে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে, জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সকল রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে বলবো, এমন কোনো দায়িত্বহীন বক্তব্য দেবেন না যাতে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়। এমন কোনো দায়িত্বহীন বক্তব্য দেবেন না যাতে আগামীদিনে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা বিনষ্ট হয়।
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড জড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আহমেদ আজম খান বলেন, আমাদের পরিষ্কার মেসেজ, দেশনায়ক তারেক রহমান স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে, দলের ভেতরে যারা হানাহানিতে ব্যস্ত থাকবেন, কোনো ধরনের টেন্ডারবাজি–চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত থাকবেন, অন্য কোনো অনৈতিক ব্যবসায় ব্যস্ত থাকবেন, পরিষ্কার বার্তা হচ্ছে– তাদের দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে তাদের দুষ্কর্মের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমান এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছেন। স্পষ্ট কথা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাটি ব্যবসা, বালি ব্যবসা– কোনো ধরনের অনৈতিক কাজে বিএনপি জড়াবে না। বিএনপি আগামীদিনে দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকবে। সে জন্য প্রস্তুতি নিতে দেশনায়ক তারেক রহমান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন।