[ভূমিকা- ক্রাউন পাবলিশিং থেকে সমপ্রতি প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার লেখা স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ ‘আ প্রমিজ্ড্ল্যান্ড’। এই গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শেষ পর্বে তিনি লিখেছেন, নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হিসেবে জয়ী হবার দিনের স্মৃতিকথা। নির্বাচনের সারাদিন কীভাবে কেটেছিল, সেই সমস্ত কথা। এই অংশটুকু অনুবাদ করেছেন ফারহানা আনন্দময়ী।]
তুমি যখন প্রার্থী, নির্বাচনের দিনটি তোমার কাছে আসে এক আশ্চর্যজনক স্থবিরতা নিয়ে। নির্বাচনী প্রচারণার সব কোলাহল সেদিন যেন থমকে যায়। কোনো র্যালি নেই, সমাবেশ নেই, রেডিও-টিভির বিজ্ঞাপনগুলো দেখা যাচ্ছে না আর, নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে প্রতিমুহূর্তের কোনো রিপোর্ট-ও নেই সংবাদকর্মীদের। প্রচারণার কার্যালয় সব বন্ধ; কর্মী আর স্বেচ্ছাসেবকেরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভোটারদের এগিয়ে দিতে সাহায্য করছে। সারাদেশ জুড়ে অজস্র ভোটার একটা কালো পর্দার আড়ালে গিয়ে নিজস্ব মতামত আর আদর্শকে একটি রাষ্ট্রীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সচেষ্ট। তারা মনে করছে, কোনো অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে নয়, বরং তাদের এই সিদ্ধান্তের প্রতিফলনে পুরো দেশ আর তাদের ব্যক্তিগত ভবিষ্যত-ও দারুণভাবে পরিবর্তিত হবে। এই উপলব্ধিটা নিশ্চিতভাবেই সকলে কমবেশি জানি, এবং একইসঙ্গে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণও। তবে এখন অপেক্ষা করার চেয়ে বেশি আর কিছু করার নেই কারোরই। প্লোউফ আর অ্যাক্স খুব অস্থির হয়ে নিজেদের ব্ল্যাকবেরিতে এটাসেটা ঘাঁটাঘাঁটি করতে লাগলো। মাঠপর্যায়ের রিপোর্টগুলো, ছোটোখাটো রটনা, কোথায় কী খারাপ আবহাওয়া এসবের খবর নিতেই ব্যস্ত থাকলো ওরা। আমি বেছে নিলাম ঠিক এর বিপরীতটাই। অনিয়শ্চয়তার ঢেউয়ের ওপরে নিজেকে শুইয়ে দিলাম, সময়টা ভেসে যেতে থাকলো যেন। মনে পড়ছে, সেদিন সকালটা শুরু করেছিলাম ড্রাইভ-টাইম রেডিও শো দিয়ে। কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত স্টেশনগুলোতে ফোন করে ওদেরকে ঘর হতে বেরিয়ে, ভোট দিতে যাওয়ার কথা মনে করে দিচ্ছিলাম। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মিশেল আর আমি গিয়ে ভোটটা দিয়ে এলাম বিউলা শুস্মিথ এলিমেন্টারি স্কুলে গিয়ে। ওটা ছিল হাইড পার্কে আমাদের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে, কয়েকটা ব্লক পরে। মালিয়া আর শাশা আমাদের সাথেই ছিল। ওদেরকে নামিয়ে দিলাম ওদের স্কুলে।
এরপরে আমি খুব দ্রুতই ঘুরে এলাম ইন্ডিয়ানাপোলিসের একটা ফিল্ড অফিসে। ভোটারদের সাথে দেখা হলো ওখানে, হাত মেলালাম, কুশল জিজ্ঞাসা করলাম ওদের। এখান থেকে চলে গেলাম বাস্কেট বল খেলতে। মিশেলের ভাই গ্রেইগ, ক’জন পুরনো বন্ধু আর বন্ধুদের ছেলেদের সাথে অনেকক্ষণ খেললাম আমি। তরুণ ছেলেগুলো খুব দ্রুত দৌড়াতে পারতো আর বাস্কেট বল খেলাতেও ওরা খুব পারদর্শী। একেবারে ঘাম ঝরিয়ে দিল আমার। সেই খেলাতে একটা প্রতিযোগিতার আবহ ছিল, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে মন্তব্য করাও চলছিল তবে আঘাত করে খেলার প্রবণতাটা তুলনামূলকভাবে কমই ছিল সেদিন। পরে জেনেছিলাম, এটা ক্রেইগের নির্দেশ ছিল এরকম। খেলাশেষে যদি আমি ফোলা-কালো চোখ নিয়ে ঘরে ফিরি, তো বোন মিশেলের কাছে জবাবদিহি ক্রেইগকেই করতে হতো!
এরইমধ্যে গিব্স নির্বাচনের সংবাদ জোগাড় করে আনতে শুরু করলো। যে সব স্টেটস-এ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবার কথা, সেখানে আমাদের ভোটারদের উপস্থিতির সংখ্যা রেকর্ড ছাড়ানো। কিছু ভোটকেন্দ্রে কিছু সমস্যা হয়েছে, যেমন ভোট দিতে ভোটারদেরকে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে চার/পাঁচ ঘণ্টা। তবে গিব্স জানালো, ওখান থেকে যেসব খবর আসছে, তারা জানাচ্ছে ভোটারদের মধ্যে এটা নিয়ে কোনো হতাশা নেই। তাদের মধ্যে বরং উৎসবের আমেজই দেখা গেছে। বয়স্ক ভোটাররা লনে চেয়ার নিয়ে বসে ছিলেন, স্বেচ্ছাসেবকেরা তাদেরকে বিভিন্ন পানীয় আর স্ন্যাক্স দিয়ে তাদের ক্লান্তি কাটাতে সাহায্য করছিল, প্রতিবেশিদেরকে নিয়ে নিজেরা নিজেরা পার্টি যেমন হয়, সেরকম অনেকটা।
বিকেলের বাকি সময়টা আমি একাই কাটালাম ঘরে, এদিক ওদিক উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটাহাঁটি করে। মিশেল, মালিয়া আর শাশা গেল সেলুনে, চুল কাটাতে। স্টাডিতে আমি একা বসা, দু’টো বক্তৃতার খসড়াই লিখে ফেললাম, জয়ীর আর পরাজিতের। রাত আটটার দিকে অ্যাক্স ফোন করে জানালো, মিডিয়া নেটওয়ার্কগুলো বলছে পেনসিলভিনিয়াতে আমরা জয়ী হতে চলেছি। এবার মার্ভিন বললো, আমাদের এখন ডাউনটাউনে হোটেলের দিকে যাত্রা করা উচিত। ওখানে বসেই নির্বাচনের ফলাফলের বাকি সংবাদগুলো দেখবো। এরপরে গ্র্যান্ড পার্কে একটা জনসমাবেশে যাবার কথা আমাদের।
গত কয়েক ঘন্টায় আমাদের বাড়ির মূল প্রবেশপথের সামনে, মানে প্রধান ফটকের সামনে নিরাপত্তা প্রহরা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়া হলো। বেরোবার সময়ে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফ গিলবার্ট এগিয়ে এসে আমার হাতটা ধরে উষ্ণ আলিঙ্গনে টেনে নিলো আমাকে। বুঝতে পারলাম, জয়ের সুবাতাস তখন একটু একটু করে বইতে শুরু করেছে। বছরের এই সময়টাতে শিকাগোতে এতটা গরম অনুভূত হয় না সাধারণত, সেদিন যেমন হচ্ছিল। প্রায় ষাট ডিগ্রির মতো উষ্ণতা বাতাসে, লেক-শোরের রাস্তাটা ধরে এগিয়ে যেতে থাকলাম আমরা। মিশেল আর আমি দুজনেই চুপচাপ, জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম লেক মিশিগানের দিকে। পেছনের আসনে মালিয়া আর শাশা নিজেরা দুষ্টামি করছিল, হৈচৈ করছিল।
হঠাৎই মালিয়া আমাকে ডেকে, আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “বাবা, তুমি কি জিতে গেছ?”
“ওরকমটাই তো মনে হচ্ছে, সুইটি”।
“তাহলে তো আমাদের এখন বড়ো একটা পার্টিতে যাওয়া উচিত, উদযাপনের জন্য”।
“সেটা ঠিক বলেছ। কেন জিজ্ঞেস করলে এ কথাটা?”
“না, মানে, রাস্তাঘাট দেখে তো মনে হচ্ছে না যে বড়ো একটা পার্টিতে আমরা যাচ্ছি, যেখানে অনেক মানুষ আসবে। কারণ, রাস্তায় কোনো গাড়িই দেখতে পাচ্ছি না আমি”।
হাসলাম আমি। বুঝতে পারলাম, মালিয়া ঠিক কথাটাই বলেছে। এই মোটরযাত্রায় আমাদের গাড়িগুলো ছাড়া ছয়-লেইনের সেই রাস্তায় দু’দিকেই আর কোন গাড়ি ছিল না তখন।
আমাদের হোটেলের নিরাপত্তা প্রহরার ছক-ও বদলে ফেলা হলো। সশস্ত্র সোয়াট দল হোটেলের আশপাশে, সিঁড়ি জুড়ে অবস্থান নিলো। আমাদের পরিবারের অন্যান্যরা আর খুব কাছের ক’জন বন্ধু এরইমধ্যে হোটেলের সুইটে পৌঁছে গিয়েছিল। সকলেই হাসিগল্পে ব্যস্ত, শিশুরা দৌড়াদৌড়ি করছিল। তবে এই হুল্লোড়ের মধ্যেও পরিবেশটা সপ্রাণ নয়, অজানা এক নিস্তব্ধতা ছেয়ে আছে। কী ঘটতে চলেছে সেটা নিয়ে ভেতরে ভেতরে একটা অস্থিরতা কাজ করছিল। যদিও তারা খানিকটা আঁচ করতে পারছিল। আমার শাশুড়ি একটা সোফায় বসে ছিলেন। তিনি কিন্তু তার ভেতরের অস্থিরতাটা গোপন করার কোনো চেষ্টাই করছিলেন না। খেয়াল করলাম, তিনি বসে এক দৃষ্টিতে টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে আছেন, তার অভিব্যক্তিতে কেমন একটা অবিশ্বাসের ছায়া। তিনি এই সময়টাতে কী ভাবতে পারেন, কল্পনা করতে চেষ্টা করলাম আমি। তিনি কি সেই সময়টার কথা ভাবছেন, এখান থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরের একটা এলাকা, যেখানে তারা বেড়ে উঠেছেন, তাদের বাস ছিল, একটা সময়ে সেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের নিরাপদে প্রবেশ করাটাও কঠিন একটা বিষয় ছিল। একটা সময়ে এমন ছিল, অফিসের চাকরিগুলোতে কৃষ্ণাঙ্গরা কাজ পেয়েছে, এমনটা দেখাই যেত না। এমন কী তার বাবা কৃষ্ণাঙ্গ হওয়াতে শ্বেতাঙ্গ-নিয়ন্ত্রিত ট্রেড ইউনিয়নে ইউনিয়ন কার্ডটা পর্যন্ত পাননি। তাকে নিজের মতো করে ছোট ব্যবসা করতে হয়েছিল আলাদা। সেটা ছিল এমনই একটা সময়, যখন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হিসেবে একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে কল্পনা করা ছিল, একটা শুকর ডানা মেলে উড়ছে এরকমই এক অসম্ভব অবাস্তব কল্পনা।
সোফায় তার পাশে গিয়ে বসলাম আমি। তার দিকে চেয়ে বললাম, “তুমি ঠিক আছ তো?”
টিভির দিকে থেকেই, কাঁধটা একটু ঝাঁকিয়ে আমাকে বললো, “যা দেখছি, সত্যিই, তা আমাদের জন্য অনেক বেশিই মনে হচ্ছে”।
“আমি জানি। বুঝতে পারছি আমি”। তার হাতটা ধরে আলতো করে চাপ দিয়ে, এ কথাটুকু শুধু বললাম। কয়েকটা মিনিট কেটে গেল অদ্ভুত এক নীরবতাকে সঙ্গী করে। হঠাৎই আমার চোখ আটকে গেল টিভির পর্দায়। এবিসি নিউজ ঘোষণা করছে আমার নাম! আমেরিকার চুয়াল্লিশতম রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমার নাম ঘোষণা হচ্ছিল তখন টিভিতে!
মুহূর্তেই ঘরটি হর্ষধ্বনিতে ভরে উঠলো। হোটেলের উপরতলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত বোধহয় উল্লাসের সেই ধ্বনি শোনা গিয়েছিল। আনন্দে উদ্বেলিত মিশেল আর আমি পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলাম। সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হাসছিল আর আনন্দে মাথাটা দোলাচ্ছিল। রেগি আর মার্ভিন দৌড়ে দৌড়ে গিয়ে সকলকে আলিঙ্গন করছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লৌফ, অ্যাক্স আর গিব্স-ও চলে এলো আমাদের সাথে যোগ দিতে। খানিকটা সময় আমার কেটে গেল শুধু ওদের কথা শুনে; ওরা একের পর এক বিভিন্ন স্টেইটের জয়ের খবরগুলো শোনাতে থাকলো। আমি ওদেরকে বলার কোনো সুযোগই পাচ্ছিলাম না, দিনটা শুধু আমার একার নয়। এই দিনটাতে আমাদের এতদিনের শ্রম, স্বপ্ন সব সত্য হয়ে উঠলো ওদের সকলের আন্তরিকতা, শ্রম, দক্ষতা আর বিশ্বস্ততার সম্মিলিত প্রয়াসে। পুরো দলের অঙ্গীকারাবদ্ধ কাজের জন্যই সেদিন এই মহেন্দ্রক্ষণটি দেখা সম্ভব হয়েছিল। আজ এসে পেছন ফিরে তাকালে সেদিনের বাকি রাতের স্মৃতি এখন খানিকটা ঝাপসা লাগে। তবে আমার মনে আছে, জন ম্যাক-কেইনের সেই ফোন-কলটির কথা। তার ফোনের কথাগুলোও ছিল তার সেদিনের বক্তৃতার মতোই অভিজাত, গাম্ভীর্যপূর্ণ। পরাজিত হয়েও সেদিন তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমেরিকা গর্ব করতেই পারে আজ এই জয়ের জন্য, একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার জন্য। আমেরিকা একটা ইতিহাস তৈরি করলো আমাকে বিজয়ী করে। অভিনন্দন পেতে থাকলাম প্রেসিডেন্ট বুশ, বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছ থেকে। এক ফাঁকে আলাপ হলো হ্যারি রিড আর ন্যান্সি পেলোসির সাথে, তাদের দুজনের যার যার ককোসেস-এর পক্ষ থেকেও অভিনন্দন জানাচ্ছিল আমাকে। আমার স্মরণে আছে, জো বাইডেনের একানব্বই বছর বয়সী মায়ের সাথে আমার দেখা হওয়ার মুহূর্তটিও। তিনি আমাকে হাসতে হাসতে বললেন, বাইডেনকে তিনি কেমন করে বকা দিয়েছিলেন, যখন সে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমার রানিং-মেইট হতে চাইছিল না।
সেদিন রাতে প্রায় দুই লক্ষের বেশি মানুষ উপস্থিত হয়েছিল গ্র্যান্ড পার্কের সেই সমাবেশে। মঞ্চটি ছিল শিকাগোর আলোকোজ্জ্বল আকাশছোঁয়া ভবন-অভিমুখী। সেই রাতে মঞ্চে ওঠার সময়ে কয়েকটা মুখ আমার দিকে উজ্জ্বল দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়েছিল, যে মুখগুলো আজও আমি স্পষ্ট মনে করতে পারি। আরো কতমুখ ছিল, নারী-পুরুষ-শিশু, বিভিন্ন জাতি-বর্ণের, কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র, কেউ বিখ্যাত, কেউ সাধারণ, কেউ হাসছিল, কেউ আনন্দে সশব্দে কাঁদছিল। সেদিনের সেই বক্তৃতার কিছু লাইন আজও পড়লাম আবার, সেই রাতের প্রত্যক্ষদর্শী বন্ধু-সহকর্মীদের কাছ থেকে কিছু স্মৃতি আজও আমি শুনলাম আবারো।
কিন্তু মাঝেমধ্যে মনে হয় আমার, সেদিনের সেই স্মৃতি বোধহয় আবছায়া হয়ে যায় গত বারো বছরের পথচলার অসংখ্য স্মৃতির মাঝে! ফটোতে দেখে দেখে সেই স্মৃতি ফেরাতে চেষ্টা করি আমি। কীভাবে আমরা পরিবারের সকলে মঞ্চে হেঁটে এলাম, সেই উৎফুল্ল জনতা, মুহুর্মুহু ক্যামেরার লাইট, সেই অসাধারণ ব্যাকড্রপ্স…সব স্মরণে আসে। এত সুন্দর সেই ফটোগুলো, তবে বাস্তবের সেই মুহূর্তের মতো তত নয়। তবে আমার কাছে গ্র্যান্ড পার্কে সেই রাতের ফটোগুলো সেরার সেরা নয়। আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে অন্য একটি মুহূর্তের ফটো। অনেক বছর পরে এটি আমি উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম, লিঙ্কন মেমোরিয়ালের একটা ফটো। তখন আমি শিকাগোতে বিজয়ী রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা দিচ্ছিলাম, ঠিক সেই সময়ে লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সামনে ছোট্ট একটা সমাবেশে অল্প ক’জন মানুষ সিঁড়িতে অপেক্ষমান। আলো-আঁধারিতে ওদের মুখ। ওদের ঠিক পেছনে বিশাল সেই মূর্তিটি আলোর বিভা ছড়িয়ে বসে আছে। তার পাথরের মুখটি শুশ্রূমণ্ডিত, তার দৃষ্টি সামান্য ঝুঁকে আছে নিচের দিকে। আর লিঙ্কনের সেই মূর্তিটির সামনে দাঁড়িয়ে-বসে ওরা রেডিয়োতে আমাকে শুনছে। সেই ফটোটিতে আমাকে যেন বলা হচ্ছে, নিঃশব্দে আমরা ভাবছি, মানুষ হিসেবে আমাদের অবস্থান কী… আর এই ভাবনার স্বাধীনতার পরিধিকে আমরা বলি গণতন্ত্র।
ফারহানা আনন্দময়ী : কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক