দুই মাস পর পাওয়া গেল বিক্রয় অনুমোদন

কাস্টমসে অনলাইন নিলাম । ভোগান্তির অভিযোগ বিডারদের

জাহেদুল কবির | বুধবার , ২৮ আগস্ট, ২০২৪ at ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কাস্টমসে নিলাম কার্যক্রমে গতি আনার জন্য ৪ বছর আগে ইঅকশন (অনলাইন নিলাম) চালু করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এই সময়ের মধ্যে নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ৯টি। এছাড়া যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে অনলাইন নিলাম চালু করা হয়েছে, তার সিকিভাগও পূরণ হচ্ছে না বলে অভিযোগ বিডারদের। অনলাইন নিলামে যেখানে এক সপ্তাহের মধ্যে নিলাম থেকে শুরু করে পণ্যের বিক্রয় অনুমোদন হওয়ার কথা, সেখানে ব্যয় হচ্ছে মাসের পর মাস।

সর্বশেষ গত ২৬ জুন অনুষ্ঠিত ৬৩ লট পণ্যের অনলাইন নিলামের বিক্রয় অনুমোদন হয়েছে মাত্র দিন কয়েক আগে। অর্থাৎ প্রায় দুই মাস পর! বিডারররা (নিলামে অংশগ্রহণকারী) বলছেন, অনলাইন নিলাম হচ্ছে টাকা পেমেন্ট থেকে শুরু করে সবকিছু অনলাইনে হবে। কিন্তু এই চার বছরেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সেই সিস্টেমটি দাঁড় করাতে পারেনি। শুধুমাত্র দরপত্র দাখিল হচ্ছে অনলাইনে। এছাড়া বাকি প্রক্রিয়া সবই হচ্ছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। বিশেষ করে পে অর্ডারে নিলামের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় ভুয়া পে অর্ডার জমা দেয়ার ঘটনা ঘটছে। তাই অনলাইন নিলামের সুফলও পাচ্ছে না সাধারণ বিডাররা। এমনকি কোন লটে কে কে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন, সেটিও জানা সম্ভব হচ্ছে না।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৭ ও ২৮ অক্টোবর ১৬ লট বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিলামে তোলার মাধ্যমে ইঅকশনের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০২১ সালের ১৯ ও ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় ২০ লট পেঁয়াজ নিলামে তোলা হয়। এছাড়া একই বছরের ৩ ও ৪ নভেম্বর কার্নেট ডি প্যাসেজ বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা বিলাসবহুল ১১২ লট গাড়ি তোলা হয়। দ্বিতীয় দফায় ১২ ও ১৩ জুন কার্নেট ডি প্যাসেজ বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা ১০৮টি গাড়ি পুনরায় নিলামে তুলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গত ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ৭৮ লট কার্নেট গাড়ি নিলামে তোলা হয়। এছাড়া গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন ধরণের ২৩ লট পণ্য এবং গত ৩১ ডিসেম্বর ১০৮ লট পণ্য ইঅকশনে তোলা হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন ধরণের ৭৯ লট পণ্য নিলামে তোলা হয়।

তবে সেই নিলামে ৩৫ লটের একটি দরপত্রও জমা পড়েনি! এছাড়া বাকি ৪৪ লটে অংশ নিয়েছে ১৬ বিডার। পরবর্তীতে গত ১৬ মে ফেব্রিক্সসহ ৯০ লট পণ্যের নিলামে দরপত্র জমা পড়েছে ১৭০টি। নিলামে ৪৯ জন বিডার অংশ নেন। এছাড়া সর্বশেষ গত ২৬ জুন গাড়িফেব্রিক্সসহ ৬৩ লট পণ্য নিলামে তোলা হয়। নিলামে ৩৬টি দরপত্র জমা পড়ে। এরমধ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই শেষে ২৬ লটে বিক্রয় অনুমোদন দেয়।

কয়েকজন বিডার বলেন, অনলাইন নিলাম নিয়ে আসলে বিডারদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। যার ফলে সাধারণ বিডাররা তাই অনলাইন নিলাম থেকে বারবার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অনলাইন নিলাম মানে হচ্ছে দ্রুত নিলাম। এখানে ম্যানুয়াল নিলামের মতো মাসের পর মাসের সময়ক্ষেপন হচ্ছে। পদ্ধতিগতভাবে এখনো সবকিছু ম্যানুয়াল নিলামের মতো হচ্ছে। অনলাইন নিলামে এখনো বিডার অভ্যস্ত হতে পারেনি। তারচেয়ে বড় হচ্ছে, বিক্রয় অনুমোদন দিতে মাসের পর মাস অপচয় হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার উপকমিশনার সেলিম রেজা দৈনিক আজাদীকে বলেন, অনলাইনে নিলামের পরে অনেক বিষয় যাচাই বাছাই করতে সময়ের প্রয়োজন হয়। তাই কিছু ক্ষেত্রে অনুমোদনেও সময় লাগে।

উল্লেখ্য, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে এসব কন্টেনার পড়ে থাকে। আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেয়ায় বন্দরগুলোতে প্রায়ই কন্টেনার জট লাগে। দিনের পর দিন কন্টেনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষও চার্জ পায় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধত্রাণ দিয়ে ফেরার পথে দুর্ঘটনা, অ্যাম্বুলেন্স চালকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধঘুষ নেয়ার অভিযোগ, চসিকের হিসাবরক্ষক সাময়িক বরখাস্ত