দুই দফা টেন্ডার হয়েছে; পার হয়ে গেছে সাড়ে ৪ বছর। কিন্তু সেই প্রকল্পের আর কোনো অগ্রগতি নেই। দুই হাজার ৮৭ কোটি টাকার রাউজান ৪৩৭ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটির প্রথম টেন্ডার হয়েছিল ২০২০ সালে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা এখন একেবারেই ক্ষীণ। না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বিদ্যমান রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের (৪২০ মেগাওয়াট) পাশে নতুন এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
পিডিবির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, রাউজান ৪৩৭ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরপর দুই দফা টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল। প্রথম টেন্ডারে কাজটি পেয়েছিল চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেপকো–থ্রি ইলেক্ট্রনিক পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। কাজ পাওয়ার পর তারা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের ১৬০ কোটি টাকা সিকিউরিটি মানি জমা না দেয়ায় এবং প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু না করায় তাদের চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এই কারণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার জমাদানের সময় যে ২১ কোটি টাকা জামানত দিয়েছিল সেটা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।
প্রথম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিল করার পর নতুন করে প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হলে তাতে চায়নার আরেকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছিল। পরবর্তীতে সেই প্রতিষ্ঠানের কাজের অগ্রগতিও আটকে যায়।
রাউজান ৪৩৭ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এখন আর কোনো অগ্রগতি নেই উল্লেখ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক গোবিন্দ চন্দ্র লাহা আজাদীকে বলেন, প্রকল্পটি এখন আর হওয়ার মত অবস্থানে নেই। তাহলে প্রকল্পটি কি আর হবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী গোবিন্দ চন্দ্র লাহা বলেন, অনেকটা এ রকম।
রাউজান ৪২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিজস্ব জায়গায় নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্পটি হওয়ার কথা ছিল বলে জানান রাউজান ৪২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. জসীম উদ্দিন। তিনি আজাদীকে বলেন, রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিজস্ব প্রচুর জায়গা আছে। সেখানে নতুন ৪৩৭ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হওয়ার কথা ছিল। নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের পরও আরো অনেক জায়গা থাকবে। আমাদের নিজস্ব (পিডিবির) অনেক জায়গা আছে।
নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে মো. জসীম উদ্দিন আরো বলেন, নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনো অগ্রগতি নেই। ৪২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্যাসের কারণে বন্ধ রয়েছে বলেও জানান তিনি। ১ নম্বর ইউনিট এক বছর ধরে বন্ধ। ২ নম্বর ইউনিট গত জুলাই থেকে বন্ধ। গ্যাস সংকট প্রকট উল্লেখ করে এখন চালু হওয়ার সম্ভাবনাও কম বলে জানান প্রকৌশলী মো. জসীম উদ্দিন।
পিডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ হলে পুরনো ৪২০ মেগাওয়াটের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত ছিল পিডিবির। রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এখন অনেকটা জরাজীর্ণ। পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারে না অনেক বছর। গ্যাস সংকটে বছরে প্রায় সময় বন্ধ থাকে। কিন্তু প্রকৌশলীসহ স্টাফ–কর্মচারীদের বিশাল ব্যয় ভার বহনে করতে হচ্ছে পিডিবিকে।