দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও করোনা পজিটিভ হয়েছেন রাজশাহী মহানগরীর সংস্কৃতিকর্মী আহসান কবীর লিটন । তার লিভারের অসুখ ছিল। করোনা পজিটিভ হওয়ার পরও তার অবস্থা খারাপ হয়নি। এমন উদাহরণ আমাদের চারপাশে এখন অনেক। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন দুই ডোজ টিকা নেওয়ায় তাদের শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে তা করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। খবর বাংলানিউজের।
আহসান কবীর লিটন বলেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি। করোনার দুই ডোজ টিকা নিয়েছিলাম। এজন্য হয়তো মারাত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। আহসান কবীর লিটনের মতো রাজশাহীর অনেকেই টিকা নেওয়ার পরও করোনা পজিটিভ হয়েছেন। টিকা দেওয়ার পর করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কমে গেছে। এছাড়া সংক্রমিতদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো গুরুতর অসুস্থ হওয়া কমেছে। করোনা সংক্রমিত হওয়ার পরও মারাত্মক অবস্থার মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার কার্যকারিতা নিয়ে দেশে সেভাবে গবেষণার ফলাফল পাওয়া যায়নি। তবে রোগীদের ইতিহাস ও আশপাশের তথ্য বলছে, টিকার কার্যকারিতা প্রত্যাশার তুলনায় ভালো। করোনা ভাইরাসের মিউটেশন হলেও টিকা ব্যবহারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুফল মিলছে। ভ্যাকসিন শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি করছে, তা মিউটেশনে রূপান্তরিত ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে। টিকা নেওয়ার পরও কেউ করোনা আক্রান্ত হলে হাঁচি-কাশি, জ্বর ছাড়া তেমন অসুস্থ হচ্ছেন না। অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থেকেও আক্রান্তরা রেহাই পাচ্ছেন।
এদিকে, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার টিকা নেওয়ার কিছুদিন পর করোনা আক্রান্ত হন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবা-মা টিকা গ্রহণের পরও জুন মাসের শুরুতে করোনায় আক্রান্ত হন। যদিও ২১ জুন তারা করোনা নেগেটিভ হয়েছেন। গণমাধ্যমকর্মী আবদুস সাত্তার ডলার দুই ডোজ নেওয়ার পরও করোনা পজিটিভ হন। এছাড়া টিকা নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তাদের মধ্যে শুধু সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ছাড়া কাউকেই করোনা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবা মো. শামসুদ্দিন জানান, আমি নির্ধারিত সময়ে দুই ডোজ টিকা নিয়েছিলাম। পরে পজিটিভ হলেও শারীরিক কোনো জটিলতা দেখা দেয়নি।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, জেলায় এখনো ৪৫ হাজারের কিছু বেশি মানুষ বাকি আছেন, যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন। তারা চেষ্টা করছেন টিকা সংগ্রহের। সংক্রমণ ও মৃত্যুহার যেভাবে বাড়ছে, তাতে সবাই টিকার আওতায় না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
এছাড়া দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্সদের মধ্যেও সংক্রমণ কমেছে। তাদের মধ্যে সংক্রমণ এখন নেই বললেই চলে।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছেন ২৫২ জন চিকিৎসক, ৫৮০ জন নার্স ও ১৫২ জন স্বাস্থ্যকর্মী। এখন পর্যন্ত ১২৩ জন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২০ জনই প্রথম ঢেউয়ের সময়।
প্রথম ঢেউয়ের সময় ২৬৭ জন নার্স সংক্রমিত হলেও এবার ৫৭ জন। চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কতটা ঝুঁকিমুক্ত হয়েছেন, তা দুই ধাপের তুলনা করলেই স্পষ্ট।
টিকা কাজ করছে এমন ধারণার কথা উল্লেখ করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা পেয়েছেন। এটি নিশ্চিত করার কারণে এখন করোনা ওয়ার্ডে কাজ করলেও সংক্রমিত হচ্ছে কম।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. অধ্যাপক চিন্ময় কান্তি দাস বলেনকরোনা টিকা কাজ করছে। যারা দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এমন তথ্য নেই।