দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকার সার আত্মসাৎ, গুদাম রক্ষকের দেশত্যাগ

মায়ের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে ই-মেইলে মিথ্যা ছুটির আবেদন

হাবীবুর রহমান | সোমবার , ৪ মার্চ, ২০২৪ at ৭:১৮ পূর্বাহ্ণ

দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকার টিএসপি ও ডিএপি সার আত্মসাৎ করেন। এরপর মায়ের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে ইমেইলে একটি মিথ্যা ছুটির আবেদন করেন। একই দিন দেশত্যাগ করে পাড়ি দেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইয়ে। তিনি হলেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) চট্টগ্রামের গুদাম রক্ষক (সার) আল আমিন। তার এমন অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণার বিষয়টি নজরে পড়লে কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক গুদামটি সিলগালা করে দেয়। একজন যুগ্মপরিচালককে (সার) আহ্বায়ক করে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্ত শেষে কমিটি প্রতিবেদনও দাখিল করেছে। যেখানে দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকার টিএসপি ও ডিএপি সারের ঘাটতির বিষয়টি উঠে আসে।

দুদক সূত্র জানায়, সার আত্মসাতের এই ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পরবর্তী গত সপ্তাহে গুদামরক্ষক আল আমিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়১ এর উপপরিচালক (সংযুক্ত) মো. ফজলুল বারী মামলাটি দায়ের করেন। গতকাল তিনি আজাদীকে বলেন, সার আত্মসাৎ পরবর্তী মায়ের অসুস্থতার কথা বলে ইমেইলে মিথ্যা ছুটির আবেদন করে আলআমিনের দেশ ত্যাগের বিষয়টি ইমিগ্রেশন বিভাগ নিশ্চিত করেছে। মামলার তদন্ত কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তদন্তে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে নেয়া হবে। দুদক প্রধান কার্যালেয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে আল আমিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আদালত সূত্র জানায়, অসৎ উদ্দেশ্যে গুদাম থেকে সার পাচারের মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আল আমিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএডিসি চট্টগ্রামের সার গুদাম টিজিএ এর গুদামরক্ষক আল আমিন অসৎ উদ্দেশ্যে গত বছরের ২৪ মার্চ কর্তৃপক্ষ বরাবরে মায়ের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে ইমেইলে একটি মিথ্যা ছুটির আবেদন করেন। একইদিন তিনি দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন। বিষয়টি নজরে আসেল বিএডিসি কর্তৃপক্ষ উক্ত গুদামটি যথাযথভাবে সিলগালা করে দেয়। যুগ্মপরিচালক (সার) চট্টগ্রামকে আহ্বায়ক করে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট ১টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি একই বছরের ২৮ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৩৬.৫৮৫ মেট্রিক টন টিএসপি সার যার মূল্য ৯০ লাখ ১২ হাজার ৮৯৯ টাকা ও ১৯১.৭৬৫ মেট্রিক টন ডিএপি সার যার মূল্য ১ কোটি ৯৫ লাখ ৪৭ হাজার ৮৭৬ টাকাসহ মোট ২ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার ৭৭৬ টাকার ঘাটতি পাওয়া যায়। যা গুদাম রক্ষক আসামি আলআমিন আত্মসাৎ করেন এবং কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে মায়ের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে মিথ্যা ছুটির আবেদন দিয়ে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন। এজাহারে বলা হয়, গুদাম রক্ষক হয়েও গুদামের সার আত্মসাৎ করে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ৪২০ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫() ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন আল আমিন।

দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু আজাদীকে বলেন, আল আমিনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার এজাহার আদালতে এসেছে। এখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

আদালত সূত্র জানায়, সার আত্মসাৎ ঘটনা পরবর্তী বিএডিসি কর্তৃপক্ষ আল আমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে এবং তার বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলাও রুজু করেছে।

উল্লেখ্য, আল আমিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ধরিয়াচর এলাকার মো. মোকাররম হোসেনের ছেলে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিবির তিন সদস্য প্রত্যাহার তদন্ত টিম গঠন
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাইম ব্যাংক এমডির কাছে ব্যাখ্যা তলব আদালতের