চট্টগ্রাম মহানগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়কের বারিকবিল্ডিং হতে কাস্টমস মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের দুর্ভোগ কাটছে না। নগরীর বাণিজ্যিক এলাকাগুলো থেকে বিমানবন্দরসহ বন্দর, কাস্টমসে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক হচ্ছে বারিকবিল্ডিং বিমানবন্দর সড়ক। সড়কটির বারিকবিল্ডিং হতে কাস্টমস মোড় অংশে শত শত গর্ত ও ধুলোয় নাভিশ্বাস উঠছে ব্যবহারকারী লোকজনের। ভুক্তভোগী সকলের প্রশ্ন দুই কিলোমিটার সড়কটির দুর্ভোগ শেষ হবে কবে?
জানা যায়, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বেশিরভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দরকে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন বলা হয়। জাতীয় রাজস্ব আয়ের প্রায় ১২-১৫ শতাংশ আয় হয়ে থাকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হতে। সারাদেশের জ্বালানি আমদানি ও বিপণন নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন থেকেই। নগরের একপ্রান্তে রয়েছে বিমানবন্দরও। তাছাড়া রয়েছে দুটি বৃহৎ ইপিজেড। বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস হাউস, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনসহ দুই ইপিজেডে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বারিক বিল্ডিং হতে বন্দর থানা পর্যন্ত সড়কের একপাশে চলা দায়। অসংখ্য গর্ত ছাড়াও পাশের নির্মাণাধীন ড্রেনের মাটিও স্তূপ করে রাখা হয়েছে সড়কের উপর। দুই, তিন ও চার নম্বর গেইট দিয়ে বন্দরে যাতায়াতকারী পণ্যবাহী গাড়িও অপেক্ষা করে রাস্তার একপাশে। শত শত গর্ত, বাতাসে ছড়ানো ধুলো বাদে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে কাহিল হতে হচ্ছে লোকজনকে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বন্দর ও কাস্টমস হাউজে যাতায়াতকারী ব্যবসায়ী, আমদানি-রপ্তানি খাতের লোকজনদের।
এবিষয়ে তরুণ ব্যবসায়ী ও জুনিয়র চেম্বার চট্টগ্রামের সাবেক প্রেসিডেন্ট গিয়াস উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা হতে আমদানি-রপ্তানি নির্ভর ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত বন্দর ও কাস্টমস হাউজে যেতে হয়। কিন্তু বারিকবিল্ডিং হতে কাস্টমস মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার যেতে এক থেকে দেড় ঘন্টার যানজটে পড়তে হয়। অসংখ্য গর্তের পাশাপাশি রয়েছে ধুলোর ভোগান্তিও। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে চাইবো, যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে সড়কটির মেরামত কাজ দ্রুততম সময়ে শেষ করা হউক। তাছাড়া সড়কটিতে যানজট দূর করতে নগর ট্রাফিক বিভাগের সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত। প্রয়োজনে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে।’ চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘কয়েকমাস ধরে বারিকবিল্ডিং-কাস্টমস মোড় পর্যন্ত সড়কটির বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিমানবন্দর, বন্দর ভবন, কাস্টমস, শিপিং কর্পোরেশন, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ছাড়াও চট্টগ্রামের বড় দুটি ইপিজেডে যাতায়াতের জন্য একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে এই সড়কটি। চট্টগ্রাম বন্দরের ১নং গেইট থেকে সল্টগোলা ক্রসিং সিসিটি গেইট পর্যন্ত দুর্বিসহ যানজট তৈরি হয়। সড়কটির কারণে গণপরিবহন ও পণ্যপরিবহন সবগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া পতেঙ্গা এলাকার কোন মুমূর্ষু রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনতে যানজটের কারণে প্রাণহানির শংকা অনেক বেড়ে যাবে। সড়কটিতে অসংখ্য গর্ত ও ধুলাবালির কারণে স্থানীয় লোকজন যাতায়াতে খুবই দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বারিক বিল্ডিং হতে সল্টগোলা পর্যন্ত সড়কটিতে আমাদের প্রস্তাব ছিল বন্দর থেকে পাঁচটি এক্সেস রোড বের করে দেয়ার। তাহলে বন্দরে যাতায়াতকারী গাড়িগুলো সড়কে নামবে না। তাছাড়া বর্তমানে বারিকবিল্ডিং থেকে বিমানবন্দরমুখী সড়কটিতে একটি মাত্র লেইন। সড়কটি শুধু চট্টগ্রামের নয়, পুরো দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রামের মানুষের একমাত্র সড়কও এটি। একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে আগ্রাবাদে আসতে যদি কোন কারণে ঘন্টা দুই ঘন্টা যানজটে পড়তে হয়, তাতে আমাদের দেশের জন্য নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করবে। তাই যে কোন কিছুর বিনিময়ে হলেও কম সময়ের মধ্যে সড়কটি মেরামত করার পদক্ষেপ নিতে হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিডিএ’র এক কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বারিকবিল্ডিং হতে কাস্টমস মোড় পর্যন্ত সড়কের এক পাশের নালা নির্মাণ কাজটি সেটা খুবই ধীরগতিতে এগুচ্ছে। প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঠিকাদার সিলেকশন ভাল না হওয়ায় কাজে ধীরগতি হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হচ্ছে ওই দুই কিলোমিটার সড়ক। কাজটি ধীরগতিতে হওয়ায় সিডিএ’র ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে, তেমনি সরকারেরও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।’
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘নগরীর জলাবদ্ধতা নিসরনে মেগাপ্রকল্পটির কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আমরা শুধু টাকা দিচ্ছি। নগরীর বারিকবিল্ডিং হতে কাস্টমস মোড় পর্যন্ত প্রকল্পের একটি ড্রেনের নির্মাণ কাজ চলছে। কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য আমরা অনুরোধ করবো।’
চসিক প্রশাসক খোরশেদুল আলম সুজন বলেন, বারিক বিল্ডিং মোড় হতে বন্দর থানা পর্যন্ত সড়কটির একপাশে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের নালা নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার কাস্টমস থেকে বারিকবিল্ডিংমুখী সড়কটির বন্দর ভবনের সামনে ওয়াসা কাজ করছে। কাজগুলো দ্রুত শেষ হলে, সড়কটি মেরামত করতে আমাদের মাত্র এক থেকে দুই দিন লাগবে। আমি নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে দিনরাত কাজ করছি। সাংবাদিকরা আমাকে সহযোগিতা দিচ্ছেন। যেখানে দুর্ভোগে কথা উঠছে সেখানে আমি গিয়ে হাজির হচ্ছি। আশা করি, সড়কটি মেরামত করে লোকজনের দুর্ভোগ লাঘব করতে পারবো।’