ফটিকছড়ির পাইন্দং হাইদচকিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী মিশু আকতার (১৭) ও নিশা মনি (১৮)। দুজনই মানবিক বিভাগের ছাত্রী। দুজনই পাইন্দং ইউনিয়নের শ্বেতকুয়া এলাকা থেকে পায়ে হেঁটে দুই কিলোমিটার দূরে স্কুলে আসা-যাওয়া করত। সবসময়ই যেকোনো কাজ একসঙ্গেই করত তারা। পড়ালেখা থেকে শুরু করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া সবকিছুই। গতকাল বুধবার সকালে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের দশম অ্যাসাইন্টমেন্ট জমা দিতেও স্কুলে যায় এক সাথে। ১১তম অ্যাসাইন্টমেন্ট গ্রহণ করে বাড়ি ফিরছিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। এমন সময় ধানবাহী দ্রুতগামী চাঁদের গাড়ির ধাক্কায় নিহত হয় দুজন। দুপুরে ফটিকছড়ি থানায় নেয়া হয় দুজনের লাশ। সেখানে ভিড় করে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ফটিকছড়ি থানায় এতো মানুষ আর কোনদিন ভিড় করেনি। মিশুর বাবা আবুল বশর আর তার চাচা যুবলীগ নেতা আইয়ুবের কান্নার রোল থামানো যাচ্ছে না কোন ভাবে। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় চেয়ারম্যান একেএম সরোয়ার স্বপনের আলোচনাক্রমে বিনা ময়না তদন্তে লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। তখন দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ দুটি নেয়া হয় পাইন্দং শ্বেতকুয়া গ্রামে। সেখানে দেখা যায় আরেক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।
বলীর বাপের বাড়ির প্রবাসী লোকমান এবং গৃহিনী নূর বানু দম্পতির ২ ছেলে ও এক মেয় সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় নিশা মনি। তার বড় ভাই নোমান এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ছোট ভাই চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। তার মা নূর বানু বিলাপ করতে করতে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। কিছুদিন পরে তার বাবা লোকমান মস্কো থেকে দেশে ফিরে মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা দেখার কথা। নিশা মনির মৃত্যুর খবর পেয়ে আজ রাতে জরুরি বিমানে দেশে ফিরছেন বলে জানান, তার চাচা মো. হারুন। অপর দিকে পাইন্দং মোল্লার বাড়ির ব্যবসায়ী আবুল বশর ও হাসিনা আকতার দম্পতির প্রথম মেয়ে মিশু আকতার। তাকে হারিয়ে পাগল এই দম্পতি।
হাইদচকিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবিএম গোলাম নূর বলেন, দুই ছাত্রী ছিল শান্তশিষ্ট। লেখা পড়ায়ও ভালো ছিল। তাদের এমন নির্মম মৃত্যু কোনভাবে মেনে নিতে পারছি না। আমার নিষ্পাপ দুটি ছাত্রীর হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।












