চলতি বর্ষা মৌসুমে নগরে ক্ষতি হওয়া সড়ক সংস্কার কাজ দুই কারণে গতি পাচ্ছে না। কারণ দুটি হচ্ছে– টানা বৃষ্টি এবং বিটুমিন স্বল্পতা। এই অবস্থায় নগরে বাড়ছে ভাঙা সড়কের পরিমাণ। সাথে বাড়ছে নগরবাসীর দুর্ভোগও।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নিজস্ব অ্যাসপল্ট প্ল্যান্ট থেকে তৈরি মিক্সার (ইট, বালি, সিমেন্টে, বিটুমিনের মিশ্রণ) দিয়ে বর্ষায় ক্ষতি হওয়া সড়কের ছোট ছোট গর্ত ভরাট করে থাকে। সংস্থাটির ভাষায় এটি প্যাঁচওয়ার্ক। চলতি মৌসুমে প্যাঁচওয়ার্ক করার জন্য ভাঙা সড়কের একটি তালিকাও করে চসিকের প্রকৌশল বিভাগ। এরপর সংস্কার কাজ শুরু করলেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংস্কার কাজ বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তীতে সরকার পতনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্যাঁচওয়ার্ক–এর উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ায় জন্য সে উদ্যোগও থমকে যায়। আবার চসিকে রয়েছে বিটুমিন স্বল্পতা।
চসিকের প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, বিটুমিন রয়েছে এমন সড়ক নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ পানি। বলা যায় বিটুমিনের শত্রু পানি। কোনো কারণে সড়কে পানি জমে থাকলে এবং এর ওপর দিয়ে ভারী গাড়ি চলাচল করলে সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই বৃষ্টির মধ্যে বিটুমিন দিয়ে সংস্কার কাজ করা সম্ভব না। আবার চসিকের বর্তমানে যে পরিমাণ বিটুমিন মজুদ আছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ চারদিন কাজ করা যাবে। ইস্টার্ন রিফাইনারির প্ল্যান্ট বন্ধ থাকায় নতুন করে বিটুমিনও সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় বৃষ্টি বন্ধ হলেও সংস্কার কাজে গতি আসা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী শাহীন–উল–ইসলাম আজাদীকে বলেন, বৃষ্টির মধ্যে তো বিটুমিন দিয়ে সংস্কার করা যাবে না। তাই ইট বিছিয়ে কোনো মতে গর্ত ভরাট করে যান চলাচলের উপযোগী করে দিচ্ছি। বৃৃষ্টি কমলে বিটুমিন দিয়ে কাজ শুরু করব। বিটুমিন স্বল্পতার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, স্টোরে যা আছে তাতে চারদিন যাবে। ইস্টার্ন রিফাইনারি বন্ধ থাকায় সংগ্রহ আপাতত বন্ধ আছে। তবে চালু হলে সমস্যা হবে না।
এ প্রকৌশলী বলেন, বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া সড়ক সংস্কারে আমরা জুলাই মাসে কাজ শুরু করেছিলাম। এরপর কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় আরো খারাপ হয়ে গেছে। তাছাড়া মাঝখানে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে কাজ করা সম্ভব হয়নি।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ জুলাই ভাঙা সড়কের তালিকা করা হয়। তালিকা অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৬টি ওয়ার্ডে ১ লক্ষ ২১ হাজার ৮১৪ বর্গমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ বর্ষায়। নষ্ট হওয়া সড়কের প্রস্থ ১০ ফুট ধরলে ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ৪২ কিলোমিটার। পুরো শহরকে ৬টি অঞ্চলে ভাগ করে প্রস্তুতকৃত ওই তালিকা অনুযায়ী, ১নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী, ৩নং পাঁচলাইশ, ৩৬ নং গোসাইলডাঙ্গা, ২৬নং উত্তর হালিশহর এবং ৩৭নং মধ্য হালিশহর; এই পাঁচ ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক নেই। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ২ নম্বর অঞ্চলের অধীন ৫নং মোহরা ওয়ার্ডে। যার পরিমাণ ২৫ হাজার ৯৭৪ বর্গমিটার। এছাড়া ৪নং অঞ্চলের অধীন দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে সবচেয়ে কম ৪১ দশমিক ৮২ বর্গমিটার সড়ক ক্ষতি হয়।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৪ জুলাই থেকে ক্ষতি হওয়া সড়কগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করে সংস্থাটি। এরপর ১৫ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তাপ বাড়তে থাকে নগরে। তখন কাজে গতি কমে। এরপর ২১ থেকে ২৩ জুলাই তিনদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। জারি করা হয় কারফিউ। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় সংস্কার কাজ। এর মধ্যে কয়েক দফা বৃষ্টিও হয়েছে। ফলে সংস্কার কাজে আরো বেগ পেতে হয় চসিককে। একইসঙ্গে বৃষ্টিতে নতুন করে ক্ষতি হয়েছে বহু সড়কের।
এদিকে গতকাল বড় পোল, সদরঘাট স্ট্রান্ড রোড, মুরাদপুর, ডিসি রোড, ডিসি রোড চেয়ারম্যান ঘাটসহ বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শনে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বিটুমিন, ইট, বালি ওঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট–বড় গর্ত। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে । কিছু কিছু এলাকায় দেখা গেছে, সৃষ্ট গর্তের অধিকাংশে জমে আছে পানি। দূর থেকে মনে হয় মিনি পুকুর। এসব গর্তে আটকে যাচ্ছে বিভিন্ন যানবাহনও। এসব গর্তও যান চলাচলে বাড়াচ্ছে ভোগান্তি। একইসঙ্গে দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়ছে।