তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “দৈনিক আজাদী পত্রিকা বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত পত্রিকাগুলোর মধ্যে একটি। ঢাকার অনেক পত্রিকার চেয়ে দৈনিক আজাদী পত্রিকার সার্কুলেশন বেশি। এই কৃতিত্ব প্রথমত ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সাহেবের। তিনি দূরদৃষ্টি নিয়ে এই পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে যারা এই পত্রিকার হাল ধরেছেন তারা দীর্ঘদিন ধরে এই পত্রিকাকে অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালনা করে আসছেন।”
তিনি বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম যখন অন্য পত্রিকা ছাপেনি তখন দৈনিক আজাদী পত্রিকা ছেপেছে। সেজন্য দৈনিক আজাদী পত্রিকা পরিবার গর্ব করে বলে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা। আজাদী শুধু পত্রিকা নয়, একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে।”
আজ শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ‘মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার, দৈনিক আজাদী এবং গণতন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য শেষে সাংবাদিকরা সৌদি আরবের জেদ্দায় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র এক গোপন বৈঠকের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেকের ৫৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্বাধীন সংবাদপত্র পাঠক সমিতি এই সেমিনারের আয়োজন করে। বাংলানিউজ
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশের সংবাদপত্র যে ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে অনেক উন্নত দেশেও কিন্তু সংবাদপত্রের এমন স্বাধীনতা নাই। ইউকে’তে ১৬৭ বছরের পুরনো পত্রিকা ছিল ‘নিউজ অভ দ্য ওয়ার্ল্ড’। সেটি পৃথিবীর বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ছিল একসময়। সেই পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। একটি ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে মামলা হয়। মামলার পর তাদের ওপর বিরাট জরিমানা করে আদালত। সেই জরিমানা দিতে না পেরে কোম্পানি পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “একজন এমপি’র বিরুদ্ধে ভুল বা অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে বিবিসি’র পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। ইউকে এবং কন্টিনেন্টাল ইউরোপে হরহামেশা ভুল এবং অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে পত্রিকা এবং গণমাধ্যমকে জরিমানা দিতে হয়। আমাদের দেশে সেটি কখনো হয়নি। সংবাদপত্র এ সমস্ত কারণে বন্ধ হয়নি। সেজন্য বলছি অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে।”
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, “আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন বাংলাদেশে সংবাদপত্রের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪০০। এখন বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদপত্র সাড়ে ১২০০। তখন অনলাইন পত্রিকা ছিল হাতে গোনা কয়েকটি। এখন কয়েক হাজার অনলাইন পত্রিকা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। প্রাইভেট টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ১৯৯৬ সালে। ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন প্রাইভেট টেলিভিশন ছিল ১০টি। এখন ৩০টি প্রাইভেট টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে, ৪৫টি প্রাইভেট টেলিভিশনের জন্য লাইসেন্স দেওয়া আছে। এর বাইরে ৪টি সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চালু আছে। সংবাদমাধ্যমের এই যে এক্সপোনেনশিয়াল গ্রোথ সেটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে।”
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “প্রকৃতপক্ষে যখন করোনাভাইরাসে পৃথিবী স্তব্ধ, মানুষ শঙ্কিত ভবিষ্যৎ নিয়ে, সেই সময়ে বিএনপি জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের বৈঠক করে বেড়াচ্ছে। সেটির প্রকাশ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বৈঠক যা প্রচণ্ড নিন্দনীয়।”
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে ক্রমাগতভাবে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে বিএনপি। পাকিস্তানি গোয়েন্দা ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তাদের যে দহরম-মহরম সেটা বহু পুরনো।
এর প্রমাণ হচ্ছে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে বৈঠক।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা জানেন ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বিএনপিকে ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। এটি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান আদালতে জবানবন্দিতে বলেছেন। সুতরাং তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচন আরও অনেক দেরি আছে, নির্বাচনের বাকি আরও সাড়ে তিন বছর।”
স্বাধীন সংবাদপত্র পাঠক সমিতির সভাপতি এসএম জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক প্রমুখ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি অতীতে ষড়যন্ত্রের পথ অবলম্বন করে যে এগুতে পারেনি তারা নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে সক্ষম। না হলে আওয়ামী লীগকে মানুষ পর পর রায় দিয়ে তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাতো না। তাই আমি বিএনপিকে অনুরোধ জানাব, ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে মানুষের পাশে দাঁড়ান, এই ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না।”