২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় পানছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে পানছড়ি উপজেলাকে একমাত্র জিপিএ-৫ উপহার দিয়েছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী দীপা নন্দী। পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায়ও তার ঝুলিতে জমা পড়েছিল জিপিএ-৫।
মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকেও ফের ঈর্ষান্বিত সাফল্য পেয়েছেন দীপা নন্দী। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় পানছড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজের ব্যবসা শাখা থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আর অভাব দমাতে পারেনি তাকে। মামা-মামির অভাবের সংসার, এর মাঝে জিপিএ-৫ পেয়েছেন অদম্য এই তরুণী। এসএসসির পর এবারও পুরো উপজেলায় এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া একমাত্র শিক্ষার্থী তিনি।
জানা গেছে, দীপার মা মানসিক ভারসাম্যহীন। বাবা থেকেও না থাকার মতো। কোনো খোঁজখবর রাখেন না। ছোটবেলা থেকেই মামা-মামির অভাবের সংসারে বড় হয়েছেন। তাদের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহে এ পর্যন্ত এসেছেন দীপা। সব বাধা ঠেলে স্বপ্নের পথ ধরে ছুটে চলেছেন। অভাবে পিছুটান থাকলেও চালিয়ে গেছেন পড়ালেখা। আর অধ্যাবসায়ের ফলে বারবার ঈর্ষান্বিত সাফল্যও পেয়েছেন।
দীপার সাফল্যে উচ্ছসিত তার মামি চুমকি বিশ্বাস বলেন, কঠোর অধ্যবসায়ের কারণেই দীপার সাফল্য। কিন্তু ভালো রেজাল্টের পর হতাশা বেড়েছে। যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা সেখানে তাকে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। তবে দীপাকে ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য বিত্তবানদের সহায়তা চান তিনি। কারো সহায়তা ছাড়া দীপার স্বপ্ন অধরা রয়ে যাবে-এমন শঙ্কা প্রকাশ করে মামা সঞ্জয় দাশ বলেন, স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়ে দীপা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা বাড়াবে। দীপার ইচ্ছে ব্যাংকার হওয়ার। তবে তার স্বপ্নপূরণে বড় বাধা আর্থিক অনটন।
পানছড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা বলেন, দীপা নন্দী অত্যন্ত মেধাবী। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও পরিশ্রমী। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায়ের ফলে সে বারবার সাফল্য ছুঁয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
দীপার উচ্চ শিক্ষার জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি বলেন, দীপার এমন সাফল্য একইসাথে আনন্দের ও অনুকরণীয়। সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে সে আরও ভালো করবে। আমরা সবসময় তার পাশে থাকব।












