চট্টগ্রাম ওয়াসার একজন মিটার পরিদর্শক ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার মিটারের তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করছেন। মোট ৪২ জন মিটার পরিদর্শক ওয়াসার প্রায় ৭৮ হাজার গ্রাহকের বিল তৈরি করেন। এসব কারণে ওয়াসার উৎপাদিত পানি ব্যবহারের সঠিক হিসাব না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই মিটার পরিদর্শকদের কারণে ওয়াসার সিস্টেম লস জিইয়ে রয়েছে। অবৈধ সংযোগ, পুরোনো পাইপ লাইনে পানি অপচয় এবং বিলে হেরফেরের কারণে ওয়াসার সিস্টেম লস–ওয়াসার আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ওয়াসার সিস্টেম লস অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. মাকসুদ আলম। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার তিনটি মেগা প্রকল্প ও গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে দৈনিক গড়ে পানি উৎপাদন হয় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ কোটি লিটার। আরও একটি মেগা প্রকল্প (বোয়ালখালী ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প) থেকে পানি উৎপাদনের পথে। গত জুন মাসে প্রকাশিত সর্বশেষ এমআইএস প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মোট উৎপাদিত পানির ২৫ থেকে ২৮ শতাংশ সিস্টেম লস বা নন–রেভেনিউ ওয়াটার। গত বছর এটি ছিল ২৯ শতাংশ। এ হিসেবে দৈনিক নন–রেভেনিউ পানির পরিমাণ প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি লিটার, যা পরিমাণের দিক থেকে মোহরা পানি সরবরাহ প্রকল্পের উৎপাদনের চেয়েও বেশি।
ডিজিটাল মিটারের মাধ্যমে বিল হিসাব করা গেলে পানির অপচয় ও অবৈধ বিক্রি রোধ করা যাবে বলে আশা করছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। এখনো বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখে বিল হিসাব করে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশলী ও রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ওয়াসায় গ্রাহক সংখ্যা ৭২ হাজার। মিটার পরিদর্শক রয়েছেন ৪২ জন। একজন মিটার পরিদর্শক ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার মিটারের তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব ও বিল তৈরির দায়িত্ব পালন করেন। যা অনেক কঠিন। বিলিং সিস্টেমকে অটোমেশন করার লক্ষ্যে গৃহীত পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পানির অপচয় রোধ হবে এবং ওয়াসার রাজস্বও বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী।
এই পাইলট প্রকল্পের আওতায় নগরীর দুটি জোনে ৩ হাজার স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে বলে গতকাল আজাদীকে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. মাকসুদ আলম। তিনি বলেন, নগরীর চান্দগাঁও ও আগ্রাবাদ এলাকায় প্রথম ধাপে ৩ হাজার স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ চলছে। প্রথমে চান্দগাঁও এলাকায় বাসানো হচ্ছে। নতুন পাইপ লাইনের কাজ এবং স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ শেষ হলে সিস্টেম লস একেবারেই সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। এখন ওয়াসার ২৫ শতাংশ সিস্টেম লস আছে বলে জানান তিনি। প্রধান প্রকৌশলী মো. মাকসুদ আলম বলেন, আগে সিস্টেম লস আরো বেশি ছিল। আমরা দিন দিন কমিয়ে আনছি। নগরীতে এখনো ৩শ’ কিলোমিটারের মত পুরোনো পাইপ লাইন রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নতুন পাইপ লাইন বসনো হবে নগরীতে। প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে নতুন পাইপ লাইন বসানোর জন্য। প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা কমিশনে আছে। নতুন পাইপ লাইন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে গ্রাহকরা অনেক সুবিধা পাবেন। সিস্টেম লসও একেবারে কমে আসবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প–১ থেকে প্রতিদিন ১৪ কোটি লিটার, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প–২ থেকে প্রতিদিন ২৪ কোটি লিটার, মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ৭ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়াও গভীর নলকূপ থেকে দৈনিক ৫ থেকে ৬ কোটি লিটার উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে পানির চাহিদা বেশি থাকলে গভীর নলকূপ থেকে উৎপাদন করা হয়। আর চাহিদা কম থাকলে গভীর নলকূপ থেকে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয় বলে জানান ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।