দিনে-রাতে চলছে বালু তোলার অর্ধশত মেশিন

বেপরোয়া সিন্ডিকেট, পাল্টে যাচ্ছে মীরসরাইয়ের সীমান্তবর্তী এলাকার মানচিত্র

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ২২ মে, ২০২১ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে মীরসরাই উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী এপারের এলাকার মানচিত্র পাল্টে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট এতই বেপরোয়া যে, তারা কাউকে পরোয়া করছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, মীরসরাই উপজেলার ১ নং করেরহাট ইউনিয়নের অলিনগর গ্রামের ফেনী নদীর অংশে দিনে-রাতে বালু তোলার প্রায় অর্ধশত মেশিন চলছে। গ্রামবাসীর জমি, গাছপালা সব একে একে নদীতে বিলীন হচ্ছে। বালুখেকোরা পতিত জমির বালু মেশিন দিয়ে তুলে বিক্রি করছে। তবে কার জমি কে নদীতে ফেলে দিল, কে অভিযোগ করল, সেদিকে কর্ণপাত করার সময় নেই। বালু উত্তোলনকারীদের রয়েছে পৃথক সিন্ডিকেট।
অলিনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, শাহরিয়ার হোসেন ও আরিফুল ইসলাম জানান, নদীর পাড়ে আমাদের ১৬ গণ্ডার জমি রয়েছে। কয়েক বছর আগে সেখানে কিছু বনজ গাছের বাগান করা হয়েছে। স্থানীয় বালু উত্তোলনকারী নিরু মেম্বার, আজাদ, শহিদুল্লাহ মাস্টার, আজাদ মেম্বার, ছোট কামরুল ও ছোট মামুনের সিন্ডিকেট আমাদের জমির নিচে এমনভাবে মেশিন দিয়েছে, এক মাসের মধ্যে প্রায় ৪ গণ্ডা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট অংশও চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। একইভাবে অনেকের জমি এভাবে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ওদের কাছে এই বিষয়ে প্রতিকার চেয়েও পাইনি। আবার অনেকে প্রতিকার চাওয়ারও সাহস পাচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা গেছে, যেখানে বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের মেশিনগুলো চলছে তার অদূরে ভারত সীমান্ত। এর পার্শ্ববর্র্তী স্থানে রয়েছে বিএসএফ আর এপারে বিজিবি ক্যাম্প। বাংলাদেশ অংশে বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের ভূমি ধ্বংস করার বিষয়ে বিএসএফ ইতিমধ্যে নদী অংশে সবুজ ও লাল ড্রাম বসিয়ে সিগন্যাল দিয়েছে, যেন মেশিনের কোনো পাইপ ভারতের অংশে যেতে না পারে। তাই নদীর তলদেশে বালু উত্তোলনের পাইপগুলো সব বাংলাদেশ অংশে চলমান। গতকাল এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উক্ত স্থানে নদী থেকে জমি ভেঙে পড়া স্থানগুলো থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, গত চৈত্র মাসের পর উক্ত এলাকার বালু উত্তোলনে পুনরায় ইজারা হয়নি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত নিরু মেম্বার বলেন, সব মেশিন আমার নয়। আমি একা নই, অন্যরাও করছে।
আজাদ মেম্বার বলেন, আমাকে সিন্ডিকেটে রেখেছে। তবে আমি সবকিছু অবগত নই।
উক্ত ঘাটের ইজারাদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম বলেন, আমি ইজারাদার হলেও শুধু রয়েলটি ব্যবস্থাপনা করি। আমার ইজারা সময়কালীন উত্তোলন করা বালু রয়ে গেছে সেখানে। আমি নিরু মেম্বারকে এই বিষয়ে সমাধান করতে বারবার তাগিদ দিয়েছি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, এই বিষয়ে প্রশাসন উদ্যোগ দরকার।
মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুর রহমান বলেন, মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়েছি। শীঘ্রই এই বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলামায় প্রবাসীর ঘরে স্ত্রী ও দুই মেয়ের লাশ
পরবর্তী নিবন্ধঅ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিতে রাজি হয়েছে আমেরিকা