বৃহত্তর চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। তবুও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালকে এখনো শেষ ভরসা মানেন আমজনতা। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী এখানে চিকিৎসা সেবার জন্য আসেন। বিপুল সংখ্যক রোগী ও স্বজনদের ঘিরে হাসপাতালটিতে দালালদের উৎপাতে টেকা দায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ধরা পড়ছে দালালদের কেউ কেউ। তবুও এদের দৌরাত্ম্য কমানো যাচ্ছে না। ফলে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে সেবা নিতে আসা মানুষকে।
দালালদের উৎপাত কমাতে আনসার সদস্য, পুলিশ ও ওয়ার্ড মাস্টারদের সমন্বয়ে একটি টহল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে বলে জানালেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। তিনি বলেন, আমাদের দৃশ্যমান কার্যক্রম চলছে বলেই দালালদের ধরা হচ্ছে। সার্বিক বিষয় মনিটরিং করার জন্য হাসপাতালে সিসিটিভির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়াতে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। দালালের খপ্পরে পড়লে হেল্পলাইনে ফোন করে সহায়তা পাচ্ছে। এটি সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসছে। আমাদের একার পক্ষে এটি কমিয়ে আনা যাবে না। সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে।
সর্বশেষ গতকাল সকালে চমেক হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৩ দালালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা হলেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার তেলপাই ৪ নং মোকাড়া ইউনিয়নের এবাইদুল হকের ছেলে সোহেল রানা (২৪), একই জেলার মনোহরগঞ্জ থানার মনোহরগঞ্জ বাজার ইউনিয়নের ইফতেখার আহমেদের ছেলে ইফতিয়াজ আহমেদ (২১) ও বোয়ালখালী উপজেলার খরমদি ইউনিয়নের কেরানী বাজারের মো. আইয়ুবের ছেলে মো. ইমন (২৪)। তিনজনই নগরীর বেসরকারি ফার্মেসির কর্মচারী।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক আজাদীকে বলেন, দালালদের আটক করতে নজরদারি বাড়ানো হলেও তাদের থামানো যাচ্ছে না। সর্বমেষ মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করা অবস্থায় তিন দালালকে আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের পাঁচলাইশ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে আসা রোগীদের আইনি নিরাপত্তা থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসক ও নার্সদের সহায়তা নিয়ে আমরা প্রায় সময় অভিযান চালিয়ে আসছি। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে দালালদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আশা করছি, রোগীদের সহায়তা পেলে এটি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে চমেক হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া, বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের পরীক্ষা করতে বাধ্য করা এবং নির্দিষ্ট ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য করাসহ নানা কার্যক্রমে জড়িত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাইনী ওয়ার্ডের এক স্বাস্থ্যসেবী বলেন, প্রতিদিন গাইনী ওয়ার্ডে একশ থেকে দেড়শ রোগী ভর্তি হন। শারীরিক জটিলতার মুখে এসব রোগীর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। তবে বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা রোগীর স্বজনরা এই বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না। এই সুযোগে তারা দালালের খপ্পরে পড়ে যায়। পছন্দের দোকান থেকে ওষুধ এনে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না।