দালাল ছাড়া কাজ হয় না বিআরটিএ কার্যালয়ে

কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশের অভিযোগ ভুক্তভোগীদের সেবাগ্রহীতাদের অসচেতনতাই দায়ী : বিআরটিএ

ঋত্বিক নয়ন | শুক্রবার , ৪ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বিআরটিএ কার্যালয়ে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবা প্রত্যাশীরা। দালালদের দৌরাত্ম্যে নানাভাবে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। দালাল ছাড়া কোনো কাজই হচ্ছে না চট্টগ্রামের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে। গাড়ির ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নতুন গাড়ির লাইসেন্সসহ সব কিছুতেই নির্ভর করতে হয় দালালদের উপর। আর দালাল ছাড়া সরাসরি কাজ করতে চাইলে ধীরগতিসহ পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে কয়েকটি দালাল চক্র প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বিষয়টি অস্বীকার না করে বিআরটিএ কর্মকর্তাগণ জানান, আমরা দালালদের বিরুদ্ধে প্রায় সময়ই অভিযান চালাচ্ছি। সর্বশেষ বুধবার বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে কমল কান্তি দে নামে এক দালালকে ধরেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার বিকেলে তাকে আটক করা হয়। পরে তার মোবাইলের কল লিস্ট চেক করে প্রমাণ মিলেছে বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজশ। কমল রাউজান উপজেলার রবীন্দ্র লাল দে’র ছেলে।

বিআরটিএ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, বিআরটিএ চত্বরে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোর সময় হাতেনাতে তাকে আটক করা হয়। পরে তার কাছ থেকে দুটি ড্রাইভিং লাইসেন্স ও একটি মালিকানা কাগজ জব্দ করা হয়। তাকে দশ দিনের কারাদণ্ড দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আটক দালাল কমল অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে যে, সে দালাল হিসেবে দ্রুত কাজ করে দেবে বলে সাহায্য প্রার্থীদের থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করে থাকে।

হাটহাজারী উপজেলার বালুছড়া এলাকার বিআরটিএ কার্যালয়ে প্রতিদিন ১০১২ ধরণের সেবা নিতে আসে পাঁচশ’র বেশি সেবাগ্রহীতা। গাড়ির নিবন্ধন, মালিকানা বদলি, ফিটনেস সনদ, নতুন লাইসেন্স ও নবায়ন, ডিজিটাল নম্বর প্লেটসহ মোটরযানের নানা কাজের জন্য গিয়ে ভোগান্তির অভিযোগ রয়েছে। তবে বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রাহকদের অসচেতনতার কারণে দালালদের খপ্পরে পড়েন তারা। ছোট একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ করে জীবন চলে সেলিম রেজার। কম খরচ আর দ্রুত সময়ে যাতায়াতের জন্য মোটর সাইকেল কিনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বিআরটিএ বালুছড়া অফিসে টাকা জমা দেন ২ মাস আগে। কিন্তু অফিসে এসে জানতে পারেন তার ডেলিভারির সময় আরো ৩ মাস বাড়িয়েছে। টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে না করায় হয়রানি বেড়েছে, এমন অভিযোগ তার।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শত শত সেবাগ্রহীতা প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছে বিআরটিএ অফিসে। কেউ রেজিস্ট্রেশন, কেউ মালিকানা পরিবর্তন আবার কেউবা গাড়ির ফিটনেস নিয়ে দিনের পর দিন ঘোরাঘুরি করছে এ রুমে সে রুমে। সময়মতো হচ্ছে না কাজ, আবার রাস্তায় বের হলে উল্টো পড়তে হয় পুলিশি হয়রানিতে।

চালক মালিকদের অভিযোগ, দালাল ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে গেলে নানা অজুহাতে কাগজপত্র বাতিল করে দেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অলি আহমদ বলেন, আপনি যদি ওদের নির্দিষ্ট লোকের (দালাল) মাধ্যমে যান এবং ওদের নির্দিষ্ট ফি (ঘুষ) অফিসিয়াল খরচের বাইরে দিয়ে ফেলতে পারেন তাহলে ওরা দ্রুত কাজ করে দেবে।

চট্টগ্রাম বিআরটিএ কার্যালয়ে সরব উপস্থিতি রয়েছে বেশকিছু দালাল চক্রের। এমন এক চক্রের সদস্যের সাথে কথা বলতে চাইলে দ্রুত কাজ আছে বলে চলে যায় সে। তবে বিআরটিএ কর্মকর্তারা, দালালের উৎপাত বাড়ার জন্য সেবাগ্রহীতাদের অসচেতনতাকে দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, গ্রাহকরা যদি আমাদের বিআরটিএতে নিজেরা সেবা নেয়ার জন্য আসে তাহলে অবশ্যই তারা ভোগান্তিতে পড়বেন না। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আমরা দালালদের উৎপাত প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রবল ঢেউয়ে ভেঙে যাচ্ছে মেরিন ড্রাইভ সড়ক
পরবর্তী নিবন্ধফেরিতে উঠার সময় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ল মোটর সাইকেল