দীর্ঘদিনের দাবি হলেও চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হয়নি। এটা কবে আলোর মুখ দেখবে সে বিষয়েও কিছু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অনেক দেশে মূল হাইকোর্ট বেঞ্চের পাশাপাশি সার্কিট বেঞ্চ রয়েছে। ন্যায় বিচার, সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন সময়ের দাবি বলছেন আইনজীবীরা। গত মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের অনুষ্ঠিত কর্মী সভাতেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোর্ট হিলের নতুন আদালত ভবন উদ্বোধনে এসে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরের বছরের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন বিষয়ে আগ্রহ পত্র দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতির কাছে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০২১ সালে তৎকালীন জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন আইনমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে কথা বলেন। তখন তাকে মন্ত্রী সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন বিষয়ে আশ্বাস দেন। এরপর ২০২২ সালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আইনজীবী মিলন মেলা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধান বিচারপতির সাথে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। এছাড়া চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবি আজকের না, অনেক আগে থেকেই এ দাবি রয়েছে। এরপরও কেন সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হচ্ছে না এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলব। এরপর এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে। আইনজীবীরা বলছেন, চট্টগ্রামের মন্ত্রী, এমপিরাও বিভিন্ন সময় চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন বিষয়ে কথা বলেছেন। বাণিজ্যিক রাজধানীর জনগণের এ দাবি এরপরও বাস্তবে রূপ নিচ্ছে এমনটা দেখতে পাচ্ছি না। অথচ এটি যৌক্তিক দাবি। এটি করা হলে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হবে। মামলার দীর্ঘসূত্রতা হ্রাস পাবে, কমবে ভোগান্তি। চট্টগ্রাম থেকে ক্রিমিনাল, সিভিল, এডমিরাল্টি, শুল্কসহ নানা বিষয়ে আইনী প্রতিকার পেতে চট্টগ্রাম বিভাগের জনগণের হাইকোর্টে যেতে হচ্ছে। এটি ভোগান্তির। অনেক সময় নষ্ট হয়। হাইকোর্টে বর্তমানে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮ টি মামলা রয়েছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সেক্রেটারি এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন বলেন, দেশে মোট মামলা ৪০ থেকে ৪৫ লাখ। এরমধ্যে শুধু হাইকোর্টে রয়েছে ৫ লাখ ৭৯ হা্জার ৬৮ টি মামলা। চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হলে চাপ কমে আসবে। ঢাকার মানুষ সহজে হাইকোর্টে যেতে পারছে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক রাজধানীর মানুষকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অনেক টাকা ফয়সা খরচ করে হাইকোর্টে যেতে হয়। বিষয়টি সংবিধানের সাথেও সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের একটি অফিস থাকবে। এছাড়া রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করবেন সেসব স্থান বা স্থানসমূহে সার্কিট বেঞ্চ বসবে।
আইনজীবী এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন বলেন, সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সকল নাাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট থাকবে। মৌলিক অধিকার বিষয়ে সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদেও সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে বিভাগীয় শহর। সর্ব বৃহত্তম বিভাগ চট্টগ্রাম বিভাগ। এসব বিবেচনায় নিয়ে চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি জানান, কাস্টম, ভ্যাট, ইনকাম ট্যাঙের বিষয়গুলোর অধিকাংশ মামলা চট্টগ্রামের। সেটি প্রায় ৭০ শতাংশ। আইনজীবীরা বলছেন, চট্টগ্রামে অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চাদপুর, লক্ষীপুর, কঙাবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটির জনগণের অনেক পথ পাড়ি দিয়ে হাইকোর্টে যেতে হয়। চট্টগ্রাম নগর এসব স্থানের জন্য কাছে। সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হলে গোটা অঞ্চল উপকৃত হবে। আদালতসূত্র জানায়, ১৯৮২ সালের ১ মে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ৬ টি হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়। পরে সেটি বাতিল হয়। সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে স্থায়ী বেঞ্চ বাতিল করা হয় জানিয়ে আইনজীবী নেতা এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন আজাদীকে বলেন, সংবিধানে বলা আছে, সার্কিট বেঞ্চের কথা, স্থায়ী বেঞ্চের কথা বলা হয়নি। এরশাদের সরকার স্থায়ী বেঞ্চ করেছিল এ জন্য সেটি বাতিল হয়। আমরা সংবিধানের আলোকে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের কথা বলছি। আমরা সেটির দাবিদার। আইনের শাসন ত্বরান্বিত করার জন্য চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হবে সে প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ১৬ মে (আজকে) প্রধান বিচারপতি চট্টগ্রাম আসছেন। আইনজীবী সমিতির একটি অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য রাখবেন। আশা করছি, সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন বিষয়ে তিনি কথা বলবেন।