দাবা ও আমাদের শিক্ষা

মোঃ আবু ছালেহ্‌ | সোমবার , ৪ আগস্ট, ২০২৫ at ৮:৩০ পূর্বাহ্ণ

সকালবেলা ছেলে বলল বাবা আসুন দাবা খেলি। যথারীতি বসে পড়লাম। খেলাটা খুবই সতর্কতার সঙ্গে খেলতে হয় তা না হলে হার নিশ্চিত। আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্রে এই দাবার সাথে সামঞ্জস্য দেখতে পাই। এইযে এত সৈন্য ঘোড়া হাতি কিংবা মন্ত্রী রণকৌশল সব কিছু ধুলিস্যাৎ করে দেয় একজন মীরজাফর। আমি মনে করি যুদ্ধের প্রতিপক্ষ দৃশ্যমান শত্রুর চেয়ে অদৃশ্য শত্রু মীরজাফর বড় ভয়ানক। তাই পরিবার সমাজ সংগঠন কিংবা দেশ যতক্ষণ মীরজাফরদের কাছ থেকে রক্ষা করা যাবে না ততক্ষণ নিরাপদ নয়। তাই আপনার আশেপাশে মীরজাফরদের চিহ্নিত করুন। এরা সমাজের উচ্ছিষ্ট, এদেরকে বিতাড়িত করুন। এরা অতীতেও ছিল বর্তমানেও আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। যুদ্ধ করে জেতা আর ষড়যন্ত্র করে জেতা এক নয়। তবে শতবর্ষ পরেও সত্যের জয় হয়। মানুষ সত্যের গুণগান গায়। কারণ সত্য সদা সমুজ্জ্বল আর মিথ্যা সেতো আজীবন ঘৃণিত। আজকাল সবখানে মিথ্যার জয়জয়কার। মিথ্যুকরা হাততালি দেওয়ার জন্য লোক ভাড়া করে আনে। সত্যের হাততালি দেওয়ার লোকের প্রয়োজন হয় না। এমনও দেশ আছে যেখানে দাবা খেলা স্কুল থেকেই বাধ্যতামূলক, এমনও দেশ আছে যেখানে দাবাড়ুরাই দেশের সবচেয়ে বড় তারকা। ইউরোপের আর্মেনিয়া এমনই এক দেশ যেখানে ছয় বছরের ওপর সব শিশুকেই দাবা খেলা শেখানো হয়। কর্তৃপক্ষ মনে করে থাকেন ছোটবেলা থেকে দাবা খেললে শিশুরা একটা ‘বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের’ মধ্য দিয়ে যাবে যা ভবিষ্যতে চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে কাজে দেবে। যেকোনও বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে শিশুটি একটা ভাবনার স্তর পার হবে যা তাকে স্পষ্ট ধারণা পেতে সাহায্য করবে বলেই মনে করেন আর্মেনিয়ানরা। আর্মেনিয়ায় এখন তিন হাজারেরও বেশি প্রশিক্ষিত দাবা শিক্ষক আছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ড. স্টুয়ার্ট মারগুলিস দুই বছর ধরে একটি গবেষণা করে পেয়েছেন, দাবা খেলা যারা শেখে তাদের রিডিং টেস্টের স্কোর ভালো আসে, স্কুলে রিডিংয়ের পারফরম্যান্সও ভালো হয়। অধ্যাপক পিটার ডওভার্ন যিনি একজন দাবাড়ুও বটে, তার গবেষণাতেও উঠে এসেছে দাবা খেললে আইকিউ স্কোর বাড়ে। আইকিউ হলো বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায় পরিমাপ করার একটা মাপকাঠি। ডওভার্নের গবেষণায় পাওয়া গেছে, দাবাড়ুরা সমস্যার সমাধান করতে পারেন, তাদের স্মৃতিশক্তি তুলনামূলক ভালো এবং সৃজনশীল চিন্তার দিক থেকেও এগিয়ে থাকেন দাবাড়ুদের অনেকেই। ব্রিটেনের চেজ ইন স্কুল অ্যান্ড কমিউনিটিজের সাবেক প্রধান নির্বাহী ম্যালকম পেইন ২০১১ সালে দেখেছিলেন স্কুল পর্যায়ে বাচ্চাদের মধ্যে দাবার ইতিবাচক প্রভাব আছে। ‘এটা শুধু চিন্তার গভীরতা, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, হিসাবনিকাশ ও মনোযোগ আনতেই সাহায্য করে না, এটা বাচ্চাদের নিজের দায়িত্ব নিতেও শেখায়।’ ‘শিশুদের সামাজিক আচরণেও বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে দাবা। বাচ্চারা খেলা শুরুর আগে হাত মেলায়, যদিও ক্লাসের দাবা খেলায় পিনপতন নীরবতা থাকে না। তবু একটা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শেখে বাচ্চারা।’ মাত্র চার বছর বয়সী কেউ ১০৪ বছর বয়সীদের বিপক্ষে খেলতে পারে। কেউ একজন যিনি হাঁটতে পারেন না, তিনি শারীরিকভাবে শক্তিশালী কাউকে হারাতে পারেন।

ম্যালকম পেইনের মতে, একটা বাচ্চা যাকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না শারীরিক নানা কারণে, সেই হয়তো দাবায় তাক লাগিয়ে দিতে পারে। এটাকে দাবার সৌন্দর্য মনে করছেন তিনি। এমনকি দাবা খেলাটা আর্থিকভাবেও অনেক সস্তা, যেকোনও আয়ের মানুষ দাবা খেলতে পারেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনোয়ারার বারশতের হাজারা-নূর মাতৃসদন সড়কটি পাকাকরণ করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধসাফল্যে অন্যের ভূমিকা