দাদন ও ঋণ নিয়ে বিপাকে তিন হাজার জেলে

ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | শনিবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলার সমুদ্র উপকূল নিকটবর্তী সাগরে ইলিশ আহরণ কমে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলেরা। এছাড়া এখন চলছে নিষেধাজ্ঞা। সরকারের তরফ থেকে যে সহায়তা দেওয়া হয় তাতে সংসারের চাল কেনাও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য প্রয়োজন মিটাবে কী করে। জেলেদের এই দুর্দিনে সরকারের সহযোগিতা বাড়ানো যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন মাছধরা বন্ধকালে বিকল্প কর্মসংস্থান। এমনিতেই কমেছে ইলিশ বেড়েছে দাদন। জেলেদের এই দুর্দিন যেন কাটছেই না।

উপজেলার মায়ানি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের জেলে রণজিৎ জলদাশ বলেন, ছয় সদস্যের সংসার আমার। মৌসুম এলে দাদনে জাল কিনতে হয়। পরে ইলিশ আহরণ করে দাদনের টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ইলিশ আহরণ কমে যাওয়ায় দাদনের টাকা পরিশোধ করতে এনজিও থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এছাড়া বছরে দুবার মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে।

উপজেলার দক্ষিণ মায়ানি এলাকার বাবুল জলদাশ বলেন, ইলিশ এখন সোনার হরিণ। সাগর ও নদী দূষণ বেড়ে গেছে। তাই ইলিশ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এছাড়া মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি ভরাটকাজে বড় বড় ড্রেজার ব্যবহৃত হওয়ার কারণেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।

মাইলিশ রক্ষা ও নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে নদী ও সাগরে মাছ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ১৩ অক্টোবর থেকে। ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, মজুদ ও বিপণন বন্ধ থাকবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও টাস্কফোর্স বিভিন্ন সময় অভিযানও পরিচালনা করছে। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে নিবন্ধিত প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতি জেলের সংসারে ৫ থেকে ৭ কারো আরও বেশি সদস্য রয়েছে। এতে তাদের ১০ দিনও যায় না। অন্যান্য প্রয়োজনীয় সবজি বা ন্যূনতম আমিষ কী করে কিনবে তারা। চিকিৎসা বা অন্যান্য প্রয়োজন মিটানো তো অসম্ভব। এমতাবস্থায় মানবেতর দুর্দিনই চলছে ওদের। কেউ কেউ শুয়ে বসে কেউ বা পুরোনো জাল পরিচর্যা বা জোড়াতালি দেওয়ার কাজে কোনভাবেই দিন কাটছে জেলেদের।

প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা গেছে, মীরসরাইয়ে ২৯টি জেলেপল্লিতে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ২ হাজার ৫৫৭ জন। সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। মাছের প্রজনন বাড়াতে ও বেড়ে ওঠা নির্বিঘ্ন করতে বছরের বিভিন্ন সময় নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। কিন্তু এরপরও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। কমে গেছে অন্যান্য সামুদ্রিক মাছও।

মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ২০২০২৩ সাল পর্যন্ত ইলিশ আহরণ কমেছে ২৫ শতাংশ। চলতি বছর ১২ অক্টোবর পর্যন্ত আহরণ হয়েছে ৫৬ টন। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আরও ৪৪ টন ইলিশ আহরণ হতে পারে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, মীরসরাইয়ে ইলিশ আহরণের চিত্র হতাশাজনক। আগে যেভাবে উপকূলে ইলিশ পাওয়া যেত, এখন সেভাবে পাওয়া যায় না। এর প্রধান কারণ উৎপাদন ও প্রজনন ক্ষেত্রগুলো বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে ঘাটগুলো বদলে ফেলায় ইলিশ আহরণ কমেছে। ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে আমরা নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত করছি। চলতি বছর সব মিলয়ে ১০০ টন ইলিশ আহরণ হতে পারে।

জেলেদের সামান্য চাল ছাড়া আর কোন সুবিধা কী না প্রশ্নে মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা করছি জেলেদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর কিন্তু সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কোন বরাদ্দ না পাওয়ায় কোন প্রত্যাশাও জেলেদের দিতে পারছি না। আবার জেলের সংখ্যা বৃদ্ধির পরও তাদের নিবন্ধন করা যাচ্ছে না।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মীরসরাই উপজেলায় ২০১৬ সালের আগে ২ হাজার ২৬ জন জেলে নিবন্ধিত হন। ২০২১ সালে নিবন্ধিত হন আরও ১০০ জন। পরবর্তী বছরগুলোতে নিবন্ধন পান আরও ৪৩১ জন জেলে। বর্তমানে উপজেলার ২৯টি জেলেপল্লিতে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২ হাজার ৫৫৭ জন। নিবন্ধন ছাড়া আরও ৫ শতাধিক জেলে রয়েছে বলে জানান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসলামকে পুনর্জীবন দিয়েছিলেন হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রা.)
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষার্থীদের যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে হবে