দাঁড়িয়ে আছে কঙ্কালসার মইজ্জ্যারটেক চেকপোস্ট, ২৫ দিনেও নেই পুলিশ!

জে, জাহেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২৯ আগস্ট, ২০২৪ at ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশদ্বার কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক চেকপোস্টে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ২৫ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো কঙ্কালসার চেকপোস্টে নেই কোন পুলিশ। সচল হয়নি তল্লাশি। ভাটা পড়েছে মাদক উদ্ধারও।

অবশ্য সিএমপির এই চেকপোস্টের অবস্থা ৫ আগস্টের পর এতটাই করুণ যে, ওখানে বসে এখন ডিউটি করার মতো অবস্থা বা পরিবেশ কোনটাই নেই।

কেননা, থানা পুলিশ বক্স ও পাশের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের কোন অংশ বিশেষ আর অবশিষ্ট রাখেননি দুষ্কৃতিকারীরা। গত ২৫ দিন আগে শত শত জনতা তা নিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। সিসিটিভি ফুটেজ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া কিছু চলমান চিত্র বলছে হামলাকারীরা সবাই ১৪ থেকে ২৫ বছরের যুবক। দক্ষিণের বিভিন্ন উপজেলা থেকে তাঁরা জড়ো হয়েছিলেন বলে অনেকের দাবি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো দাবি করেছেন, মইজ্জ্যারটেক চেকপোস্ট অচল থাকায় সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন চোরাকারবারি অপরাধীরা। চেকপোস্ট ‘শিথিল’ থাকায় শহরে অবাধে ঢুকছে মাদক ও অস্ত্র। কারবারিরা শহরের প্রবেশ মুখ সহজেই ডিঙিয়ে সীমান্ত জেলার ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের চালান সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে তা অনেকটা নিশ্চিত বলা গেলেও বাস্তবতায় পুলিশ অনেকটা অসহায় আর বিমর্ষ অবস্থায় রয়েছে। তাঁদের মুভমেন্ট হচ্ছে কম।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত ২০২০ সালের ৬ আগস্ট টেকনাফে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ গ্রেপ্তারের পর সারাদেশে পুলিশের স্থায়ী ও অস্থায়ী চেকপোস্টগুলোর তল্লাশি কার্যক্রম ছিলো অনেকটা শূন্য। কিন্তু এরচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতিতে পড়েছে বর্তমান পুলিশ। যা আগের অবস্থায় ফিরতে পুলিশকে অনেক সংগ্রাম ও চড়াই উতরাই পার করতে হবে। তাঁতে সন্দেহ নেই।

জানা যায়, গত ২৭ আগষ্ট মইজ্জ্যারটেক পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০০-৬০০ জন কে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর খবরে ওই দিন বে-আইনি জনতা মিছিল সহকারে কর্ণফুলী থানাধীন এই পুলিশ চেকপোস্টে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

ওইদিন আতঙ্ক সৃষ্টি করে পুলিশ বক্স লুটপাটের মাধ্যমে সরকারি মালামাল ও যানবাহন চুরি করা হয়েছে। এতে ৪১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার লুণ্ঠন (চোরাই মূল্য) ও ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করেছে আনুমানিক আরো ৫ লক্ষ টাকার। এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। আইনি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ বক্সে শিগগরই সিসিটিভিসহ সমস্ত জিনিসপত্র সেটাপ করে পুনরায় চালু করা হবে।’ 

এদিকে নানা অপরাধের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, এই মইজ্জ্যারটেক পুলিশ চেকপোস্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চেকার পয়েন্ট। চট্টগ্রাম টু কক্সবাজারের বিভিন্ন পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে কারবারিরা মাদক, স্বর্ণ ও নানা অবৈধ জিনিসপত্র সহজে পার করতে পারলেও। অনেক অপরাধীরা সহজে মইজ্জ্যারটেক চেকপোস্ট পার হতে পারতেন না। ধরা পড়তেন স্বল্প সময়ে। কেজি কেজি স্বর্ণ আর এক লাখ দুই লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধারও সম্ভব হয়েছে এই মইজ্জ্যারটেক চেকপোস্ট থেকে।

এই পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও তা কবে চালু হবে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিএমপি বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘গত ৫ আগষ্ট এক দল বে-আইনি জনতা মিছিল সহকারে পুলিশ বক্সে হামলা চালায়। ওই সময় পুলিশ বক্সের সদস্যরা নিরাপদে সরে যাওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। নতুন করে পুলিশ বক্স সংস্কার করা হবে। তাঁরপর পুনরায় চেকপোস্টে পুরোদমে তল্লাশী কার্যক্রম শুরু করা হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধলায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং পারিজাত এলিটের দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠান
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গ্রেপ্তার