দলের সমর্থন পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগের অর্ধডজন প্রার্থী

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | শনিবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই রাঙ্গুনিয়ার সর্বত্রই আলোচনা চলছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে। আগামী মার্চ মাসে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের খবরে রাঙ্গুনিয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার খবরে সাধারণ মানুষের ধারণা দলীয় হস্তক্ষেপ না থাকলে জনপ্রিয় প্রার্থীরাই চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এক্ষেত্রে এই তিনপদে প্রার্থী সংখ্যাও দীর্ঘ হবে বলে ধারণা সাধারণ ভোটারদের। প্রার্থী তালিকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের তৎপরতা দেখা গেলেও নীরব ভূমিকায় বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। তবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল থেকেও প্রার্থীরা অংশ নিতে পারেন বলে এসব দল সূত্রে জানা যায়।

এদিকে প্রার্থী হতে এখন থেকেই তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের অর্ধডজন প্রার্থী। দলীয় প্রতীকবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলা হলেও দলের সমর্থন পেতে রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কাছে বিভিন্নভাবে নিজেদের উপস্থাপনে ব্যস্ত সম্ভাব্য এই প্রার্থীরা। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিভিন্নভাবে প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন তারা। নিজেদের রাজনৈতিক ত্যাগ, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও জনপ্রিয়তা তুলে ধরছেন। তবে কারা কারা প্রার্থী হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝেও চলছে নানা আলোচনা।

উপজেলা চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেনচট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার, সাবেক চেয়ারম্যান এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মুহাম্মদ আলী শাহ, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কামরুল ইসলাম চৌধুরী, উত্তর জেলা কৃষক লীগের সভাপতি এবং বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার, রাঙ্গুনিয়ার সন্তান কনকর্ড ইন্টারন্যাশনাল ও আটাবের চেয়ারম্যান এবং ভায়রার ভাইস প্রেসিডেন্ট দানবীর মোহাম্মদ আবু জাফর এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য এবং সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের কাজী এম এন আলম। এরপর এই পদে আসেন চন্দ্রঘোনাকদমতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রয়াত এম এ জব্বার। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে প্রায় ত্রিশ হাজার ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন বর্তমান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ হাসনাত। সামান্য ভোটের ব্যবধানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কনকর্ড ইন্টারন্যাশনালের মোহাম্মদ আবু জাফর। এরপর ২০১৪ সালে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে এই পদে আসেন আওয়ামী লীগের মুহাম্মদ আলী শাহ। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খলিলুর রহমান চৌধুরী। তিনি ২০২০ সালের ২২ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে ইন্তেকাল করলে একই বছরের ২ নভেম্বর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। এরপর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার।

বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার বলেন, ‘আমার নেতা ড. হাছান মাহমুদ আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা আমি নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছি। জনসেবায় সকাল ১০টা থেকে বিকাল পর্যন্ত নিয়মিত অফিসে সময় দিয়েছি। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে অসম্প্রদায়িক মানসিকতা নিয়ে বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, শ্মশান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি। সততার সাথে দায়িত্ব পালনে কারো কাছ থেকে এক টাকাও কখনো নেইনি। আমি খলিল সাহেবের মৃত্যুর পর অবশিষ্ট মেয়াদে এখন দায়িত্ব পালন করছি। আশাকরি পরবর্তীতে পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে আমি দলের সমর্থন পাবো।’

মুহাম্মদ আলী শাহ বলেন, দলীয় প্রতীক না থাকলেও আমি দল থেকে সমর্থন প্রত্যাশা করছি। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আমি কাউকে অযোগ্য বলবো না। যেহেতু একবার পরীক্ষায় জনগণ আমাকে নিজেরাই চাঁদা তুলে টাকা খরচ করে শ্রম দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তখন আমি জনগণের বিশ্বাসের অমর্যাদা করিনি। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার সুযোগ আমারও ছিলো। কিন্তু দলীয় আদর্শ, নীতিনৈতিকতা আমি কখনো বিসর্জন দেইনি। তাই এবারও আমি দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই।

কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘২০০২ সালে দুঃসময়ে আমি দলের হয়ে মেয়র প্রার্থী হয়ে ভোট করেছিলাম। যেখানে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে দুইবার রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছি। জেলা পরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। নেতৃত্বের যোগ্যতা এবং ত্যাগের বিষয় বিবেচনা করে এবার দলের সমর্থন চাইবো।

অনেকটা একইসুরে কথা বলেন অপর প্রার্থী শফিকুল ইসলাম। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার কথা উল্লেখ করে তৃণমূল পর্যায়ে তার দক্ষ সাংগঠনিক ভিত্তি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তাই দলের সমর্থন পেলে মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার উত্তর রাঙ্গুনিয়ার একক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সেদিক বিবেচনা এবং উপজেলাব্যাপী সাংগঠনিক কর্মতৎপরতায় তাকে দলীয় সমর্থন দিলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা স্বতস্ফূর্তভাবে কাজ করে তাকে বিজয়ী করবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। এছাড়া দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী দলীয় সমর্থন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানান। দলের কোনো দায়িত্বে না থাকলেও সমর্থন কামনা করেন বিশিষ্ট দানবীর মোহাম্মদ আবু জাফর। তাঁর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা এবং মাঠের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে জয়ী হতে পারবেন বলে আশা করেন। অন্যদিকে বিএনপির কোনো প্রার্থীর নাম এখনো শোনা যায়নি। তবে এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এদিকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবার বক্তব্যআধুনিক রাঙ্গুনিয়া গড়ার রূপকার বীর চট্টলার মানুষের সুখদুঃখের সাথী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সকলের অভিভাবক। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেই সিদ্ধান্ত মেনেই তারা কাজ করতে চান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোটের পর বিএনপির প্রথম কর্মসূচি
পরবর্তী নিবন্ধদৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভে শত শত গর্ত, ঘটছে দুর্ঘটনা