দলের প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ প্রধানে আলাদা মানুষ চায় এনসিপি

| সোমবার , ২১ জুলাই, ২০২৫ at ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

একই ব্যক্তি যেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতার চেয়ারে বসতে না পারেন, সেই প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টিএনসিপি। গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সামনে এমন প্রস্তাব তুলে ধরে দলটি।

সংলাপ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে নিজেদের প্রস্তাবের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম আদিব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে আমরা বলেছি, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে বিকল্প নেতৃত্ব কখনো তৈরি হয়নি। এর কারণ হচ্ছে, যখনই যে দল ক্ষমতায় আসে সে দলেই দলীয়প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি থাকেন। অর্থাৎ তিনটা পদেই তিনি থাকেন। তিনি আইন বিভাগেরও প্রধান থাকেন, নির্বাহী বিভাগেরও প্রধান থাকেন এবং তার দলেরও প্রধান থাকেন। খবর বিডিনিউজের।

আদিব বলেন, এটা থাকার ফলে ওই রাজনৈতিক দলের যে আদর্শ, সে আদর্শ অনুযায়ী সংবিধানের মূলনীতি পর্যন্ত পরিবর্তন করে। তিনি যখন একই সঙ্গে দলের প্রধান, সরকারপ্রধান থাকেন, তার দলের যে আদর্শ, দলের যে একটা টান থাকে, সেটা থেকে রাষ্ট্রীয় আইন আদালতে একটা সুবিধা দেওয়ার চিন্তা থাকে। একই সঙ্গে একটা দলে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয় না, যার ফলে একটা দলে কোনো নেতা, সেই দলের প্রধান হবে, সেই চিন্তাও করতে পারে না।

এদিন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৫তম দিনের মতো আলোচনায় বসে ঐকমত্য কমিশন। আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, আমাদের দেশে পূর্বে ছিল শেখ হাসিনার বিকল্প নাই; খালেদা জিয়ার বিকল্প নাই; কিংবা এখন বলা হবে, তারেক রহমানের বিকল্প নাই, রাষ্ট্রকে চালানোর জন্য তিনি একমাত্র যোগ্য। এখন বিকল্প তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটি কী? প্রক্রিয়াটা যেন বন্ধ না হয় সেজন্য আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, দলের প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা হবেন আলাদা ব্যক্তি।

তিনি বলেন, দলের প্রধান যখন প্রধানমন্ত্রী হবেন, তখন দলের প্রধান আরেকজনকে বানাবেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ শেষে দলের প্রধান হিসেবে ফিরতে পারার মতো বিশ্বাসটুকু যদি না থাকে তাহলে তো বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয় না। ফলে আমাদের বাংলাদেশে যেটা হয়, আমাদের বাংলাদেশে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আছে, তারা কখনো প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, এমপি হওয়ারও স্বপ্নও দেখতে পারে না। স্বপ্নটা সর্বোচ্চ মনোনয়ন পাওয়ার মধ্যে থাকে। কারণ নমিনেশন যিনি দিয়ে থাকেন তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকেন, তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে পারেন না, কোনো প্রস্তাব দিতে পারেন না।

আদিব বলেন, আপনি আওয়ামী লীগ বলেন, বিএনপি বলেন, জামায়াত বলেন, সিপিবি বলেন, অধিকাংশ দলের প্রধান ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে দলীয় প্রধান থাকেন। সিপিবির যে প্রধান ছিলেন, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, তিনি ৯০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রধান ছিলেন। ঠিক তাদের বিপরীত আদর্শের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, তাদের মতিউর হমান নিজামী টানা ১৭ বছর দলের প্রধান ছিলেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে তো ১৯৮১ সাল থেকে টানা ৪৫ বছর ধরে একই ব্যক্তি আছেন।

তিনি বলেন, এসব কারণে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয় না। আর জাতি যখন সংকটে পড়ে, তখন বিকল্প কে বিকল্প কে প্রশ্নটা আসে। ফলে আমরা মনে করি রাজনৈতিক দলগুলো আগামীর বাংলাদেশের জন্য আমাদের প্রস্তাব মেনে নেবে।

আদিব বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হওয়ার জন্য একটা বাছাই কমিটি হবে, পাঁচ সদস্যের হতে পারে। এতে প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় প্রধান, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদে যে দল তৃতীয় অবস্থানে থাকবে, সেখান থেকে একজন। মোট পাঁচজনের একটি বাছাই কমিটি হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল ও তৃতীয় দল ৩ থেকে ৫ জন করে নাম প্রস্তাব করবে। সংখ্যা কমিয়ে সব শেষে ক্ষমতাসীন দল তিনটি, বিরোধী দল তিনটি ও তৃতীয় দল ২টি নাম প্রস্তাব করবে। আটজনের মধ্য থেকে বাছাই কমিটি র‌্যাঙ্কড চয়েজ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা চূড়ান্ত করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের আরেকটি প্রস্তাব ছিল, কোনোভাবেই বিচার বিভাগকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত না করা। কারণ আমরা দেখি, বিচার বিভাগের মাধ্যমে রাজনীতিকরণ হয়ে থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২১ জুলাই : কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল, সারা দেশে আরও ১৯ জন নিহত
পরবর্তী নিবন্ধদলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ উন্মুক্ত থাকার পক্ষে বিএনপি