দীর্ঘ এক মাস ২৯ দিন ধরে তালা ঝুলছে নগর বিএনপি ও ছাত্রদলের দলীয় কার্যালয়ে। নূর আহম্মদ সড়কের সংগঠন দুটির নাসিমন ভবনস্থ কার্যালয়ের প্রধান ফটকে গত ২৯ মার্চ এ তালা ঝুলিয়েছিল কোতোয়ালী থানা পুলিশ। অবশ্য রমজান মাসে একবার যুবদলের কর্মীরা পুলিশের দেয়া তালা ভেঙ্গে নিজেরা তালা লাগিয়েছিল। পরদিন আবার সেই তালার উপর নতুন করে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। এ অবস্থায় আগামী রোববার দলীয় কার্যালয়ের মাঠে আলোচনা সভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
নগর বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২৯ মার্চ বিকেলে নূর আহাম্মদ সড়কে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিছিল ও সমাবেশ করার সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতাকর্মীদের সাথে। এ ঘটনায় নগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ ১৭ জনকে আটক করা হয়েছিল। একইদিন দলীয় কার্যালয়ে তালাও ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ।
এদিকে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার পর থেকে দলটির নেতাকর্মীদের কার্যালয়মুখি হতে দেখা যায়নি। অথচ একসময় বিএনপি ও ছাত্রদল ছাড়াও যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পদচারণায় সরব থাকতো নাসিমন ভবন। দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল বিএনপি। এরকম বেশ কয়েকটি সিলিন্ডার আছে কার্যালয়ের একটি কক্ষে। তালা থাকায় বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছে না বলেও দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
অবশ্য মাঝখানে একবার পুলিশের দেয়া তালা ভেঙ্গে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নেয়া হয়েছিল বলে দলটির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
এদিকে আগামী রোববার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ১০দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে নগর বিএনপি। এরমধ্যে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে। কর্মসূচিতে আগামী রোববার বিকেল তিনটায় দলীয় কার্যালয় মাঠে আলোচনা সভাও অন্তর্ভুক্ত। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা। এদিকে কর্মসূচির বিষয়ে গত সোমবার নগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়ে অবহিত করেছেন নগর বিএনপির সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইদ্রিস আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, দলীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেয়ায় আমাদের কার্যক্রম চালাতে সমস্যা হচ্ছে। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আমরা দলীয় কার্যালয়ে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিষয়টি অবহিত করে সিএমপি’কে চিঠিও দিয়েছি। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কর্মসূচি পালনে কোনো বাধা দেয়া হবে না। একইসঙ্গে আমরা আশাবাদী কর্মসূচি বাস্তবায়নের সুবিধার্থে প্রশাসন তালা খুলে দিবে।
এ বিষয়ে সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (বিশেষ শাখা) মনজুর মোর্শেদ গত রাতে আজাদীকে বলেন, বিএনপি’র পক্ষ থেকে একটি লিখিত আবেদন পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
নগর বিএনপি’র আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, তারা (পুলিশ) কখনোই একটি দলীয় কার্যালয়ে তালা লাগাতে পারেন না। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। যদি রাস্তায়, মানুষের চলাচলের পথে বা জনগণের অসুবিধা হচ্ছে এমন স্থানে কার্যালয় হতো তখন বন্ধ করে দেয়া যেতো। কিন্তু বর্তমানে যেখানে কার্যালয় সেখানে তো জনগণের জন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তাছাড়া আমরা প্রতি মাসে ভাড়া পরিশোধ করছি। সেখানে আমাদের নানা ডকুমেন্ট রয়েছে। কম্পিউটার আছে। করোনাকালে মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ অন্যান্য উপকরণ আছে। এখন আমরা আশা করছি, কার্যালয়ের তালা খুলে দিবেন।
তালা খুলে দেয়ার বিষয়ে সিএমপি’র সঙ্গে গত দুই মাসে কোনো আলোচনা হয়েছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো কারাগারে ছিলাম। আমাদের অন্য সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা হয়েছে। তারাও জামিনের বিষয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাছাড়া এর মধ্যে আমাদের কোনো কর্মসূচিও ছিল না। তাই সেভাবে যোগাযোগ করা হয়নি। এখন দলের প্রতিষ্ঠাতার শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আমাদের কর্মসূচি আছে। আমরা সিএমপি’র সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি এটার সমাধান হয়ে যাবে।
নাসিমন ভবনে কার্যালয় আছে নগর ছাত্রদলেরও। তালার কারণে নিজেদের দপ্তরে বসে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না বিএনপি’র অঙ্গসংগঠনটি। এ বিষয়ে নগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরীফুল ইসলাম তুহিন আজাদীকে বলেন, বিএনপি ও ছাত্রদল তো নিষিদ্ধ কোনো সংগঠন না। বৃহৎ রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক দল। এরপরও পুলিশ কেন তালা দিয়েছে সেটা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে আদৌ তাদের তালা দেয়ার এখতেয়ার আছে কীনা সেটাও প্রশ্ন।
তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা হয়েছে উচ্চ আদালত বন্ধ থাকায় জামিন নিতে পারেনি। ফলে আমরাও কার্যালয়মুখি হয়নি।