দলিল লেখকের টাকা আত্মসাৎ করে অপহরণ মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ

| সোমবার , ২৪ জুন, ২০২৪ at ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ার পূর্ব সৈয়দবাড়ি রাহাতিয়া দরবার শরীফ বিছমিল্লাহ হুজুরের বাড়ির বাসিন্দা দলিল লেখক মো. মোস্তফা কাউছারের ৬০ লাখ টাকা আত্মসাত করে উল্টো তাকে অপহরণ মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বায়েজিদ থানার অপহরণ মামলায় মোস্তফা কাউছার বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। গত বছরের ২৭ জুলাই চান্দগাঁও থানাধীন কালুরঘাট মোহরা হামিদচর এলাকায় জায়গাসহ তিন তলা বিল্ডিং কেনার জন্য চুক্তিমতো ৭৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেন মোস্তফা কাউছার ও সাজ্জাদ হোসেন। তবে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে বিবাদী বাবুল বৈদ্য ও এসএম আবুল বরকত প্রকাশ এসএম আকাশ রেজিস্ট্রি না দিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকেন। পরবর্তীতে তিন মাসের মধ্যে ৬০ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেও এসএম আবুল বরকত প্রকাশ এসএম আকাশ সেই টাকা পরিশোধ করেননি।

জানা গেছে, রেজিস্ট্রি না দিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা করার কারণে ভুক্তভোগী দলিল লেখক মোস্তফা কাউছার গত বছরের ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, পটিয়ার কালাপোলের বাসিন্দা ১নং বিবাদী বাবুল বৈদ্য চান্দগাঁও থানাধীন কালুরঘাট মোহরা হামিদচর এলাকায় জায়গাসহ একটি তিন তলা বিল্ডিং বিক্রি করার প্রস্তাব করলে অভিযোগকারী মোস্তফা কাউছার বিল্ডিং কিনতে রাজি হন। পরে বাবুল বৈদ্য, ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার এলাকার ২নং বিবাদী ছৈয়দ মঈনুল ইসলাম হাদী ও ৩ নং বিবাদী ইয়াছিন তিন জন মিলে মোস্তফা কাউছারকে বিল্ডিংটি দেখাতে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে মঈনুল ইসলাম হাদী নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে অভিযোগকারীকে বিল্ডিংয়ের কিছু কাগজপত্র দেন। কাগজপত্র পর্যালোচনা করার পর এক কোটি টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে মোস্তফা কাউছার বিবাদীদের বায়না বাবদ ২ লাখ টাকা দেন। অবশিষ্ট ৯৮ লাখ টাকা ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই বিল্ডিং রেজিস্ট্রি দেয়ার সময় বাবুল বৈদ্য ও ছৈয়দ মাঈনুল ইসলাম হাদীকে প্রদান করা হবে মর্মে একটি চুক্তিনামা হয়। চুক্তি মোতাবেক বাবুল বৈদ্যের কথামতো স্বাক্ষী সাজ্জাদ হোসেনের সামনে মোস্তফা কাউছারের কাছ থেকে ৭৬ লাখ টাকা বুঝে নেন বিবাদীরা। পরবর্তীতে বাবুল বৈদ্যকে রেজিস্ট্রির জন্য সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে বললে তিনি অভিযোগকারীকে পরে রেজিস্ট্রি দিবেন বলে মৌখিকভাবে আশ্বাস দেন।

এছাড়া বাবুল বৈদ্য বিভিন্ন তারিখ দিয়ে মোস্তফা কাউছারকে ঘুরাতে থাকেন। ২ নং বিবাদী মঈনুল ইসলাম হাদী আইনজীবী পরিচয় দিয়ে এবং ৩ নং বিবাদী ইয়াছিন আইনজীবীর সহকারী পরিচয় দিয়ে পরস্পর যোগসাজশে বাবুল বৈদ্যের অধীনে ৭৬ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। অপরদিকে গত বছরের বছরের ৪ নভেম্বর প্রতারণার শিকার মো. মোস্তফা কাউছার চান্দগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ১ নং বিবাদী বাবুল বৈদ্য, ২ নং বিবাদী মাঈনুল ইসলাম হাদী এবং ৩ নং বিবাদী মো. সেলিম উদ্দিনের সাথে লেনদেনের বিষয়ে ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর চান্দগাঁও থানাধীন হামিদচরে কথা বলতে গেলে বিবাদীরা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও এক পর্যায়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

অন্যদিকে গত বছরের ৩১ অক্টোবর মোস্তফা কাউছারের আত্মসাত করা ৬০ লাখ ফেরত দেয়ার জন্য অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন ছৈয়দ মাঈনুল ইসলাম হাদী নামে ছদ্মনামধারী এসএম আবুল বরকত প্রকাশ এস এম আকাশ। অঙ্গীকারনামায় এম আকাশ নিজের নাম ও ঠিকানা ভুয়া উল্লেখ করে পটিয়ার বাবুল বৈদ্যের বাড়িতে ৬০ লাখ টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করেন। এছাড়া তিন মাসের মধ্যে সে টাকা পরিশোধের কথাও অঙ্গীকার নামায় উল্লেখ করেন।

জানতে চাইলে প্রতারণার শিকার মোস্তফা কাউছারের ছোট ভাই ছৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, এসএম আবুল বরকত প্রকাশ এসএম আকাশ একজন প্রতারক। সে নিজেকে ফটিকছড়ির মাইজভান্ডারের আওলাদ দাবি করে নাম পরিবর্তন করে ছৈয়দ মঈনুল ইসলাম হাদী নামে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে আমার বড় ভাইয়ের ৬০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছে। টাকা আত্মসাত করে ক্ষান্ত হয়নি সে, উল্টো আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করে তাকে কারাগারেও পাঠিয়েছে। আমার ভাইয়ের সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে জমির ভুয়া ক্রেতাবিক্রেতা সাজিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতে প্রতারক কথিত সাংবাদিক এসএম আকাশ। সে পটিয়ায় বাবুল বৈদ্যের ঘরে ৬০ লাখ গ্রহণ করে স্বাক্ষর করা মূল দলিল ছিড়ে ফেলে। এছাড়া এ সময় প্রতারক চক্রের আরো কয়েকজন সদস্য হঠাৎ দেশীয় অস্ত্র, চাপাতি দিয়ে আমার ভাই মোস্তফা কাউছার ও সাজ্জাদ হোসেনকে হত্যার হুমকি দেয়। প্রাণ বাঁচাতে তারা কোনোভাবে পালিয়ে আসে। পরে সেই টাকা পরিশোধের জন্য স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা দিয়েও পরিশোধ করেনি। উল্টো আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ অপহরণের মামলা দিয়েছে। আমার ভাই অপরাধ না করেও এখন জেল খাটছেন।

এছাড়া বিষয়টি নিয়ে আমার ভাই অপসাংবাদিকতারও শিকারও হয়েছেন। তাই আমরা রাহাতিয়া দরবার শরীফের পক্ষ থেকে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

মোহাম্মদ খোরশেদ

পূর্ববর্তী নিবন্ধরক্তাক্ত ফিলিস্তিনিকে গাড়ির সামনে বেঁধে নিয়ে গেল ইসরায়েলি বাহিনী
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড়তলীতে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম