দর্শনার্থীতে মুখর পর্যটন কেন্দ্র

টানা ছুটি

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ৮ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

শারদীয় দুর্গোৎসব, শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ, ঈদে-মিলাদুন্নবী, প্রবারণা পূর্ণিমা, লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে টানা ছুটিতে দর্শনার্থীতে গমগম করছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন স্পটগুলো। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত; খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চল; কাপ্তাইয়ের পিকনিক স্পট, আইল্যান্ড; মীরসরাইয়ের বন্য সুন্দর ঝরনায় ভিড় জমিয়েছে দেশের নানা প্রান্তের ভ্রমণ পিপাসুরা। আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন।
খাগড়াছড়ি : টানা ছুটিতে খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক সমাগম বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটি কাটাতে ভিড় করছে পর্যটকরা। ইতোমধ্যে অধিকাংশ হোটেলে কটেজ বুকিং হয়ে গেছে। খাগড়াছড়ির অভিজাত হোটেলে গাইরিং এর ব্যবস্থাপক প্রান্ত ত্রিপুরা জানান, আমাদের হোটেল কক্ষ সংখ্যা ৪৩। তবে রোববার পর্যন্ত হোটেলের প্রতিটি কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। বিজয়ী দশমীর দিন থেকে এখানে পর্যটক সমাগম বেড়েছে। এখনো অনেক পর্যটক রুমের জন্য ফোন করছে। কিন্তু নতুন করে বুকিং নিতে পারছি না।
বুধবার থেকেই আলুটিলা রহস্যময় সুড়ঙ্গ, ঝুলন্ত ব্রিজ, তারেং, রিছাং ঝরনা সবখানেই পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। খাগড়াছড়ি আলুটিলা পর্যটন তত্ত্বাবধায়ক কোকোনাথ ত্রিপুরা জানান, বিজয় দশমীর ছুটির দিন থেকে খাগড়াছড়িতে পর্যটক সমাগম বাড়ছে। প্রতিদিন হাজারের বেশি পর্যটক জেলার প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলা ভ্রমণ করছে। শুক্রবার এ সংখ্যা আরো তিনগুণ বেড়েছে। গাজীপুর থেকে খাগড়াছড়িতে বেড়াতে এসেছেন জার্মান প্রবাসী জনি ও জ্যোতি। তারা জানান, টানা বন্ধে আমরা বেড়াতে এসেছি। খাগড়াছড়ি ঘুরে সাজেক যাব। শরতের এমন প্রকৃতি আমাদের মুগ্ধ করেছে।
খাগড়াছড়ির পর্যটন মোটেলের ইউনিট ব্যবস্থাপক এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে যাচ্ছে। সাজেক ভ্রমণ শেষে পর্যটকরা খাগড়াছড়ির ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে ঘুরছে। আমাদের ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। হোটেলে ৩০টি কক্ষ আছে। সবগুলোই বুকিং হয়ে গেছে। রোববার পর্যন্ত এমন ভিড় থাকবে। টানা ছুটিতে খাগড়াছড়িতে অন্তত ২৫-৩০ হাজার পর্যটক ভ্রমণে আসবেন।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক জানান, সবসময় জেলা পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। তবে যে সময়ে পর্যটকদের সমাগম বাড়ে তখন আমাদের বাড়তি মোবাইল পুলিশ টিম কাজ করে। একই সাথে যে পর্যটকদের যাতায়াতের রুটে সাথে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যানবাহনের ত্রুটিসহ পর্যটকরা যেকোনো প্রকারের বিড়ম্বনায় পড়লে দ্রুত সমাধান করে পর্যটকদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে আরো ভালো বলে মন্তব্য করেন পুলিশ সুপার।
বান্দরবান : প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে ভিড় জমিয়েছে ভ্রমণপিপাসুরা। পাহাড়ের অপরূপ প্রকৃতি এবং শৈল্পিক ছোঁয়ায় সাজানো জেলার দর্শনীয় স্থান নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি, নীলদিগন্ত, তমাতুঙ্গী, ডিমপাহাড়, প্রান্তিক লেক, রহস্যময় বগা লেক, জাদিপাই ঝরনা, দামতুয়া, শৈলপ্রপাত ঝরনা, রিজুক ঝরনা, চিংড়ি ঝরনা, বাকলাই ঝরনা, দেবতাকুম, অমিয়কুম, সাতভাইকুম, রেমাক্রী, নাফাকুম, বৌদ্ধ টেম্পল, রামজাদী, স্বর্ণ মন্দিরের মত স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকৃতি প্রেমীরা। জেলার আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থানগুলো মুখরিত হয়ে উঠেছে পর্যটকদের পদচারণায়।
ছুটিতে বেড়াতে আসা পর্যটক ঈশিতা ও শারমিন বলেন, বর্ষায় পাহাড়ের সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ। চারদিকে সবুজের সমারোহ। দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে। জীবনে প্রথমবার বান্দরবান ভ্রমণে এসে সত্যিই মুগ্ধ। এখানে বেড়ানোর জন্য নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, দেবতাকুমের মত চমৎকার সব জায়গা রয়েছে।
ভ্রমণপ্রেমী সাজ্জাদুর রহমান বলেন, সুযোগ পেলেই বেড়াতে পছন্দ করি। তাই উৎসবের ছুটিতে আবার বান্দরবান ভ্রমণে এসেছি। বিদেশের অনেক জায়গাও গিয়েছি। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের সৌন্দর্যের সাথে মিলানো কঠিন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়ায়। যোগাযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও মোটামুটি ভালো। কিছু সমস্যা আছে। সরকারের উচিত সেদিকে নজর দেয়া।
এদিকে শুক্রবার থেকে টানা কয়েকদিনের বন্ধে বান্দরবান জেলা শহরসহ সাত উপজেলার আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য জমে উঠেছে। এখানকার অধিকাংশ আবাসিক হোটেলেই রুম খালি নেই বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবান হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ তিনটি ধর্মের উৎসবকে ঘিরে বান্দরবান পর্যটন ব্যবসা জমে উঠেছে। তিনদিনের মধ্যে আশানুরূপ পর্যটকের আগমন ঘটেছে জেলায়। তবে ভ্রমণ প্রেমীরা জেলা শহরে খুব একটা থাকেন না, তারা উপজেলা পর্যায়ে দূর-দূরান্তের পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াতে পাহাড়িদের মাচাং ঘরগুলোকে বেছে নিচ্ছে।
এদিকে ভ্রমণপিপাসুদের বাড়তি চাপ সামলাতে এবং পর্যটক হয়রানি বন্ধে প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর বলেন, কয়েকদিনের বন্ধে পর্যটকদের বাড়তি চাপ লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে পর্যটকদের নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে মাঠে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সবগুলো পর্যটন স্পট এবং দর্শনীয় স্থানগুলোর আশপাশে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের পর্যটক হয়রানির খবর পাওয়া যায়নি। নিরাপদে স্বাচ্ছন্দে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে পাহাড়ের আনাচে কানাচে।
মীরসরাই : বর্ষার শেষ সময়ে শরতের নির্মল প্রকৃতিতে ঝরনার কলতান আর নান্দনিক মোহনীয়তা দেখতে অনেকে ছুটে আসছেন মীরসরাইয়ে। বিশেষ করে মীরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ঝরনা ও বোয়ালিয়া ঝরনা দর্শণার্থী টানছে বেশি। প্রতি বছর বর্ষা এলেই এখানকার ঝরনাগুলো ফিরে পায় ভরা যৌবন। দূর-দূরান্ত থেকে অগণিত প্রকৃতি প্রেমী আর দর্শনার্থী ছুটে আসে ঝরনার জলে গা ভেজাতে। কেউবা এসে এর বন্য সুন্দর উপভোগ করতে। সম্প্রতি ভয়াবহ কয়েকটি দুর্ঘটনাও দমাতে পারেনি দর্শণার্থীদের। দলে দলে ছুটে আসছে তরুণ-তরুণীরা।
গতকাল বোয়ালিয়া ঝরনায় বেড়াতে আসে মীরসরাইয়ের ফেনাপুনি এলাকার ১৮ জনের একদল তরুণ। তাদেরই একজন সিহাব উদ্দিন শিবলু বলেন, প্রতি বছর এই সময় আমরা গ্রামের ছেলেরা মিলে দেশের নানা প্রান্তে ঘুরতে যাই। আমাদের গ্রাম থেকে বোয়ালিয়া ঝরনার দূরত্ব ৬-৭ কিলোমিটার হলেও কখনো যাওয়া হয়নি। এবার সুযোগ মিস করিনি। সবাই মিলে দারুন উপভোগ করেছি। আরাফাত নামে এক দর্শনার্থী বলেন, পাহাড়ি প্রাকৃতিক ঝরনাগুলো সত্যি অসাধারণ। ঝরনায় ঘা ভেজালে অনেক হালকা লাগে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি।
কাপ্তাই : বুধবার শারদীয় দুর্গোউৎসব উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিন থেকে দলে দলে পর্যটকরা কাপ্তাইয়ে ভ্রমণে আসছেন। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, উপজেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র প্যানোরমা জুম রেস্তোরাঁ, লেকশোর, লেক প্যারাডাইস পিকনিক স্পট, লেকভিউ আইল্যান্ড, রিভার ভিউ ক্যাফে এন্ড পিকনিক স্পটসহ প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপচে পড়া।
সীতাকুণ্ড থেকে আমির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পর্যটক শুক্রবার কাপ্তাই ভ্রমণে আসেন। তারা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে আনন্দময় সময় কাটানোর পাশাপাশি কাপ্তাই লেকে নৌ ভ্রমণ করেন। মীরসরাই থেকে তিনটি পরিবার একটি মাইক্রোবাসে চড়ে কাপ্তাই ভ্রমণে আসেন। নৌ বাহিনী পরিচালিত লেক প্যারাডাইস পিকনিক স্পট এবং প্যানোরমা জুম রেস্তোরাঁ বিনোদন কেন্দ্র ভ্রমণ করে তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
কাপ্তাই লেকে বোট চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, বিপুল সংখ্যক পর্যটক নৌ ভ্রমণ করতে আগ্রহী। তদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে এবার বেশ কয়েটি আকর্ষণীয় রঙের নতুন ইঞ্জিন বোট নামানো হয়েছে বলেও তিনি জানান। নিসর্গ রিভার ভ্যালির ম্যানেজার মাসুদ আলম জানান, প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটক তাদের রেস্টুরেন্টে আসছেন। এবারের লম্বা বন্ধে তাদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
লেকশোর পিকনিক স্পটের ম্যানেজার জানান, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকছে তাদের বিনোদন কেন্দ্র। লম্বা ছুটি হওয়ায় দলে দলে পর্যটকরা বিনোদন কেন্দ্রে আসছেন বলেও তিনি জানান। কাপ্তাই থানার ওসি মো. জসিম উদ্দীন বলেন, আগত পর্যটকরা যাতে নিরাপদে কাপ্তাইয়ে ভ্রমণ করতে পারে সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়কে ৩২২ দুর্ঘটনা ঝরেছে ৬৩ প্রাণ
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় অপহৃত প্রবাসী রাঙামাটিতে উদ্ধার