দখলমুক্ত ২শ হেক্টর বনভূমিতে লাগানো হলো ৫ লাখ চারা

চুনতি অভয়ারণ্য

মোহাম্মদ মারুফ, লোহাগাড়া | শনিবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ায় চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের আওতাধীন ২শ হেক্টর জবরদখল বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। এতে লাগানো হয়েছে সুফল প্রকল্পের অধীনে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন গাছের চারা। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণীর খাদ্যের সংস্থানসহ টেকসই বনের জন্য বাগানে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রজাতির চারা রোপণ করা হয়েছে।

জানা যায়, সুফল প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে বিক্ষিপ্ত ও অবনমিত বনভূমি পুনরুদ্ধার, সংরক্ষিত এলাকা ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়ন, সমন্বিত বন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বনের বাইরে বৃক্ষাচ্ছাদন বৃদ্ধি এবং বন নির্ভর সম্প্রদায়ের বিকল্প জীবিকায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা। বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়েএই সত্য বিবেচনায় বন্য প্রাণীদের জন্য একটি নিরাপদ প্রাকৃতিক আশ্রয় দিতে হবে। দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন গাছের চারা লাগিয়ে বন্যপ্রাণীর জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করা। অভয়ারণ্যে লাগানো গাছগুলো যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে তেমনই পরিবেশ শীতল রাখতে সাহায্য করবে। পাখিসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীদের আবাসস্থল এবং খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩২৪ আর্থিক সনে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের অধীনে চুনতি অভয়ারণ্য রেঞ্জের আওতাধীন ৩টি বিটে বাগান সৃজন করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বিটের দুই স্থানে ১০০ হেক্টর, আজিজনগর অভয়ারণ্য বিটে ২০ হেক্টর ও হারবাং অভয়ারণ্য বিটে ৮০ হেক্টর বনভূমিতে গাছের চারা লাগানো হয়েছে। প্রতি হেক্টরে লাগানো হয়েছে ২ হাজার ৫০০টি করে গাছের চারা। এরমধ্যে রয়েছে আমলকি, হরিতকি, বহেরা, অর্জুন, কাঞ্জলভাদি, চাপালিশ, গর্জন চিকরাশি, সোনালু, শিমুল, কদম, ভুইকদম, ডাকিজাম, কালোজাম, পুতিজাম, ছাতিয়ান, তেলসুর, কেয়ামন, গামার, তেজবহুল, সিভিট, ডুমুর, তুন ও জারুল ইত্যাদি। বন বিভাগের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও রেঞ্জের নার্সারিতে তৈরিকৃত এসব গাছের চারা প্রায় ৬ মাস পূর্বে রোপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকদফা বাগান পরিচর্যাও করা হয়েছে।

গত সোমবার চুনতি অভয়ারণ্য বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বিটের সুফল প্রকল্পের বাগানে সরেজমিনে দেখা যায়, রোপিত দেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছে চারাগুলো খুঁঁটির সাথে সতেজ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। রোপিত সিংহভাগ গাছের চারা জীবিত আছে। গাছের ডালপালা মেলে গাছ আস্তে আস্তে বড় হতে দেখে আনন্দে বুক ভরে উঠেছে স্থানীয় বৃক্ষপ্রেমীদের ও বনবিভাগের কর্মকর্তাদের। মাঝে মধ্যে কয়েকটা গাছের চারা মারা গেছে। ওইসব স্থানে পুনরায় গাছের চারা রোপন করা হবে জানা গেছে। বনের ভেতর আসাযাওয়ার পথে বন্যহাতির বিচরণের চিহ্নও দেখা গেছে।

চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসাইন জানান, সুফল প্রকল্পের আওতায় চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের অধীনে ২শ হেক্টর বাগান সৃজন করা হয়েছে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রজাতির অর্থাৎ এই অঞ্চলের উপযুক্ত প্রজাতির চারা রোপণ করা হয়। যেগুলো বিভিন্ন বন্যপ্রাণী, বিবিধ প্রজাতির পাখির খাবার, বাসস্থান, আশ্রয় ও পছন্দ করে। রোপিত চারার মান খুব ভালো বলে জানান তিনি।

বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা নুর জাহান জানান, দখল রোধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণীদের খাদ্যের সংস্থান, নিরাপদ আবাসস্থলের জন্য বনের ভেতর দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। গাছ না থাকলে পাহাড় থাকবে না। ধ্বংস হবে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য। তাই গাছ লাগাতে হবে। পাহাড়, প্রকৃতি বাঁচাতে গাছই সমাধান। তারা সম্মিলতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে গাছ ও পাহাড় কাটা বন্ধ করে বন্যপ্রাণী এবং পশুপাখির নিরাপদ আবাসস্থল করতে। তার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

একইদিন চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বিটে সৃজিত বাগান পরিদর্শনে যান বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ। সাথে ছিলেন বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা নুর জাহান, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন ও চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বিট কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম। বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ এই সময় সৃজিত বাগানের সফলতার কার্যক্রম দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এছাড়া সৃজিত বাগান সমূহ শতভাগ সফল বাগানে পরিণত করতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্যুরিজমকে এগিয়ে নিতে সরকার কাজ করছে
পরবর্তী নিবন্ধ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ গানের গীতিকার আবু জাফর আর নেই