রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদরের ইছাখালী গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ডলুছড়া খাল। একসময় ৪০-৫০ ফুট প্রশস্ত খালটি এখন সরু নালায় রূপ নিয়েছে। দখল ও দূষণে হারিয়ে যেতে বসেছে। শুধু ডলুছড়া খাল নয়, দখল ও দূষণে বিপন্ন অবস্থা রাঙ্গুনিয়ার অধিকাংশ খাল ও ছড়ার। ফলে বর্ষায় অল্প বৃষ্টিতেও সৃষ্টি হয় জনদুর্ভোগ। দখলমুক্ত করে এসব ছড়া ও খালগুলো পুনঃখননের দাবি দীর্ঘদিনের। সরেজমিনে দেখা যায়, ইছাখালী ডলুছড়া খালের মতো দখল-দূষণে বিপন্ন অবস্থা ইছামতি নদী ও কুরমাই খালের। রাঙ্গুনিয়া পৌর এলাকার একমাত্র বাজার রোয়াজারহাটসহ ইছামতি নদীর বিভিন্ন স্পটে বেশ কয়েকটি বাজার রয়েছে। এসব বাজারের অধিকাংশ ময়লা ফেলা হচ্ছে এই নদীতে। ফলে দুর্গন্ধে দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে বিপন্ন অবস্থা এই নদীর শাখা কুরমাই খালেরও। রোয়াজারহাট বাজারের বর্জ্য, বিভিন্ন স্পটে দখল, স্থানীয়দের শৌচাগারের ময়লার কারণে এটিও অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এই খালটি শুষ্ক মৌসুমে একেবারে শুকিয়ে যায়। ফলে শত শত একর কৃষি জমি সেচ সংকটে অনাবাদি থেকে যায়।
উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড দোভাষী বাজারের মিশন এলাকায় রয়েছে ত্রিপুরা সুন্দরী নামে একটি প্রাকৃতিক ছড়া। ছড়াটি দখল করে গড়ে উঠেছে একাধিক বহুতল ভবনসহ শতাধিক নানা স্থাপনা। এমনকি ছড়া-সংলগ্ন খ্রিস্টিয়ান হাসপাতালের বিস্তীর্ণ জায়গাও প্রভাবশালীদের দখলের থাবা থেকে রেহাই পায়নি। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই ছড়ার পানি উপচে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
ইছাখালীর স্থানীয় কবির আহাম্মদ মেম্বার নামে এক ব্যক্তি বলেন, শতাধিক দখলদারের কবলে পড়ে অস্তিত্ব সংকটে ডলুছড়া খাল। খালের উপর পিলার স্থাপন করে নির্মিত হয়েছে একাধিক ভবন। দুই পাড়ের বাসিন্দারাও তাদের শৌচাগারের পাইপ লাগিয়েছে খালের উপর। ফলে এটি এখন ৫-৬ ফুটের নালায় রূপ নিয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি উপচে প্লাবিত হয়। এছাড়া খালের পঁচা দুর্গন্ধে স্থানীয়দের নিশ্বাস নেয়া দায় হয়ে পড়েছে।
পরিবেশবাদী আব্দুল করিম বলেন, রাঙ্গুনিয়ার ছড়া-খাল দূষণের জন্য মূলত স্থানীয়দের অসচেতনতাই দায়ী। এসব রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটি (পউর) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় ছড়া ও খাল দখল রোধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে আমাদের আলাপ হয়েছে। বিশেষ করে রোয়াজারহাট এলাকায় ইছামতি নদী তীরের কিছু দখলদারকে ইতিপূর্বে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এসব উচ্ছেদে শীঘ্রই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া কুরমাই খাল খননে একটি প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। খাল ও ছড়া রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, খাল ও ছড়া দখল-দূষণের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।