পরিবহন শ্রমিককে মারধর ও চাঁদাবাজি বন্ধের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম–বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যান্য রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করেছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ ধর্মঘট পালিত হয়। কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়া ধর্মঘট পালন করায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। জরুরি প্রয়োজনে বিকল্প পরিবহনে বর্ধিত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়েছে তাদের। অনেকে বাসায় ফিরে যান।
পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, চাঁদা না দেয়ায় শনিবার দিবাগত রাতে আজগর নামে এক চালককে মারধর করা হয়। এর প্রতিবাদে সকাল ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু হয়। পরে দু্পুর ২টার দিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খানের অনুরোধে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। এরপর স্বাভাবিক হয় বাস চলাচল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কর্ণফুলী শাহ আমানত ব্রিজ এলাকায় উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, কক্সবাজার, বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যান্য রুটে চলাচল করে এমন শতাধিক বাস রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এসময় বিক্ষোভ করেন চালক ও সহকারীরা। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় শত শত যাত্রী বিপাকে পড়েন। যাত্রীরা জানান, পূর্ব ঘোষণা না দেয়ায় তারা সমস্যায় পড়েছেন।
হেঁটে শাহ আমানত ব্রিজ পার হচ্ছিলেন হাবীব নামে এক একজন। আজাদীকে জানান, তার বাড়ি চন্দনাইশ। শনিবার আত্মীয়ের নগরের বাসায় এসেছেন। সেখানে রাতে ছিলেন। সকাল ১০টার দিকে কোতোয়ালীস্থ আত্মীয়ের বাসা থেকে বের হয়ে রিকশা করে এসেছেন ব্রিজ এলাকায়। এসে দেখেন বাস চলছে না। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেও বাস ছাড়ার লক্ষণ না দেখে হাঁটা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ব্রিজ পার হয়ে রিকশা–সিএনজি যা পাই তা দিয়ে বাড়ি ফিরব।
বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও অনেক মোটরসাইকেল রাইডারকে দেখা গেছে যাত্রী নিয়ে যেতে। তবে তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। সেলিম নামে এক যাত্রী বলেন, ব্রিজ থেকে বাসে করে ১০০ টাকায় দোহাজারী যাই। বাস বন্ধ থাকার সুযোগে মোটরসাইকেল রাইডাররা সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দাবি করছে।
বাস বন্ধ থাকার সুযোগে বাড়তি ভাড়া দাবি করেছে সিএনজি চালকরাও। যাত্রীদের অনেকটা ‘জিম্মি’ করে বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করা হয় তাদের বিরুদ্ধে। শহীদ নামে চকরিয়ার এক যাত্রী বলেন, বাঁশখালী হয়ে চকরিয়া পর্যন্ত জনপ্রতি সিএনজি ভাড়া নেয়া হয় ২০০ টাকা। আজ বাস বন্ধের সুযোগে ৩০০–৩৫০ টাকা দাবি করা হচ্ছে।
একটি বাস কাউন্টারে কথা হয় সুমি নামে এক নারীর সঙ্গে। সাথে ছিল স্কুল পড়ুয়া তার দুই সন্তানও। তিনি জানান, তার মা গুরুতর অসুস্থ। তাকে দেখতে কঙবাজার উখিয়া গ্রামের বাড়ি যাবেন। বাস না ছাড়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন।
কর্ণফুলী সেতু এলাকায় বাসচালক মো. আলী আজগর সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, শনিবার রাতে
আমিরাবাদে সড়ক দিয়ে হেঁটে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে একটি বাসে ওঠেন। ওখানে ছয়জন ছিলেন। তাঁরা বাসের দরজা লাগিয়ে দেয়। তাঁকে জোর করে দোহাজারী নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও ছয়জন মিলে তাকে মারধর করে। তার দাবি, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য আরাকান পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুছাকে দায়ী করা হয়।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ মুছা বলেন, সব আগের নিয়মেই চলছে। কঙবাজার রুটে বড় ও ছোট বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়া নিয়ে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে সমস্যা আছে। সে কারণে নানা কথা বলে বাস চালানো বন্ধ রাখা হয়েছে।
আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি নুরুল কবীর বলেন, চট্টগ্রামের চন্দনাইশে ইউনিয়নের একটি পক্ষ অপর পক্ষের শ্রমিকদের মারধর ও অপহরণের অভিযোগে কঙবাজার রুটে তারা গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন। এছাড়া ইউনিয়নের পক্ষে প্রতিটি বাস থেকে চাঁদা আদায় বন্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবিও তাদের রয়েছে।
চট্টগ্রাম–কঙবাজার কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, যাওয়া–আসা মিলিয়ে যে চাঁদা দিতে হচ্ছে, তার কারণে দৈনন্দিন আয় কমে গেছে। এতে করে চালক–সহকারীদের প্রতিদিনের আয়ও কমে গেছে। সেকারণে তারা ক্ষুব্ধ।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে কঙবাজার, বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছোট–বড় ১৯টি রুটে বাস চলাচল করে। ধর্মঘট চলাকালে সব রুটেই বাস চলাচল বন্ধ ছিল। তবে এসব রুট থেকে চট্টগ্রামে বাস প্রবেশ করেছে।