তৃতীয় ধাপে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, চন্দনাইশ, পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলায় ভোট আজ। আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে এই চার উপজেলার ৩৫৬ কেন্দ্রের ২৩৫৭টি বুথে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে।
চার উপজেলার নির্বাচন ঘিরে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বিশেষ করে চন্দনাইশে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং পটিয়ায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা মারামারি, আনোয়ারায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী–সমর্থক এবং বোয়ালখালী উপজেলায় তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় আজকের নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মাঝে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। চন্দনাইশ, পটিয়া ও আনোয়ারায় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোটাররা।
এই চার উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিলে মোট ৫০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মতো আজ তৃতীয় ধাপের চার উপজেলার নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলার ভোট কেন্দ্রগুলোতে গতকাল থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে মাঠে রয়েছেন পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও আনসার সদস্যরা।
গতকাল সকাল থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে সকল নির্বাচনী সামগ্রী (ব্যালট ছাড়া) নিয়ে গেছেন। আজ ভোর ৬টায় প্রায় কেন্দ্রে প্রশাসনের কঠোর প্রহরায় ব্যালট পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী।
চার উপজেলায় আজকের ভোটের জন্য ৩৫৬ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ২৩৫৭ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ৪৭১৪ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। চার উপজেলার জন্য ৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৬৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, চার উপজেলায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ব্যালট পেপার ধ্বংস করা, ব্যালট বঙ ছিনতাই, ভোটদানে বাধা দেওয়া, ভোটকেন্দ্রের পরিবেশকে ভোটের উপযোগী না রাখা এসব অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার করতে পারবেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হারুন বোয়ালখালী উপজেলায়, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুমিনুন্নিসা খানম আনোয়ারা উপজেলায়, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাররাহুম আহমেদ পটিয়া উপজেলায় এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলাম চন্দনাইশ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বোয়ালখালীতে ১২ জন, পটিয়ায় ২১ জন, চন্দনাইশে ১৪ জন এবং আনোয়ারায় ১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
পটিয়া : পটিয়া প্রতিনিধি জানান, পটিয়া উপজেলায় ১২৮টি কেন্দ্রের ৫৭টিই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নিহ্নিত করেছে প্রশাসন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১২৮টি কেন্দ্রে ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৪ প্লাটুন বিজিবি, প্রতিটি কেন্দ্রে একজন পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে ৪ জন পুলিশ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ৪–৬ জন করে পুলিশ সদস্য, প্রতি কেন্দ্রে ১২ জন করে আনসার সদস্য, উপজেলায় ২৪টি মোবাইল টিম, ১৯টি স্ট্যাইকিং ফোর্স, র্যাবের–২টি স্পেশাল টিম ছাড়াও ব্যাপক রিজার্ভ পুলিশ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কাজ করবে।
পটিয়ায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ (আনারস) ও মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার (দোয়াত–কলম)। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন আবু ছালেহ মুহাম্মদ শাহরিয়ার (উড়োজাহাজ), ডা. এমদাদুল হাসান (বই), ঝুলন দত্ত (চশমা), মোজাম্মেল হোসেন (টিয়া পাখি), সাইফুল হাসান টিটু (মাইক), মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন (টিউবওয়েল), মুহাম্মদ বেলাল (বৈদ্যুতিক বাল্ব) ও আশীষ তালুকদার (তালা)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন মাজেদা বেগম শিরু (কলস), কানিজ ফাতেমা (পদ্মফুল), নুর আয়েশা বেগম (ফুটবল), সাজেদা বেগম (প্রজাপতি) ও সুমি দে (বৈদ্যুতিক পাখা), আফরোজা বেগম (হাঁস)। ১২৮ কেন্দ্রে পটিয়ার ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৩৮ জন, নারী ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৬ জন।
আনোয়ারা : আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, আনোয়ারায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদুল হক চৌধুরী (দোয়াত কলম) ও কাজী মোজাম্মেল হক (আনারস প্রতীক) এবং তিন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ৬ ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে রয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন (তালা) আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আবু জাফর (টিয়া পাখি), যুবলীগ নেতা সালাউদ্দিন (টিউব ওয়েল), ব্যবসায়ী আব্দুল মন্নান মান্না (চশমা), সন্তোষ কুমার দে (বই) ও প্রদীপ দত্ত (মাইক) প্রতীক নিয়ে এবং ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) প্রার্থী মরিয়ম বেগম, পারভীন আকতার ও চুমকি চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। আজ ১১টি ইউনিয়নের ৭৪টি ভোটকেন্দ্রে ভোট হবে। উপজেলায় ২ লাখ ৩৩ হাজার ১০৯ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৮৮ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ৯ হাজার ২২১ জন নারী ভোটার রয়েছে।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, ৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে ৪০ কেন্দ্রকে বিবেচিত করা হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন সব কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে।
চন্দনাইশ : চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, চন্দনাইশে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমদ চৌধুরী জুনু (ঘোড়া), ব্যবসায়ী জসিম উদ্দীন আহমেদ (মোটরসাইকেল), জোয়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহমদ হোসেন ফকির (আনারস) এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম চৌধুরী খোকন (দোয়াত কলম)।
তবে দোয়াত কলমের প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে আবু আহমদ চৌধুরী জুনুকে আচরণবিধি লঙ্গনের অভিযোগে এবং ঋণখেলাপি হিসেবে জসিম উদ্দীন আহমদকে আদালত পর্যন্ত দৌড়াতে হয়েছে। দুই হেভিওয়েট প্রার্থী তাদের এই সমস্যা কাটিয়ে নির্বাচনে লড়তে পারবেন কিনা এ নিয়ে জল্পনা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এই দুই প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে আছেন। চন্দনাইশে নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই উত্তাপ ছড়াচ্ছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু আহমদ চৌধুরী জুনু ও জসিম উদ্দীন আহমদের সমর্থকরা।
এবার চন্দনাইশে ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৬০৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১ হাজার ৫৫১ জন, মহিলা ভোটার ৯০ হাজার ৫৬ জন। উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৮টি।