থামছে না স্বর্ণ পাচারকারীদের তৎপরতা

শাহ আমানত বিমানবন্দর ঘিরে সক্রিয় তিন সিন্ডিকেট

ঋত্বিক নয়ন | শনিবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরসহ দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ পাচারকারীদের তৎপরতা থামছে না। পাচারকারীরা নানা কায়দায় মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা চ্যানেল পেরিয়ে চালান তাদের গোপন গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। গত কয়েক বছরে ধরা পড়েছে অনেকগুলো চালান। তবে পাচারকারীদের চালানের কতটুকু ধরা পড়ছে, আর কতটুকুই বা পাচারকারীরা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা চ্যানেল ফাঁকি দিয়ে বাইরে নিয়ে যেতে পারছে, সে ব্যাপারে নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। গতকাল আবারও চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়ল সিগারেটের প্যাকেট থেকে ১৪টি স্বর্ণের বার। ধারণা করা হচ্ছে এই চালানও এসেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে।

এই চালানটি প্রসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, এর আগে এয়ার আরাবিয়ার একটি উড়োজাহাজ আমিরাতের শারজাহ থেকে শাহ আমানতে অবতরণ করে। এই ফ্লাইটেই এই চালান এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিমানবন্দরে বিভিন্ন সংস্থার তদারকি দেখে ভয়ে ব্যাগ থেকে বের করে কনভেয়ার বেল্টে রেখে যায় পাচারকারীরা। আর্থিক সচ্ছলতার আশায় লোভে পড়ে অনেকেই দুবাই গিয়ে নিজ পেশা ছেড়ে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু আড়ালেই থাকছে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালান চক্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের ৩০টি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশে স্বর্ণের চালান আসে। এর মধ্যে ৭টি বিদেশী সিন্ডিকেট। দেশের ২৩টি সিন্ডিকেটের মধ্যে ১১টি সরাসরি আর ১২টি মানি এক্সচেঞ্জের আড়ালে। ১১টি দেশী সিন্ডিকেটের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘিরেই রয়েছে সাতটি। বাকি চারটির মধ্যে তিনটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর ও একটি রয়েছে সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর ঘিরে। মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ধরা পড়া স্বর্ণ উদ্ধারের মূল কারণ যতটা না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কৃতিত্ব; তার চেয়েও বেশি সিন্ডিকেট সদস্যদের অন্তর্দ্বন্দ্ব। নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হওয়া, উৎকোচ কমবেশি হওয়া, ভাগবাটোয়ারায় কমবেশি হওয়া, সমঝোতার অভাব, তৃতীয় মাধ্যম হয়ে স্বর্ণ চোরাচালানের তথ্য ফাঁস হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতি মাসে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ৫০ থেকে ৬০ কেজি স্বর্ণ আটক করা সম্ভব হলেও বিশাল অংশ থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের অধিকাংশই স্বর্ণ চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতে এই সিন্ডিকেট কয়েকটি ভাগে কাজ করে। দেশে আসার সময় প্রবাসীরা ক্যারিয়ার গ্রুপ হিসেবে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে স্বর্ণ বহন করে। অথবা সিন্ডিকেট প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার তুলনামূলক বেশি দামে কিনে নিয়ে ওই দেশেই স্বর্ণের দেনা পরিশোধ করে এবং বাড়তি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণ নিয়ে দেশে ফিরতে উৎসাহিত করছে। বর্তমানে স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের প্রধান টার্গেট আরব আমিরাত থেকে আসা যাত্রীরা। এ কাজে উৎসাহিত করতে নানা প্রলোভন দেওয়া হয়। কখনো বিমান টিকিট, কখনো কমিশন, আবার কখনো বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্যের চেয়ে বাড়তি টাকা দেওয়া হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত। এ কারণে হোতাদের চেয়ে স্বর্ণ বহনকারীরাই আটক হচ্ছে বেশি। স্বর্ণ কার কাছ থেকে এসেছে, কোথায় যাবে বা কার কাছে যাবে, এসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানে না বাহকরা। ফলে তাদের আটকের পর কারা চোরাচালানের পেছনে রয়েছে তা শনাক্ত করা বেশ কঠিন। অনেক ক্ষেত্রেই তা খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আল আমিন প্রধান এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যথেষ্ট সতর্ক আছি। আমাদের নিরাপত্তা বলয় বাড়ানোর কারণেই চালানগুলি আমরা ধরতে সক্ষম হচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক সপ্তাহ পর চালু হলো কাফকো
পরবর্তী নিবন্ধশাহ আমানতে সিগারেটের প্যাকেটে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার স্বর্ণ