বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকার পদত্যাগের এক দফা কর্মসূচি ঘিরে নগরীর প্রধান সড়কগুলো ছিল থমথমে। সেগুলোতে থেমে থেমে মিছিল হতে দেখা গেছে। তবে অলি–গলিগুলোতে স্থানীয় মানুষের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। যেখানে সবার নজর ছিল মূল সড়কের দিকে। সড়কে দেখা মেলেনি তেমন কোনো যানবাহনের। দু–একটি ছাড়া নিত্যপণ্যের দোকান থেকে শুরু করে খাবার হোটেলসহ সব রকম দোকানপাটও বন্ধ ছিল। খেটে খাওয়া মানুষ, রোগী, রোগীর স্বজন বা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কাজের সাথের যুক্ত সাধারণ নাগরিকরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বেশি। অফিস–আদালতের কার্যক্রমেও ছিল একরকম অচলাবস্থা। গতকাল নগরীর কোর্টহিলসহ নানা জায়গা ঘুরে এ চিত্রের দেখা মিলেছে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে’, বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচির প্রথম দিন ছিল গতকাল। দুপুর থেকে রাত অবদি নগরীর নিউমার্কেট, জুবিলি রোড, কাজির দেউড়ি, ওয়াসা মোড়, পল্টন এলাকা, বহদ্দারহাট, লালদীঘিসহ নানা জায়গায় দ্বিমুখী, এমনকি ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অনেকে। এরমধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙকাজনক বলেও জানা গেছে। আন্দোলনকারীর পাশাপাশি সরকার দলীয় যুবলীগ–ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও আহতের তালিকায় রয়েছেন। গতকাল দুপুরে নগরীর কোর্টহিলের পাদদেশ ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও এর জের কোর্টহিল, এমনকি লালদীঘি পাড় পর্যন্ত সংঘর্ষ বিস্তৃত ছিল। আন্দোলনকারীরা কোর্টহিলের অভ্যন্তরের দোয়েল ভবন পর্যন্ত ঢুকে পড়ে। এসময় দু–পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেকে আহত হয়েছেন। আহতের মধ্যে আন্দোলকারীদের লোকও ছিল। পাশাপাশি আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরাও আহত হয়েছেন। সাতজন আইনজীবী আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা এএইচএম জিয়াউদ্দিন। এসব ঘটনার সময় পুরো নিউমার্কেট এলাকা, কোতোয়ালী এলাকা, কোর্ট হিলের পাদদেশ, লালদীঘি, টেরীবাজার, আন্দরকিল্লা মোড়সহ আশেপাশের দোকানপাট বন্ধ ছিল। দু–একটি যানবাহন রাস্তায় থাকলেও চালকরা গন্তব্যে যেতে অস্বীকৃতি জানান। চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত এক নারী আইনজীবী আজাদীকে বলেন, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার কারণে তিনি চেম্বারেই বসে ছিলেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তিনি বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজছিলেন। কিন্তু পাচ্ছিলেন না। পরে একটি সিএনজিকে অনুরোধ করলে তিনি গন্তব্যে যেতে রাজি হন। ওই আইনজীবী বলেন, বাসায় বসে বসে মা দুশ্চিন্তা করছিলেন। দ্রুত বাসায় ফিরতে বলছিলেন। কাজির দেউড়ির বেটারি গলির এক বাসিন্দা আজাদীকে বলেন, প্রয়োজনীয় জিনিপত্র কেনার জন্য বাসা থেকে তিনি দু–একবার বের হয়েছেন। কিন্তু সবকটি দোকানপাট বন্ধ থাকায় তিনি খালি হাতে বাসায় ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, বাসার সবার মধ্যে আতংক কাজ করছে। চারিদিকের এ থমথমে পরিস্থিতি আমাদের ঘরে বন্দি করে রাখছে। স্বাভাবিকতা ফিরে আসুক সেই প্রত্যাশা আমাদের। নগরীর বহদ্দারহাট মোড় সকাল থেকে শান্ত থাকলেও সন্ধ্যায় সেখানে গণ্ডগোল সৃষ্টি হয়। চারিদিকে তখন থমথমে পরিস্থিতিতি দেখা গেছে। সব দোকানপাট বন্ধ ছিল। লোকজনও তেমন ছিল না। যানবাহনেরও একই অবস্থা। দু–একটি ছাড়া তেমন কোন যানবাহন দেখা যায়নি বহদ্দারহাট থেকে চকবাজারমুখী রাস্তায়।