ত্রাণ বিতরণ তৎপরতায় যথাযথ সমন্বয় দরকার

| রবিবার , ২৫ আগস্ট, ২০২৪ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

আকস্মিক বন্যায় চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, মৌলভীবাজারসহ দেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের অন্তত ১০ জেলার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জেলাগুলোর বেশিরভাগ এলাকায় ঘরবাড়ি বা উঠানআঙিনা পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট ভেঙে বা পানিতে তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ফোনের নেটওয়ার্কসহ প্রায় সব ধরনের ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এমন চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝে পানিবন্দি হয়ে আটকা পড়েছেন নারী, শিশুসহ কয়েক লাখ মানুষ। যে বন্যা পরিস্থিতি দেখা গেল, তা যেমন ভয়াবহ, তেমনি নজিরবিহীন। এ অবস্থায় অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট। ফলে দিশাহারা বানভাসি মানুষরা তাদের উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তার জন্য বারবার আকুতি জানাচ্ছে।

বন্যাকবলিত এলাকায় সহযোগিতার জন্য ত্রাণ সংগ্রহের কাজ চলছে বিভিন্ন সংগঠন ও ফোরামের উদ্যোগে। শিক্ষার্থী, বিভিন্ন পেশাজীবী, সাধারণ মানুষ; ধর্মীয়রাজনৈতিকসামাজিক সংগঠন দলে দলে দুর্গত মানুষকে সহায়তা করছেন। দেখা যাচ্ছে, একটা বড় মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁরা এগিয়ে এসেছেন বন্যার্তদের সহযোগিতায়। উদ্ধার তৎপরতার সঙ্গে ত্রাণ বিতরণে কাজ করছেন। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ যেভাবে স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ফেনীর দিকে ছুটেছেন, তা সত্যই অভাবনীয়। এই সকল দৃশ্য দেখে বারবার বলতে ইচ্ছে করে, শত দুর্যোগদুর্বিপাকেও এ দেশের মানুষ প্রকৃতই হতোদ্যম হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ সর্বদাই দুর্যোগপ্রবণ। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ প্রায় অসম্ভব। তবে উপযুক্ত পূর্বপ্রস্তুতি এবং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে যে কোনো দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। এই বিশ্বাস আছে বলেই দেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে। দুর্যোগকালে সকল মতপথের মানুষের মধ্যে সৃষ্ট জাতীয় ঐক্যই যে এ ক্ষেত্রে প্রধান শক্তিরূপে কাজ করে, তা বলা বাহুল্য। তবে আশার বিষয়, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীসহ দেশের অন্য সকল দেশরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী উদ্ধার কার্যক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দেশের অন্যান্য অংশ থেকে বিশেষত তরুণ সমাজও দুর্গত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খাবার যাচ্ছে প্রচুর, কিন্তু পরিকল্পনার অভাব। খাবারের সঙ্গে এত সংখ্যক উৎসুক মানুষ যে একধরনের বিশৃঙ্খলার শঙ্কা আছে, এটা সংশ্লিষ্টদের বন্ধ করতে হবে। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, কোথাও কারো সঙ্গে সমন্বয় নেই।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখন যে সময়, উদ্ধার এবং আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষকে আনাটাই জরুরি। কারোর ঢাকাচট্টগ্রাম থেকে যাওয়ার দরকার নেইএই বার্তাটা আমাদের দিতে হবে। সবাই নিজ হাতে ত্রাণ দিতে চাইলে কীভাবে হবে। তাঁরা মনে করেন, এই মুহূর্তে সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কে কাজটা করবে সেটা নির্ধারিত থাকতে হবে। ইউনিয়ন কাঠামোর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে। তরুণদের সম্পৃক্ত করে সেই কাঠামোকে কাজে লাগাতে হবে। না হলে এত বড় দুর্যোগ মোকাবিলা করা কঠিন হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সমন্বয় ও স্বচ্ছতা রেখে ত্রাণ বিতরণ করতে হবে। এক ব্যক্তি যেন একাধিকবার না পায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ত্রাণ বন্টন তালিকা করা জরুরি। তাঁরা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা, উপজেলা এবং প্রত্যেক ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যন্ত নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ত্রাণ সহায়তা কমিটি গঠন করা দরকার। কেননা জনপ্রতিনিধি ও দায়িত্বশীলদের নিয়ে একসাথে ত্রাণ বন্টন করতে হবে। উল্লেখ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট মাঠ প্রশাসনের প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণকার্যের জন্য নগদ বরাদ্দ, চাল ও শুষ্ক খাবার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি ত্রাণ সহায়তা যে পর্যাপ্ত নয়, তাও ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সংবাদে উঠে এসেছে। এ অবস্থায় বড় ভরসা হলো নানা সংগঠনের সহায়তা। তাঁরা স্বেচ্ছাসেবীরূপে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ সকল ত্রাণ বিতরণ কর্মে যথাযথ সমন্বয় না থাকলে মানুষের দুর্গতি কমবে না, বরং বৃদ্ধি পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে