তৈরি পোশাকে মেইড ইন বাংলাদেশের নতুন গন্তব্য

অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ছে পুরো সেক্টরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে, আশা সংশ্লিষ্টদের

হাসান আকবর | বুধবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির নতুন বাজার তৈরি হচ্ছে। অপ্রচলিত এসব বাজারে প্রবৃদ্ধিও চমকে দেওয়ার মতো। ‘মেইড ইন বাংলাদেশের’ নতুন নতুন গন্তব্য তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি করেছে। বিষয়টি ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন বাজার সৃষ্টির চেষ্টা পুরো সেক্টরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রে জানা যায়, আশির দশকে শুরু হওয়া বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছে। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নানা দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের প্রধান গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশ রয়েছে। এসব দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত সিংহভাগ তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। উপরোক্ত দেশগুলোই মূলত তৈরি পোশাকের বাজার। শুরু থেকে এসব দেশে বাংলাদেশ গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করে আসছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্যে উল্লেখ করা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমলেও সার্বিকভাবে বেড়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল ১৪.৯৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত উপরোক্ত ২৭ দেশে রপ্তানি হয়েছে ১৫.৮৬ ডলার। প্রবৃদ্ধি ৫.৯৬ শতাংশ।

বাংলাদেশের বড় বাজার আমেরিকায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের একই সময়কালে রপ্তানি হয়েছে ৫ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি কমেছে ৮.০৮ শতাংশ। ইংল্যান্ডে গত বছরের আট মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.৬০ শতাংশ। কানাডায় ২০২২ সালের প্রথম ৮ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৯৫০ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের ৮ মাসে রপ্তানি হয়েছে ১.০১ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি ৬.৭৯ শতাংশ।

উপরোক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রচলিত বাজার। এখানে বছরের পর বছর ধরে পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। উক্ত বাজারগুলোর বাইরে বাংলাদেশের নতুন কিছু বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোকে অপ্রচলিত বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত, কোরিয়া, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মেক্সিকো, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, চিলি, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশ রয়েছে। এসব দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, নতুন বাজারগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের সুনাম রয়েছে। তৈরি হচ্ছে ইমেজ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ চীনেও তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। সূত্রগুলো বলছে, এটি শুভ লক্ষণ।

অপ্রচলিত এসব দেশে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে মোট তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে যা ৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮.৩১ শতাংশ। এটা বড় ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা।

শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, নতুন বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্বের নানা দেশে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের কদরও বাড়ছে। এমন এমন দেশে আমাদের পোশাক রপ্তানি হচ্ছে, যা আগে কখনো হয়নি। নতুন নতুন গন্তব্যে আমাদের যেতে হবে। বাজার আরো বাড়াতে হবে। যেসব বাজার তৈরি হয়েছে সেগুলো ধরে রাখতে হবে। প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত বাজারগুলোর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারলে আমাদের ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ হবে।

তিনি বলেন, অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের পণ্য রপ্তানি অনেক বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় জাপানে প্রবৃদ্ধি ৪৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ায় ৫৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এই ধারা ধরে রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং চিলিতে আমাদের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় কমেছে। এখানে সমস্যা কোথায় তাও চিহ্নিত করতে হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান এই খাতে প্রবৃদ্ধি যাতে কোনোভাবে নেগেটিভ না হয় সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

তৈরি পোশাক খাতে নতুন বাজার সৃষ্টি পুরো সেক্টরের জন্য সুখবর মন্তব্য করে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির চেষ্টা করছি। আমাদের দূতাবাসগুলো এক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। সরকার নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য আমাদেরকে প্রচুর সহায়তা করছে। ইনসেনটিভ দিচ্ছে। সরকারিবেসরকারি যৌথ উদ্যোগে আমাদেরকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমণ্ডপে ফ্যান চালাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, তরুণের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধআনন্দ মুহূর্তেই রূপ নিল বিষাদে