বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির নতুন বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। এমন সংবাদ সত্যিই আনন্দদায়ক। গত ২০ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এই সংবাদে বলা হয়েছে, ‘মেইড ইন বাংলাদেশের’ নতুন নতুন গন্তব্য তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি করেছে। বিষয়টি ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন বাজার সৃষ্টির চেষ্টা পুরো সেক্টরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রে জানা যায়, আশির দশকে শুরু হওয়া বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছে। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নানা দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের প্রধান গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশ রয়েছে। এসব দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত সিংহভাগ তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। উপরোক্ত দেশগুলোই মূলত তৈরি পোশাকের বাজার। শুরু থেকে এসব দেশে বাংলাদেশ গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করে আসছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সামপ্রতিক প্রকাশিত তথ্যে উল্লেখ করা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমলেও সার্বিকভাবে বেড়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল ১৪.৯৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত উপরোক্ত ২৭ দেশে রপ্তানি হয়েছে ১৫.৮৬ ডলার। প্রবৃদ্ধি ৫.৯৬ শতাংশ।
আসলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের আধিপত্য বাড়ছে। ২০২২ সালে তৈরি পোশাক মার্কেটের ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে ছিল, আগের বছর যা ছিল ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এই সময়ে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। সমপ্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ৫৭৬ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক বিক্রি হয়েছে। বরাবরের মতো এই বিশাল মার্কেটের সিংহভাগ চীনের দখলে। আলোচ্য সময়ে চীন ১৮২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা মোট বাজারের ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অবশ্য ২০২১ সালের তুলনায় চীনের মার্কেট শেয়ার কমেছে।
অন্যদিকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের মার্কেট শেয়ার ছিল ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ, ২০২১ সালে ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর্থিক বিবেচনায় ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম। ভিয়েতনামের মার্কেট শেয়ার ৬ দশমিক ১২ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শীর্ষ ৮ পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলো হচ্ছে– চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চতুর্থ স্থানে থাকা তুরস্ক ২০ বিলিয়ন ডলার, ভারত ১৭ বিলিয়ন ডলার, ইন্দোনেশিয়া ১০ বিলিয়ন ডলার, কম্বোডিয়া ৯ বিলিয়ন ডলার এবং আমেরিকা ৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আরো জানা যায়, নতুন বাজারের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অস্ট্রেলিয়ায় ১১৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই বাজারে গত ২০২১–২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৮১ কোটি ডলারের পোশাক। সেই হিসেবে গত অর্থবছরে অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ৪২ শতাংশ। ২০২০–২১ অর্থবছরে এই বাজারে রপ্তানি হয়েছিল ৭৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১০১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪১ শতাংশ। দুই বছরের ব্যবধানে এই বাজারে রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। গত ২০২০–২১ অর্থবছরে এই বাজারে রপ্তানি ছিল ৪২ কোটি ডলার। পরের বছর তা বেড়ে ৭২ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।
নতুন বাজারের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, নতুন বাজারগুলোর মধ্যে একেক গন্তব্যের ভোক্তাদের চাহিদা একেক রকম, কমপ্লায়েন্স কিংবা শুল্ক কাঠামোও ভিন্ন। ফলে বাজারগুলোর সম্ভাবনা কাজ লাগাতে আলাদাভাবে পরিচর্যা করতে হবে। সেখানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রদর্শনী করা যায়। আবার বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড বা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণও জানানো দরকার। সেসব দেশের বিনিয়োগকারীদেরও বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো যেতে পারে। তাঁরা বলেন, নতুন বাজারে বেশ কিছু দেশে শত কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি সম্ভব।