সড়ক জুড়ে যেন অঘোষিত হরতাল ডেকেছে কেউ। ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে চট্টগ্রামের ফিলিং স্টেশনে গত দুদিন ধরে গ্যাস বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এতে সড়কে গ্যাসচালিত যানবাহনের সংখ্যা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। যাত্রীর তুলনায় গাড়ি চলাচল কম হওয়ায় প্রয়োজনে গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। স্থান বিশেষে গাড়ি পাওয়া গেলেও গুণতে হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া। জরুরি কাজে বের হওয়া যাত্রীরা কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
কিছু কিছু সিএনজি টেক্সি আগের দিনের নেয়া গ্যাস থাকায় শনিবার চালাতে পারলেও রোববার সারাদিন কোনও গাড়ি চলেনি। যেগুলো চলেছে ওসব তেল দ্বারা চালিত। তাই বেশি ভাড়া দিয়ে তারা যাত্রী পরিবহন করেছে। সরেজমিনে গতকাল সকালে ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে নেই কোনও গ্যাস চালিত যানবাহন। তবে তেল চালিত যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে; কিন্তু হাতেগোণা। এসবের চালকেরা ভাড়া দাবি করছেন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে সকাল ১০টার দিকে যানবাহনের অভাবে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসমুখী যাত্রীরা। তবে ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে রাস্তায় স্বাভাবিকের চেয়ে পথচারী ও যাত্রী কিছুটা কম ছিল।
গতকাল দুপুর গড়াতেই দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে মানুষ। কেউ যাবেন বাসায়, আবার কেউবা যাবেন প্রয়োজনীয় কাজে। কিন্তু গাড়ির দেখা নাই। অনেকক্ষণ পর পর একটি দুটি সিএনজি টেঙি এলেও প্রতিটিতেই ছিল যাত্রী।
গ্যাস সংকটের কারণে শুধু যাত্রীরাই নন, বিপাকে পড়েছেন চালকরাও। কারণ অধিকাংশ সিএনজি টেঙিতেই নেই তেলের সংযোগ। ফলে গাড়ি বের হয়নি। দুদিন ধরে গাড়ি বন্ধ থাকায় উপার্জন বন্ধ রয়েছে চালকদের। এভাবে আরও কয়েকদিন চললে না খেয়ে থাকতে হবে বলে মন্তব্য মো. পরান মিয়া নামের এক চালকের। গ্যাস সংকটের কারণে চট্টগ্রামের সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনেককে গাড়িতে গ্যাস নিতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে।
নগরীর বাকলিয়া এলাকার বাস চালক খোরশেদ আলম বলেন, শনিবার রাতেও গ্যাস পাইনি। রোববার সকালে স্টেশনে গেলাম, গ্যাস পাইনি। তেল দিয়ে গাড়ি চালালে আমাদের পোষায় না।
এদিকে আমাদের রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের প্রধান ভরসা সিএনজি টেঙি। রাঙ্গুনিয়ার কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন মোহাম্মদপুর এলাকার বিসমিল্লাহ আলমাস সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, গাড়িতে গ্যাস বিক্রি বন্ধ রয়েছে। ফলে গ্যাসচালিত যানবাহনের দীর্ঘ লাইনের চিরাচরিত চিত্র নেই। কিছু সিএনজি টেঙি এসে ফিরে যাচ্ছে। আবার কিছু সিএনজি টেঙি ও অন্যান্য যানবাহনকে তেল নিতে দেখা গেছে। ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাওলানা আব্দুল আলিম বলেন, দুর্যোগের কারণে গত শনিবার ভোর ৬টা থেকেই লাইনের গ্যাস বন্ধ রয়েছে। আমাদেরকে তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় গ্যাস দেবেন। তাই গত দুদিন ধরে গ্যাস বিক্রি একেবারে বন্ধ রয়েছে।
রোয়াজারহাট সিএনজি অটোরিকশা সমিতির সভাপতি নুরুল আজিম মনু বলেন, কাপ্তাই সড়কসহ আশেপাশের সড়কের সব সিএনজি টেঙি গ্যাস চালিত।
মো. মিজান নামে রোয়াজারহাটের এক ব্যবসায়ী বলেন, সড়কের জুটমিল গেট থেকে রোয়াজারহাটের ভাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় মাথাপিছু ১৫ টাকা। কিন্তু রোববার লোকাল কোনও গাড়ি পাওয়া যায়নি। রোয়াজারহাট যেতে বাধ্য হয়ে রিজার্ভ যেতে হয়েছে। এতে ভাড়া লেগেছে ১৫০ টাকা।
মো. সেলিম নামে মরিয়মনগর চৌমুহনী এলাকার এক যাত্রী বলেন, জরুরি কাজে লিচুবাগান যাওয়ার জন্য বের হয়েছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গ্যাসচালিত কোনও যানবাহন পাননি। পরে ব্যাটারি রিঙা দিয়ে যেতে হয়েছে। এতে ১৫ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা লেগেছে।
আমাদের হাটহাজারী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল রোববার হাটহাজারী – নাজিরহাট – খাগড়াছড়ি, হাটহাজারী – রাউজান – রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম – কাপ্তাই মহাসড়কে গাড়ি চলাচল ছিল একেবারে সীমিত। ফিলিং স্টেশনে জ্বালানি না পাওয়ায় গাড়ির সংখ্যা ছিল কম। তাই ব্যাটারি চালিত রিকশার দাপট ছিল লক্ষ্যণীয়। হাটহাজারী – রাউজান সড়কের ইছাপুর বাজার থেকে হাটহাজারীর নির্ধারিত ভাড়া ১০ টাকা হলেও গতকাল গাড়ি সংকটের কারণে জনপ্রতি ২৫–৩০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নোমান নামে এক যাত্রী। এদিকে লোকমান মেম্বার নামে এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, হাটহাজারী – নাজিরহাট মহাসড়কের কাটিরহাট বাজার থেকে হাটহাজারীর নির্ধারিত ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা হলেও গতকাল আদায় করা হয়েছে ৫০/৬০ টাকা।