চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিহাসে যা ঘটেনি তা–ই প্রত্যক্ষ করছেন আইনজীবীরা। সমিতি থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন করার পর সেটি বাতিল করার মতো ঘটনা ঘটেছে। পরে দ্বিতীয়বার গঠন করা হয় নির্বাচন কমিশন। এখানে শেষ হতে পারত, কিন্তু হয়নি। নতুন করে তৃতীয়বারের মতো পুনর্গঠন করতে হয়েছে কমিশন। সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর জেলা আইনজীবী সমিতি ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করে। এতে আইনজীবী এ কে এম মকবুল কাদের চৌধুরীকে মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা করা হয়। আইনজীবী মুজিবুর রহমান খান, কাজী মুহাম্মদ নাজমুল হক, মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও মুহাম্মদ কবির হোসাইনকে নির্বাচনী কর্মকর্তা করা হয়। এদের মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা এ কে এম মকবুল কাদের চৌধুরী ও নির্বাচনী কর্মকর্তা মুহাম্মদ কবির হোসাইন সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারি বরাবর পদত্যাগপত্র দাখিল করেন। পদত্যাগপত্রে মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, গঠিত নির্বাচন কমিশনে বিগত অগণতান্ত্রিক সরকারের সমর্থকদের অন্তর্ভুক্তি থাকায় বিবেকের তাড়নায় দায়িত্ব পালন করতে অক্ষমতা প্রকাশ করছি।
নির্বাচনী কর্মকর্তা মুহাম্মদ কবির হোসাইন উল্লেখ করেন, যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিরোধিতা করেছে তাদের সাথে একত্রে কোনো কর্মকাণ্ডে শরিক হওয়া এবং তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে বৈধতা দেওয়ার মতো কাজে ব্যক্তিগতভাবে আমি শরিক হতে আগ্রহী না।
সমিতি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন থেকে মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ এ দুজনের পদত্যাগের ঘটনা নতুন। এর ফলে বারের সাবেক সভাপতি ও সেক্রেটারির সাথে বৈঠকে বসে বর্তমান কার্যকরী কমিটি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য বলা হয়। কিন্তু পদত্যাগকারীরা তা করেননি। বারের গঠনতন্ত্রে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বিধান না থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে ৯ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এতে আইনজীবী মুহাম্মদ এনামুল হককে মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা করা হয়। আইনজীবী উত্তম কুমার দত্ত, তারিক আহমদ, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ আলীকে নির্বাচনী কর্মকর্তা করা হয়।
নতুন করে গঠিত এ নির্বাচন কমিশন নিয়েও সংশয় ছিল। দ্বিতীয়বার গঠিত নির্বাচন কমিশন থেকেও গত রোববার পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। এবার মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তাসহ তিনজনের পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তারা পদত্যাগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সমিতিতে বৈঠক হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ও বার কাউন্সিলকেও পরিস্থিতি বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
সর্বশেষ গতকাল সমিতির কার্যকরী কমিটির মিটিং হয়। মিটিংয়ে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। তবে এবার কমিশনকে পুনর্গঠন করা হয়েছে বলে জানান জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার গঠন করা নির্বাচন কমিশন থেকে যে তিনজন পদত্যাগ করেছেন তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হয়েছে।
সমিতি জানায়, সর্বশেষ পুনর্গঠন করা নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা করা হয়েছে আইনজীবী মোহাম্মদ সোলায়মানকে। নির্বাচনী কর্মকর্তা করা হয়েছে সামশ্রী বড়ুয়া ও মো. নুরুদ্দিন আরিফ চৌধুরীকে। আগে থেকে ছিলেন উত্তম কুমার চৌধুরী ও তারিক আহমদ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বারের (জেলা আইনজীবী সমিতি) ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। কেউ কেউ বলছেন, স্বাধীনতার পর এমন ঘটনা আর ঘটেনি। এর আগে ঘটেছে কিনা সে বিষয়ে রেকর্ড নেই। আবার কেউ কেউ বলছেন, প্রায় ১৩২ বছরের পুরনো জেলা আইনজীবী সমিতিতে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি আর কখনো দেখা যায়নি।